parbattanews

কুতুবদিয়ায় জন্ডিস চিকিৎসায় মালা পড়া

Pic Jundis copy

কুতুবদিয়া প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধুরুং চাটি পাড়ার হাছানের ৬ বছরের শিশু পুত্র তানভীর, মুখে রুচি নেই, দিন দিন কাবু হয়ে যাচ্ছে। ব্যস জন্ডিস হয়েছে। ফুফুর পরামর্শে কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই মা জোবাইদা তানভীরকে নিয়ে গেলেন উপজেলা সদর উত্তর বড়ঘোপ জনৈক মহিলার কাছে।

অব্যর্থ জন্ডিস চিকিৎসার নামে তিনি শুকনো চিকন গাছের ডালের “মালা পড়া” দিলেন শিশুটির মাথার উপর। একই সাথে দিলেন পাশের কথিত সোহরাব মামার মাযারের এক বোতল পড়া পানি। এ পানি একুশ দিন পান করবে আর গোসল করাবে। সাথে কিছু ঝাড়-ফুঁকও দিলেন। এ চিকিৎসা বাবদ মহিলা ৫০ টাকা ফি নিলেন। অজ্ঞ সমাজে জনশ্রুতি রয়েছে মাথার উপরে দেয়া পড়া মালাটি আস্তে আস্তে বড় হয়ে শরীর বেয়ে পা হয়ে নেমে যাবে, আর জন্ডিস ভাল হয়ে যাবে। এমন বিশ্বাস নিয়েই বিজ্ঞানের যুগে গ্রামে-গঞ্জে অহরহ এখনো এমন অপচিকিৎসা চোখে পড়ে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীর মূলত লিভার সেল নষ্ট হওয়ায় রক্তে পিত্তরস ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে সাধারণত ক্ষুধামন্দা, শারীরিক দূর্বলতাসহ প্রস্রাবের রং হলুদ, চোখের সাদা অংশ হলুদ রং প্রকাশ পেয়ে থাকে।
এ অবস্থায় রোগীকে হাসপাতালে কিংবা সরকারি অনুমোদিত চিকিৎসকের কাছে নেয়া উত্তম। জন্ডিস সন্দেহ হলে চিকিৎসকের পরামর্শে কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। এ ব্যাপারে ল্যাব টেকনিশিয়ান এমএ মান্নান বলেন, জন্ডিস সন্দেহ হলে একজন চিকিৎসকের কাছে (ন্যুনতম এমবিবিএস) গেলে তিনি প্রয়োজনীয় কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে থাকেন। যেমন সহজ কথায় রক্তে জন্ডিসের পরিমাণ জানতে সিরাম বিলিরুবিন ছাড়াও হেপাটাইটিস বি এর পরীক্ষা (এইচ বি এস-এজি), প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষার প্রয়োজন হয়ে থাকে। এ ছাড়াও আনুসাংগিক পরীক্ষাও লাগতে পারে।

এমনও দেখা গেছে আদৌ জন্ডিস হয়নি, অথচ রোগীকে তথাকথিত মালা পড়া, পানি পড়া, নানা গাছ-গাছড়ার ছাল খায়ানো হয়ে থাকে। পড়ে দেখা গেলো তার কোন জন্ডিস হয়নি। অনেকে চুন-পানি দ্বারা জন্ডিসের রোগীর হাত ধুয়ে হলুদ পানি বের করে জন্ডিস বের করার দাবি করেন। এতে অনেক ক্ষেত্রেই ভূল ধারণা জন্মে রোগীর অবিভাবকদের মনে।

স্কয়ার হাসপাতালের গ্যাস্ট্রো এন্ট্রালোজী বিভাগের সাবেক আরএমও, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার (ডেপুটেড) ডা. মোহাম্মদ আবুল বশর বলেন, রোগ নির্ণয় করার পর এর চিকিৎিসায় তেমন ঔষধের প্রয়োজন হয় না। পূর্ণ বিশ্রামই এ রোগের মূল চিকিৎসা। ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পর এমনিতেই রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা কমে যাবে। অজ্ঞ ও ভূল বিশ্বাসে এ রোগের চিকিৎসায় তথাকথিত মালা পড়া, পানি পড়া সবই অপচিকিৎসা। একজন সুস্থ্য মানুষকেও ঐ মালা দিলে একই ভাবে বের হবে বলে তিনি জানান।

Exit mobile version