parbattanews

কুতুবদিয়ায় ষ্ট্যাম্প চুক্তিতে হচ্ছে বাল্যবিয়ে

কুতুবদিয়ায় গোপন চুক্তিতে চলছে বাল্যবিয়ে। বাল্যবিয়ে রোধে প্রশাসনের কড়াকড়ির দরুণ গোপন ষ্ট্যাম্প চুক্তির মাধ্যমে অধিকাংশ বাল্যবিয়ে হচ্ছে। প্রশাসনও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিয়ের অনুষ্ঠান ভেঙে দিচ্ছে দায়সারার মতো। ফলে বাল্যবিয়ে আয়োজনে অনুষ্ঠান ভাঙলেও বিয়ে বন্ধ থাকছেনা। এর জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত ২১ নভেম্বর লেমশীখালী বশির উল্লাহ সিকদার পাড়ার মো. হোছাইনের ১৩ বছর বয়সী মেয়ে লেমশীখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী টুম্পা বেগম ও দক্ষিণ ধুরুং আলী ফকির ডেইল গ্রামের জাফর আলমের পুত্র মফিজের সাথে বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। প্রশাসন প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে অনুষ্ঠান পণ্ড করে দেন। তবে সে বিয়েটি আরো সপ্তাহ খানেক আগেই ষ্ট্যাম্পের চুক্তিতে সম্পন্ন হয় বলে জানা গেছে। বর্তমানে শিশুটিকে শ্বশুরবাড়ি পাঠানো হয়েছে বলে জানা যায়।

একই এলাকায় ঠান্ডা চৌকিদার পাড়ায় গত ৩ ডিসেম্বর ইউনুছের ১৩ বছর বয়সী মেয়ে আল ফারুক মাদ্রাসার ৭ম শ্রেণির ছাত্রী রেশমা আক্তার ঝুমা ও একই গ্রামের আবু মুছার ছেলে রুবেলের সাথে বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। এটিও প্রশাসন খবর পেয়ে চেয়ারম্যান ও মাদ্রাসার সুপারকে নির্দেশ দিয়ে অনুষ্ঠান পণ্ড করে দেন। কিন্তু কনের বয়স না হওয়ায় সাময়িক ষ্ট্যাম্প চুক্তির মাধ্যমে বিয়ে চলছিল বলে জানা গেছে। ধরপাকড় কমে গেলে এটিও আবার শ্বশুর বাড়িতে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে উভয় বাড়ির অভিভাবকরা।

বশির উল্লাহ সিকদার বাড়িতে গত বছর আসমা আক্তার (১২) নামের ষষ্ঠ শ্রেণির একটি শিশুর বাল্যবিয়ে হয় দুই সন্তানের জনকের সাথে। এটিও দু‘টি ষ্ট্যাম্পের চুক্তিতে বিয়ে ঠিক হয় বলে কনের মা জানান। তবে এ বিয়েটি বন্ধ করতে প্রশাসন, পুলিশ কয়েক দফা হানা দেয়। গোপনে স্থানীয় ফিরোজ আহমদ ভান্ডারী নামের এক আইনজীবি ভূয়া জন্মনিবন্ধন বানিয়ে গোপনে কাবিন করে শোকরিয়া জানিয়ে পত্রিকায় বিবৃতি দেন। এ ঘটনায় তৎকালীন ইউএনও দীপক কুমার রায় ওই আইনজীবিসহ বর-কণের মা বাবাকে আটক করে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

নিকাহ রেজিষ্ট্রার (কাজী) আবুল আনছার মো. সোয়াইব সিদ্দিকী বলেন, বৈধ জন্ম নিবন্ধন ছাড়া কাবিন না হওয়ায় অসাধু প্রক্রিয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের বাল্য হচ্ছে ষ্ট্যাম্প চুক্তির মাধ্যমে। অনেকে ভূয়া জন্মনিবন্ধন তৈরি করে উপজেলার বাহিরে পেকুয়া, বাঁশখালীর ছনুয়া বিভিন্ন স্থানে গিয়ে কাবিন করে পালিয়ে বাল্যবিয়ে দিচ্ছে। কাজেই অনুষ্ঠান শুধু ভাঙলে হবেনা। পরে খোঁজ নিয়ে শাস্তির ব্যবস্থা করা গেলে ক্রমেই এটি বন্ধ হবে বলে তিনি জানান।

কুতুবদিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষিকা জিগারুন্নাহার বলেন, বাল্যবিয়ে হচ্ছেই। এক্ষেত্রে শুধু কণের দোষ নয়। প্রাপ্তবয়স্ক পাত্র কেন জেনে শুনে নাবালিকা মেয়েকে বিয়ে করেন। এটাও অপরাধ। কাজেই উভয় পক্ষের অভিভাবকসহ বরকেও শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জিয়াউল হক মীর বলেন, উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই বাল্য বিয়ের সংবাদ আসছে। তারা সংবাদ পেয়েই সেগুলো বন্ধ করে দিচ্ছেন। লেমশীখালী ও আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের সবচেয়ে বেশি বাল্যবিয়ে হচ্ছে বলে তিনি জানান। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিরাট ভূমিকা রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

Exit mobile version