parbattanews

কুকিছড়া বিহারে বৌদ্ধ মূর্তির পুননির্মাণ কাজ শুরু


গুইমারা প্রতিনিধি:

বৌদ্ধ ধর্মীয় রীতিনীতি পালন ও মন্ত্র পাঠের মধ্য দিয়ে কুকিছড়া জেতবন বৌদ্ধ বিহার ও বৌদ্ধ মূর্তির পুননির্মাণ কাজ অতিথিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয়েছে।

শনিবার( ২৭ অক্টোবার) সকাল ১১টার দিকে গুইমারা উপজেলার হাফছড়ি ইউনিয়নের দুর্গম কুকিছড়ায় বৌদ্ধমুর্তি পুননির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন মাটিরাঙ্গা জোন অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. নওরোজ নিকোশিয়ার ও গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পঙ্কজ বড়ুয়া।

এসময় পাড়াবাসিরা নিজেদের বাড়ি থেকে নগদ টাকা পয়সা ও সোনা রুপা এনে বৌদ্ধের জীবন্ত জীবন ফিরে আসার জন্য উৎস্বর্গ করতে দেখা যায়।

এসময় গুইমারা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. গিয়াসুদ্দিন, হাফছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান চাইথোয়াই স্থানীয় প্রতিনিধি পাড়া কার্বারী ও বিহারের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও বৌদ্ধ ধর্মীয় জেষ্ঠ্য ভান্তে কুকিছড়া বিহারের অধ্যক্ষ ভজন্ত সুধাইমা ভিক্ষু নাইন্দাছড়া ভিক্ষু, আগাছাড়া ভিক্ষু, বরইতলী বিহারেরউইমালা ভিক্ষু, নাক্রাই বিহারের খেমাসারা ভিক্ষু, জমাদার পাড়া ধর্মরক্ষিত বিহারের প্রজ্ঞাসারা ভিক্ষু, বাটনাতলী জেতবন বিহারের ওয়েনা সারা ভিক্ষু, চট্রগ্রাম থেকে জ্যোতিসারা ভিক্ষু দেওয়ান পাড়া মিশন ভিক্ষু সংঘ রত্ন তৈর্কমা আনন্দ বিহারের খেমানেন্দা ভিক্ষু উপস্থিত ছিলেন।

প্রশাসনের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে জ্যোতিসারা ভিক্ষু বলেন, ধর্মবিরোধীরা বৌদ্ধ মূর্তিসহ বিহার ভাঙচুর করেছে। সেনাপ্রশাসনকে নিয়ে যে সব মিথ্যা অপপ্রচার করেছে তা সকলের কাছে মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে।

বৌদ্ধ মুর্তি ভেঙে ফেলার ঘটনায় সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা অপপ্রচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রাথমিক ভাবে তিনি বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে সেনাবাহিনীর নামে এত অপপ্রচার হয়েছে সে সেনাবাহিনী বিহারটি এত নান্দনিক ভাবে গড়ে দিচ্ছে। তিনি আরো বলেন সেনা প্রশাসন যে গড়তে জানে, ভাঙতে জানেনা তা তিনি বুঝেছেন। তাই পাহাড়ে সেনাবাহিনীকে বাদ দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা বা উন্নয়ন কখনো সম্ভব নয়।

গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, নানামুখী অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে বৌদ্ধমূর্তিটির পুননির্মাণ কাজের শুভসুচনা করতে পেরে তিনি আনন্দিত। আগামী ১ মাসের মধ্যে সরকারি অর্থায়নে নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ধর্ম নিয়ে এমন অপরাজনীতি বাদ দিয়ে সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতি ও উন্নয়নের পথে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

স্থানীয় মাইসে মারমা জানান সরকারি অর্থায়নে জেতবন বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধমূর্তি নির্মাণ কাজ নতুন করে আগের চেয়ে উন্নয়ণ হওয়ায় এলাকাবাসি আনন্দিত। এতে সেনাবাহিনীসহ প্রশাসনের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

উপস্থিত মাটিরাঙ্গা জোন অধিনায়ক লে. কর্ণেল নওরোজ নিকোশিয়ার বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে সেনাবাহিনী বহু বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ করে দিয়েছে এবং তার সুরক্ষায় সর্বাত্মকভাবে নিজেদেরকে আত্মনিয়োগ করেছে।
সেনাবাহিনী দেশে-বিদেশে শান্তি রক্ষার পাশাপাশি সকল ধর্মের মানুষের উন্নয়নে সমানভাবে কাজ করছে। নির্ঘুম রাত্রিযাপন, সাপের কামড় আর ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েও মাসের পর মাস মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান, প্রিয়জনদেরকে ছেড়ে দূর্গম পাহাড়ে শান্তি স্থাপনের অন্বেষায় নিজেদেরকে আত্মত্যাগ করেছে ভবিষ্যতেও করে যাবে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য যে, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পুর্ণিমার একদিন আগে গত সোমবার রাতের আঁধারে খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলাধীন হাফছড়ি ইউনিয়নের দুর্গম কুকিছড়া এলাকায় কতিপয় দুস্কৃতিকারীরা জেতবন বৌদ্ধ বিহার ভাঙচুর করে। এসময় বিহারে রাখা ৭ ফুট উচ্চতার বৌদ্ধ মুর্তিটি ভেঙে পাশের খাদে ফেলে দেয়। এ ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে ঘটনার একদিন পর বুধবার সরকারি অর্থায়নে বৌদ্ধ মুর্তি নির্মাণসহ বৌদ্ধ বিহার পুননির্মাণের ঘোষণা দেয় খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন।

Exit mobile version