গভীর নলকূপের পানির অভাবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের একশ’ একর বোরো ফসল জমিতে শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। ফলে বিপাকে পড়েছে প্রান্তিক চাষীরা। কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া দ্বীপের উত্তর ধূরুং ইউনিয়নের মগলাল পাড়া এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে এ দৃশ্য চোখে পড়ে।
প্রান্তিক চাষীরা জানায়, চলতি শুস্ক মৌসুমে উত্তর ধূরুং ইউনিয়নের প্রায় ২৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের জন্য বীজতলা তৈরি করেছে। এর মধ্যে মগলাল পাড়া এলাকায় ৫০ হেক্টর জমি রয়েছে। গত ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের শুস্ক মৌসুমে এ এলাকায় কৃষি মন্ত্রাণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) সেচ প্রকল্পের অর্থায়নে একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করে। গত রবি মৌসুমে এ গভীর নলকূপের আওতায় ১০ হেক্টর বোরো চাষ করে। চলতি মৌসুমে এ সেচ প্রকল্পের অধীনে ঐ এলাকার ৫০ হেক্টর জমিতে চাষ করার জন্য প্রান্তিক কৃষকরা গত দু’মাস পূর্বে বীজতলায় ধানের চারা তৈরি করে। গত এক মাস আগ থেকে বিএডিসি সেচ প্রকল্পের নিয়োগপ্রাপ্ত লোক ঐ গভীর নলকূপ হতে চাষের জমিতে পানি সরবরাহ না করায় বর্তমানে ৫০ হেক্টর চাষযোগ্য জমি অনাবাদি হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে মগলাল পাড়ার গিয়াস উদ্দিন সহ শতাধিক কৃষকের স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ গত ৮ ফেব্রুয়ারি কুতুবদিয়ার ইউএনও বরাবরে দিয়েছেন। এ বিষয়ে ইউএনওর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৯ ফেব্রুয়ারি নির্বাহী প্রকৌশলী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর কক্সবাজারকে বিএডিসি ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের অধীনে গভীর নলকূপের জন্য সৃষ্ট সঙ্কট সমাধানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পত্র প্রেরণ করেন।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মুহাম্মদ জাহাঙ্গির জানান, অবৈধ আর্থিক সুবিধা লাভের জন্য বিএডিসি কক্সবাজার (ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের ) সহকারি প্রকৌশলী ডালিম মজুমদার সেচ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত জাপানি তৈরি ইয়ানমার ৩৩ অশ্বশক্তি সম্পন্ন মেশিন (যা পানি উত্তোলনে উপযোগী) না বসিয়ে বর্তমানে সরকারি নীতিমালাকে উপেক্ষা করে চীনের তৈরি ১৬ অশ্বশক্তি সম্পন্ন মেশিন বসালে সেচ প্রকল্পে পানি উত্তোলনে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। ফলে প্রান্তিক চাষীরা চলতি মৌসুমে বোরো চাষাবাদ করতে ব্যর্থ হয়।
প্রান্তিক চাষী শফিউল আলম জানায়, সেচ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত জাপানী ৩৩ অশ্বশক্তি মেশিনের মূল্য প্রায় ৮ লাখ টাকা। বরাদ্দকৃত মেশিনটি না বসিয়ে বর্তমানে ১৫ হাজার টাকা মূল্যের চায়না মেশিন বসিয়ে সেচ প্রকল্পের বিঘ্ন সৃষ্টি করে বলে দাবি করেন।
কৃষকেরা আরো জানায়, সেচ প্রকল্পের আশায় এ এলাকার কৃষকেরা জমি আগাম, বীজতলা তৈরি, কীটনাশক ব্যবহারসহ প্রায় কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি করেছে। চাষীদের চারাধান জমিতে রোপন করতে না পারায় বীজতলা গুলো গো-চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে।
এ ব্যাপারে কুতুবদিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর সাথে কথা হলে বিষয়টি সরেজমিনে তদন্তপূর্বক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট অবহিত করবেন বলে নিশ্চিত করেন।
এ অভিযোগের ব্যাপারে বিএডিসি সেচ প্রকল্পের কক্সবাজার জেলার সহকারি প্রকৌশলী ডালিম মজুমদারের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার জন্য চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায় নি। এজন্য তার বক্তব্য দেয়া সম্ভব হয় নি।