parbattanews

কুতুবদিয়ায় পানিতে ডুবে এক বছরে ৮০ শিশুর মৃত্যু


এম. এ মান্নান:

কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার ছয়টি ইউনিয়নে পানিতে ডুবে গত এক বছরে অন্তত ৮০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এমনকি এ উপজেলায় পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। পরিবার বিশেষ করে মায়েদের সচেতনার অভাবেই এমনটি ঘটছে বলে বিশিষ্টজনদের অভিমত।

হাসপাতালসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, গত এক বছরে পুকুরে কিংবা খালের পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে ৮০ শিশুর। মৃত্যুর পর অধিকাংশ শিশুকেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়েছে। কারণ হাসপাতালে নিয়ে আসা শিশুর ৯৮ ভাগই ছিল ষ্পট ডেড। যাদের বয়স ১ থেকে ৫ বছরের মধ্যে।

অন্যদিকে পানিতে ডুবে যাওয়ার ঘটনার পর বেঁচে যাওয়া শিশু শতকরা মাত্র ২ ভাগ। গত বছর (২০১৭) বর্ষাকালে বিশেষ করে মার্চ-এপ্রিল-মে-জুন এই চার মাসে পানি ডুবির ঘটনা ছিল আশংকাজনক। চার মাসেই পানিতে ডুবে অন্তত ৩০ শিশু প্রাণ হারিয়েছে। কোনো কোনো দিন ৩/৪টি শিশু মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে। গড়ে প্রতি মাসে অন্তত ৫টি শিশু পানি ডুবির ঘটনায় হতাহত হওয়ার তথ্য আছে কুতুবদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

এ ছাড়াও উপজেলার ধূরুংবাজারে ডাক্তারের প্রাইভেট চেম্বারে, বেসরকারি একাধিক ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য নিতে আসা পানিতে ডুবে যাওয়া শিশুদের মধ্যে অন্তত ৮ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শিশু ছাড়াও মৃগী রোগী, মস্তিস্কে বিভ্রাট জনিত কারণে আরো ৩ জন বয়স্ক মহিলা-পুরুষ পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার খবরও রয়েছে।

প্রতিনিয়িত পানি ডুবির ঘটনায় সচেতনার অভাব ছাড়াও প্রতিটি বাড়ির সামনে বা পেছনে ছোট-বড় পুকুর থাকাকেও দায়ী করেছেন অভিজ্ঞমহল। অন্যদিকে সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়ায় বিশুদ্ধ পানির ঘাটতি থাকায় এসব পুকুর অপরিহার্য। সে কারণে খুব সহজেই শিশুরা হাঁটি হাঁটি করে অজান্তেই পুকুরে তলিয়ে যায়। পানি ডুবির ঘটনা রোধে জনসচেতনামূলক প্রচার-প্রচারণাও নেই। নেই কোনো সরকারি উদ্যোগ।

এভাবে উপজেলায় পানি ডুবিতে শিশু মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে উপজেলা হাসপাতালের ইপিআই টেকনিশিয়ান ছৈয়দ কামরুল হাসান বলেন, মায়েদের সচেতনার অভাব, অবহেলা আর কর্মব্যস্ততাই এর মূল কারণ। প্রতিটি মা সমাবেশে তিনি প্রথমেই পুকুরে ডুবে শিশু মৃত্যুর ঘটনা রোধে বক্তব্য রাখেন বলেও জানান তিনি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ছাবের বলেন, বেশিরভাগ পরিবারে ঘন ঘন শিশু জন্মের কারণেই মূলত মায়েদের পক্ষে সন্তান দেখভালে অবহেলার কারণ দেখা দেয়। তিনি মনে করেন, জন্ম নিয়ন্ত্রণের প্রসার বাড়ানোর সাথে সাথে প্রতিটি অভিভাককে সচেতন হতে হবে। বাড়ির পাশের পুকুর বা ডোবার নিরাপত্তার ব্যবস্থাও নিতে হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজন চৌধুরী বলেন, পুকুরে বা পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার কমাতে হলে প্রথমেই মায়েদের সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে নিজ সন্তানের প্রতি। জনসচেতনা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদেরও এ বিষয়ে ভূমিকা রাখতে হবে।

উপজেলা চেয়ারম্যান এ টিএম নুরুল বশর চৌধুরী বলেন, পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার কমাতে সর্বাগ্রে জনসচেতনা বৃদ্ধি করতে হবে। সাঁতার না জানা শিশুদের ক্ষেত্রে কর্মব্যস্তার মাঝেও নিজ সন্তানের খেয়াল রাখার দায়িত্ব প্রতিটি মা-বাবাকেই নিতে হবে। এতে অবহেলা করার কোন সুযোগ নেই।

 

সূত্র: পাক্ষিক পার্বত্যনিউজ, বর্ষ ১, সংখ্যা ১

Exit mobile version