কাশ্মীরের এক পরিবারকে বহিষ্কার থেকে রেহাই দিল ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট


ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের কড়াকড়ি বেড়েছে। এর মধ্যেই কাশ্মীরের শ্রীনগরে বাস করা এক পরিবারকে বহিষ্কারের সরকারি আদেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
আধার কার্ড, ভোটার কার্ড এবং প্যান কার্ড থাকার পরও বেআইনিভাবে ভারত থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের দারস্থ হয়েছিল পরিবারটি।
ওই পরিবারের একজন বেঙ্গালুরুতে অ্যাকসেন্টারে কাজ করেন। নাম আহমেদ তারিক বাট। সুপ্রিম কোর্ট আপাতত তারিক ও তার ছয় সদস্যর পরিবারকে পাকিস্তানে বিতাড়িত হওয়া থেকে রেহাই দিয়েছে।
ভারতের কেন্দ্র সরকারকে পরিবারটির নথিপত্র যাচাই করে দেখার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার আদালতের বিচারপতি সূর্য কান্তের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বলেছে, নথিপত্র যাচাই না হওয়া পর্যন্ত পরিবারটির বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না।
তবে এ নির্দেশকে কোনও নজির হিসাবে দেখা উচিত হবে না বলেও জানিয়েছে আদালত। সুপ্রিম কোর্ট জানায়, মামলায় যে সব তথ্য উঠে এসেছে তার ভিত্তিতেই ওই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পেহেলগামে হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছে। এ অবস্থায় পাকিস্তানিদের প্রায় সব ধরনের ভিসা বাতিল করে দিয়েছে ভারত।
সব পাকিস্তানি নাগরিককে ২৭ এপ্রিলের মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। চিকিৎসা ভিসার ক্ষেত্রে বাড়তি দু’দিন ছাড় দেওয়া হয়। সেই সময়সীমাও ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে।
এ পরিস্থিতিতেই আহমেদ তারিক এবং শ্রীনগরে বাস করা তার পরিবারের সদস্যরা সুপ্রিম কোর্টে যায়। পরিবারটির দাবি, তারা ভারতীয় নাগরিক। ভারতীয় সব নথি থাকার পরও তাদেরকে ভারত থেকে পাকিস্তানে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে আদালতে অভিযোগ জানায় তারা।
বিচারপতি এনকে সিংহের বেঞ্চ সরকারকে জানিয়েছে, পরিবারটিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে যেন পাকিস্তানে তাড়ানো না হয়।
সরকার পক্ষকে এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতির বেঞ্চ। তথ্য যাচাইয়ের পরে সরকার তাদেরকে বিতাড়নের সিদ্ধান্ত নিলে পরিবারটি জম্মু ও কাশ্মীর হাই কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারবে বলে জানিয়েছে আদালত।
ভারতীয় নাগরিকদের নিয়ে বেশ কিছু রিপোর্ট সম্বলিত গুরুত্বপূর্ণ এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিল হওয়ার পর মুসলিম নাম থাকা বহু মানুষকেই ভারত ছাড়তে বলা হচ্ছে।
সুপ্রিম কোর্টে শুক্রবার মামলার শুনানিতে বিচারপতি জানতে চান, পাকিস্তানের মিরপুরে জন্মগ্রহণ করা আহমেদ তারিক বাট কীভাবে ভারতে এসেছিলেন?
জবাবে তারিক বলেন, ১৯৯৭ সালে তিনি তার বাবার সঙ্গে পাকিস্তান থেকে ভারতে যান। শ্রীনগরে পৌঁছে তিনি জম্মু ও কাশ্মীর হাই কোর্টে পাকিস্তানি পাসপোর্ট জমা দেন এবং তারপর আবেদন করে ভারতীয় পাসপোর্ট পান।
পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ২০০০ সালে ভারতে গিয়েছিল। তারাও একইভাবে ভারতীয় পাসপোর্ট পায়। তারিক জানান, তিনি ও তার ভাইবোনরা শ্রীনগরের একটি বেসরকারি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন।
তারিকের অভিযোগ, এসবকিছুর পরও সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের সবার নামে ভারত ছাড়ার নোটিস জারি করেছে। সেই নোটিসে মিথ্যা দাবি করে বলা হয়েছে, তারা ভিসা নিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছেন এবং বেশি দিন অবস্থান করেছেন।