কালারমারছড়া সন্ত্রাসীদের গুলিতে লবণচাষি নিহত


এলাকাজুড়ে আতঙ্ক
মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া সন্ত্রাসীদের গুলিতে এক লবণচাষি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার পর থেকে পুরো এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। ২০ মার্চ দুপুরে কালারমারছড়া ইউনিয়নের চিকনিপাড়ার পশ্চিমে পদ্মবর চঁড়া এলাকায় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
নিহত লবণচাষির নাম মোহাম্মদ শফি আলম। তিনি ওই এলাকার বাসিন্দা। মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মানবেন্দ্র সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মহেশখালীর কালারমারছড়া এলাকায় একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে তৎপর রয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই এলাকায় কোস্টগার্ড সদস্যরা অভিযান পরিচালনা করছিলেন। এ সময় কোস্টগার্ডের ধাওয়া খেয়ে সন্ত্রাসীরা পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পালানোর সময় তারা সন্দেহজনকভাবে লবণচাষি শফিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
স্থানীয়দের দাবি, শফি কোনোভাবেই সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তিনি একজন নিরীহ লবণচাষি ছিলেন এবং পারিবারিক জীবনে সৎভাবে জীবনযাপন করছিলেন। তাদের ধারণা, পূর্ব শত্রুতার জেরে সন্ত্রাসীরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
নিহতের ভাই মুহাম্মদ রাসেল বলেন, আমি আর আমার ভাই শফি লবণের মাঠে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি কোস্টগার্ড সদস্যরা কালারমারছড়ার একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে ধাওয়া করছে। আমরা তখন নিরাপদে থাকার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু আমার ভাই পদ্মবর চঁড়ায় পৌঁছাতেই একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী তাকে টার্গেট করে গুলি ছোড়ে। কোনো কারণ ছাড়াই আমার ভাইকে হত্যা করা হলো। আমি আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
নিহতের বড় বোন ছেনোয়ারা বেগম বলেন, আমার ভাই কোনো অপরাধী ছিল না। সে দিনরাত পরিশ্রম করে আমাদের সংসার চালাতো। অথচ কিছু সন্ত্রাসী আমাদের সহায়-সম্পত্তি লুটে নেওয়ার জন্য তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করল। আমি প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন জানাই, আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের যেন দ্রুত গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হয়।
শফি হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই পুরো এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
প্রতিবেশী মুহাম্মদ হামিদ বলেন, শফি খুবই সহজ-সরল একজন লবণচাষি ছিল। তার কোনো শত্রু ছিল না। অথচ সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করল। এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। প্রশাসনকে দ্রুত অপরাধীদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয় এক লবণ চাষি বলেন, মহেশখালীর অনেক জায়গায় সন্ত্রাসীরা আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছে। লবণ চাষিরা মাঠে যেতে ভয় পাচ্ছে।
এ ঘটনায় মহেশখালী সার্কেলের এএসপি মানবেন্দ্র সরকার বলেন, ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সন্ত্রাসীদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে যারা এলাকায় অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে চায়, তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শফি হত্যার ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।