parbattanews

কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবৈধ বাঁশ প্রক্রিয়ার বিষাক্ত বর্জ্য লোকালয়ে ছড়াচ্ছে

রোহিঙ্গাদের বাঁশপ্রক্রিয়াকরণের বিষাক্ত বর্জ্য স্থানীয় লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালীতে বেশ কিছু আবাদী জমির ঘাস কেমন যেন বিবর্ণ হয়ে মরে যাচ্ছে। গত দুই বছর ধরে বালুখালীর এ বিলে প্রায় ৪/৫ একর জমি অনাবাদী পড়ে রয়েছে রোহিঙ্গাদের বর্জ্যের দূষণে। কুতুপালং এর মধুরছড়া, মাছকারিয়া, কচুবনিয়া এলাকার পাহাড়ি ছড়া ও খাল সংলগ্ন এলাকাতেও একই অবস্থা।

জানা যায়, রোহিঙ্গাদের ব্যবহারের জন্য দেওয়া বাঁশ গুলোর প্রক্রিয়াকরণের বিষাক্ত বর্জ্য খাল ও ছড়া দিয়ে স্থানীয় লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। কুতুপালং মেগা ক্যাম্পের বর্ধিত -৪ নং ক্যাম্পের সড়কের উভয় পাশে এনজিও ব্রাকের পাশাপাশি দুটো বাঁশ প্রক্রিয়া করণ কেন্দ্র। প্রতিদিন এ দুটো কেন্দ্রে হাজার হাজার বাঁশ বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের মাধ্যমে পরিশোধন করে প্রক্রিয়াকরণ করা হয়।

কুতুপালংয়ের যে স্থানে বাঁশ প্রক্রিয়াকরণ করা হচ্ছে সেখানে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর গত দুই বছর ধরে রোহিঙ্গাদের জন্য সারি সারি ঘর নির্মাণ করেছে। এ সব ঘর নির্মাণ বাস্তবায়ন করছে এনজিও ব্র্যাক ও কারিতাস। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তর বা সংশ্লিষ্ট কোন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এনজিও গুলো পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতিকর রাসায়নিক বিষাক্ত বর্জ্য লোকালয়ে ছেড়ে দিচ্ছে।

একই ভাবে কুতুপালং বাজারের দক্ষিণে কচুবনিয়ায় আরও দুটি বাঁশ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র রয়েছে। একেকটি কেন্দ্রে প্রতি মাসে অন্তত ১২ হাজার বাঁশ প্রক্রিয়াকরণ করা হয় বলে ব্রাকের সাইট ম্যানেজমেন্ট বিভাগের দায়িত্বরত প্রকৌশলী সমীর চন্দ্র সমাদ্দার জানান।

দেখা গেছে, রোহিঙ্গাদের জন্য শত শত শেডের হাজার হাজার ঘর বানানোর ঠিকাদারী করছে এনজিও দুটো। খবর নিয়ে জানা গেছে, প্রতি পরিবারের জন্য একটি ঘর নির্মাণ করতে বড় বা বরাক বাঁশ ৫৫ টি ও ছোট বা মুলি বাঁশের প্রয়োজন প্রায় ৩ শ টির মত। গত এক বছর ঐ ক্যাম্পে যে পরিমাণে নতুন ঘর করা হয়েছে এবং প্রতি মৌসুমে যে পরিমাণে ঘর মেরামত ও সংস্কার করা হয় সে অনুযায়ী কয়েক লক্ষ বাঁশের ব্যবহার হয় প্রতি মাসে।

কথিত জরুরি প্রয়োজনে বিভিন্ন স্থানে ব্র্যাকসহ বিভিন্ন দেশী ও বিদেশী এনজিও গুলোর মজুদ রয়েছে আরো কয়েক কোটি পিস নানা ধরণের বাঁশ। এ সব বাঁশ ক্যাম্প গুলোতে ও সংলগ্ন এলাকায় গড়ে তোলা একাধিক প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে পরিশোধন করা হচ্ছে পর্যায়ক্রমে।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, বাঁশ প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহার করা হয় বোরাক্স + বোরিক এসিড, সালফেট + সোডিয়াম+ডাইক্রোমেট+বরিক এসিড। এ সব রাসায়নিক মাত্রা অনুপাতে মিশ্রিত দ্রবণে বাঁশকে ন্যুনতম  এক সপ্তাহ ডুবিয়ে রেখে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। প্রক্রিয়াজাতকৃত বাঁশ পোকা, গুন, কীট পতঙ্গ, ছত্রাক ইত্যাদি থেকে দীর্ঘমেয়াদি রক্ষা করা যায়। বাঁশ প্রক্রিয়াকরণের বিষাক্ত বর্জ্য সংলগ্ন ছড়া ও খালে নির্গত করা হচ্ছে।

স্থানীয় কুতুপালং এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল হক খান জাতিসংঘের একাধিক সংস্থা ও তাদের অর্থায়নে এনজিও গুলো কিছুই মানছে না। পাহাড়, বন, জঙ্গল, জীব বৈচিত্র্য ক্রমাম্বয়ে ধংস করেছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় লোকজন মারাত্মক পরিবেশ ও প্রতিবেশগত ক্ষতির মূখে পড়ছে। এনজিও ব্রাক বাঁশ প্রক্রিয়াকরণের যে ক্ষতিকর বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্য খাল ও ছড়া গুলো দিয়ে লোকালয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে তা দ্রুত বন্ধ করে আইনানুগ ব্যবস্থার দাবি স্থানীয় লোকজনের।

কুতুপালং ব্রাক ম্যানেজার মনিরুজ্জামান এ সব বিষয় দেখার দায়িত্ব তার নয় বলে জানান। ব্রাকের বাঁশ প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্পের সাইট প্রকৌশলী সমীর চন্দ্র সমাদ্দার তাদের এ কাজের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়েছে বলে জানান।

তবে এখনও কোন অনুমোদন পায়নি বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, এতে যে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় তাতে পরিবেশের তেমন ক্ষতি হবে না।

কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মোঃ নুরুল আমিন বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাঁশ প্রক্রিয়াকরণের জন্য কাউকে কোন ধরণের অনুমতি দেওয়া হয়নি। যদি কেউ এ ধরনের করে থাকে তা বেআইনি বলে জানান তিনি।

Exit mobile version