parbattanews

কুতুপালং হিন্দু ক্যাম্পে জাঁকজমক দুর্গোৎসব উদযাপন করছে রোহিঙ্গারা

আশ্রিত জীবনেও মহানন্দে পূজার উদযাপন নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন হিন্দু রোহিঙ্গারা

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং হিন্দু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরকারি সহযোগিতায় জাঁকজমক ভাবে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পূজায় পরিধানের জন্য হিন্দু ১১৩ পরিবারের ৪৭০ জন সদস্যকে নতুন জামা-কাপড় সরবরাহ করেছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা শাখা। পূজা উপলক্ষে দেয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যও। এ কারণে আশ্রিত জীবনেও মহানন্দে পূজার উদযাপন নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন হিন্দু রোহিঙ্গারা।

রোহিঙ্গা সুমতি ধর, ভুলারাম পাল, ঊষারানী দে, বাপ্পী চৌধুরী ও সুমন আচার্য্য বলেন, প্রকাশ্যে মনের মাধুরী মিশিয়ে প্রতিমার সামনে দাঁড়িয়ে অর্চনা করার সুযোগ আশ্রিত জীবনেই পেয়েছি। এ জন্য রোহিঙ্গা হিন্দু কমিউনিটি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অবনত মস্তকে কৃতজ্ঞতা জানায়।

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ কক্সবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক ও হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট্রের ট্রাস্টি অধ্যাপক প্রিয়তোষ শর্মা চন্দন বলেন, জেলার ২৯৬টি মণ্ডপের মতো রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হিন্দু শরণার্থীদের জন্যও একটি পূজার মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। শরণার্থীরা যেন মনের আনন্দে পূজা করতে পারেন এজন্য এখানকার মণ্ডপের জন্য ৫ টন জিআর চাউল বরাদ্দ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। জেলার সকল মণ্ডপের জন্য দেয়া হয়েছে ১৫০ মেট্রিক টন।

শরণার্থী ক্যাম্পের সত্তরোর্ধ বৃদ্ধা ভগ বালা শীল জানান, জীবনে কখনও এধরনের আনন্দ উৎসাহ নিয়ে দূর্গোৎসব পালন করা হয় নি। কারণ মিয়ানমারে সে সুযোগ নেই। তাদের ছেলে মেয়েরা যাদের কিছুটা সামর্থ্য রয়েছে হাতে গুনা কয়েকজন পূজোর সময় বাংলাদেশে এসে দূর্গোৎসব দেখে যেত। তবে গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশের আশ্রয় ক্যাম্পে কল্পনাও করিনি এত ধুমধামের সঙ্গে শারদীয় দুর্গোৎসব করতে পারব। কক্সবাজার থেকে আসা পুরোহিত নিহার কান্তি চক্রবর্তী বলেন, এখানে মহা ধুমধামের সাথে দূর্গোৎসব পালিত হচ্ছে।

কুতুপালং হিন্দু রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মধুরাম পাল বলেন, মিয়ানমারে থাকাকালীন দুর্গাপূজা বা কোনো ধর্মীয় আচারের আনুষ্ঠানিকতা কখনো করা হয়নি। বাস্তুচ্যুত হয়ে পালিয়ে আসার পর বাংলাদেশ সরকার আশ্রয় দিয়েছে। জীবন বাঁচাতে সহযোগিতা দেয়ায় পুরো রোহিঙ্গা কমিউনিটি বাংলাদেশ সরকারের কাছে ঋণী। আমরা হিন্দু রোহিঙ্গারা দ্বিগুণ ঋণী হয়ে থাকলাম। নতুন কাপড়, পূজা-অর্চনার পণ্য সামগ্রী ও বিশাল প্রতিমা বসিয়ে সরকারি সহযোগিতায় জাঁকজমকপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা পালন করানো হচ্ছে।

আশ্রয়ের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক এ বদান্যতা জীবন দিয়েও শোধ করার নয়। কুতুপালং হিন্দু উদ্বাস্তু ক্যাম্পে সব বয়সীদের মাঝে অন্যরকম আনন্দ বিরাজ করছে। শিশু, কিশোরদের মধ্য স্বভাবতই উৎসবের আনন্দ একটু বেশি। তবে একটু বয়স্কদের মাঝে বিষাদ লক্ষ্য করা গেছে সোমবার বিকেলে। কারণ আজ নবমী আর কাল মঙ্গলবার দশমী। অর্থাৎ বিসর্জন, তাই এ নিয়ে বড়দের মনোবেদনা।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, গত বছরের মতো এবারও হিন্দু রোহিঙ্গাদের জন্য সরকারি খরচে পূজা উদযাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্যাম্পের পূজার জন্য ৫ টন চাল বরাদ্দ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন। দেশীয় মণ্ডপের মতো কুতুপালং হিন্দু রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শারদীয় দুর্গোৎসবেও বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেন প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা। পূর্বে আরও প্রায় সাড়ে ৩ লাখ এসে রয়েছে। সব মিলিয়ে রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১২ লাখ। বাস্তুচ্যুত হয়ে পালিয়ে আসার সময় ১০১ পরিবারে ৪৫০ জন হিন্দু রোহিঙ্গা থাকলেও এখন ১১৩টি পরিবারের সদস্য দাঁড়িয়েছে ৪৭০ জনে। উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের কুতুপালং বনভূমির আশ্রিত স্থানেই দুর্গাপূজা উদযাপনের যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে হিন্দু রোহিঙ্গাদের জন্য।

Exit mobile version