কুতুবদিয়ায় আজো ধুঁকরে কাদেঁ সব হারানো স্বজনেরা


প্রলয়ংকরী জলোচ্ছাসে স্বজন হারানো বেদনার ৩৪ বছর আজ বিভিষিকাময় ২৯ এপিল।
১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল উপকূলীয় এলাকায় বয়ে যায় ১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছাস। ভেসে যায় নর,নারী, শিশুসহ প্রাণী ও সহায় সম্পদ সম্বলটুকু। বিভিন্ন তথ্যমতে কক্সবাজারের দ্বীপ কুতুবদিয়ায় অন্তত ১০-১৫ হাজার মানুষের সলিল সমাধি ঘটে।
অতীত স্মৃতি মনে করে দিনটি এলে বেদনায় বুক ভাসান অনেকেই। দোয়া ও মাগফেরাতের আয়োজন করে ফেরৎ না পাওয়া লাশের স্বজনরা।
কৈয়ারবিল পরান সিকদার পাড়ার ডাঃ আলহাজ মুহাম্মদ কাশেম সিকদার ভেজা নয়নে স্মৃতি জানাতে গিয়ে বলেন, তার মা,বাবা, স্ত্রী, ৫ সন্তান, ভাই,ভাবী,তাদের সন্তান,ভাগ্নেসহ তার পরিবারেই ভেসে যায় ১৬ জন।
একমাত্র ভাই জাফর আহমদ শিক্ষকতার কারণে চকরিয়ায় থাকায় বেঁচে যান। বিবাহিত অপর বোন আলী আকবর ডেইলের তিনি মারা যান জলোচ্ছাসে।
লেমশীখালীর মতির বাপের পাড়ার (বর্তমানে বড়ঘোপের বাসিন্দা) মৌলভী আবুল বশর বলেন, তাদের বাপ-দাদার যৌথ পরিবারে মাসহ জলোচ্ছাসে ভেসে যায় ১০৮ জন সদস্য। এর মধ্যে ৮ জনের লাশ পেয়েছিলেন তারা।
আগের দিন মাওলানা ছৈয়দ মিয়াজির স্ত্রী তার ফুফু মারা গেলে জাফর ফকিরের কবরস্থানে দাফন করা হলেও পর দিন সোমবার রাতে জলোচ্ছাসের আঘাতে কবর থেকে লাশটিও ভেসে যায়। গাছে উঠে স্ত্রী, সন্তানদের পানি থেকে উদ্ধার পান তারা।
কৈয়ারবিল বেড়িবাঁধের পাশে বসবাস করা সামসুল আলমের স্ত্রী খুকি। তৎসময়ের ৮ বছর বয়সী খুকি জলোচ্ছাসে হারিয়ে বেঁচে ফেরে ৩ মাস পর। সে জানায়, তারা ৪ বোন,ভাই ছিলনা।
রাতে জলোচ্ছাস উপকূলে হানা দিলে প্রথমে ঘরে দমদমায় ওঠে। পানি উঠলে চালে উঠেও শেষ রক্ষা হয়নি।
বাতাসের তোড়ে একটি বাশ ধরে ভাসতে থাকে অথৈ পানিতে। কিছু দূর ভেসে দেখা পায় ভাসতে থাকা একটি খড়ের গাদা। বাশ ছেড়ে খড়ের গাদায় উঠে পড়ে। সাথে পায় ধুরুং এলাকার তার সমবয়সী আরেক শিশু।
খড়ের গাদায় ভাসতে ভাসতে বাশঁখালী ছনুয়ায় পৌছে তারা। দয়াবান এক নারী দেখে তাদের উদ্ধার করে বাড়িতে আশ্রয় দেয়। ছেলে শিশুটি অন্যত্র চলে গেলেও খুকির ফেরা হয়না সহসা। ৩মাস পর খবর পায় স্বজনেরা। ছনুয়ায় ৩তিন মাইকিং করার পর দেখা মেলে খুকির। বাড়িতে এসে আশ্রয় নেয় নানীর বাড়ি।
বিয়ে হয় খুকির তবে ৫টি মেয়ে,ছেলে নেই। একটি মেয়ে অনেকটা হাবাগোবা। জলোচ্ছাসে যুদ্ধে জয় হলেও ভাই ছিলনা, তেমনি মেয়েদের কোন ভাই নেই,দু:খ এটাই তার।