parbattanews

কুতুবদিয়া দ্বীপের ৯১ সেই ভয়াল স্মৃতি ২৯ এপ্রিল

 

কুতুবদিয়া প্রতিনিধি:

সে দিন ছিল সোমবার। ২৯ এপ্রিল, ১৯৯১। রাত সাড়ে ৮টার দিকে গুড়িগুড়ি বৃষ্টির সাথে বাতাসের বেগও বাড়ছিল সমান তালে। আবহাওয়ার সতর্ক সংকেত আরও কঠোর হচ্ছিল। শিশুরা ঘুমিয়ে পড়েছে অনেক গ্রামে। ক্রমেই সংকেত বেড়ে ১০ নম্বর মহাবিপদ  সংকেত দেয়া হয়েছে। তবু যেন বিশ্বাস হয়নি অনেকের কাছে। কেননা, এমন বিপদ সংকেত আগেও দেয়া হয়েছে। পানি ওঠেনি। তাই সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতষ্ঠানের দেয়া সতর্ক সংকেত প্রচারে গুরুত্ব দেয়নি তৎসময়ে লক্ষাধিক দ্বীপবাসি।

ফলে রাত বাড়ার সাথে সাথে বাতাসের গতিবেগ হু হু করে বাড়তে থাকে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে দ্বীপের উত্তর-পশ্চিম প্রান্ত থেকে সমুদ্রের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। বাতাসের গতিবেগ হয়ে যায় ঘন্টায় ২২৫ কিলোমিটার। ৬ মিটার উচ্চতা নিয়ে জলোচ্ছাস বয়ে যায় কুতুবদিয়ার উপর দিয়ে। ঘুমে থাকায় অবস্থায় সলিল সমাধি হয় বিভিন্ন ইউনিয়নের ১০ হাজার মানুষ। নারী-পুরুষ, শিশু। গাছের ডালে বেঁচে থাকা আর কতইনা স্মৃতি এখন। ভেসে গেছে শত শত মানুষ পানির স্রোতে। আজও খুঁজে বেড়ায় তাদের আত্মীয়-স্বজন। এমনও পরিবার রয়েছে যাদের একই পরিবারে মারা যায় ৮/৯ জন। শুন্য সংসার পড়ে ছিল দ্বীপের মাটিতে।

উত্তর ধূরুং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আ.স.ম শাহরিয়ার চৌধুরী বলেন, ৯১ এর ভয়াল স্মৃতি ভোলা যায়না। পর দিন সমুদ সৈকতে ভেসে আসা অগনিত মানুষসহ গবাদি পশু। দরিদ্র নেই ধনী নেই সবার দুয়ারে ছিল আর্তনাদ। সেসময়ে সাইক্লোন শেল্টার কম থাকায় এবং সচেতনার ঘাটতি থাকায় প্রাণহানী বেশি ছিল বলে তিনি মনে করেন।

দক্ষিণ ধুরুং ইউপি চেয়ারম্যান ছৈয়দ আহমদ চৌধুরী বলেন, ৯১ এর জলোচ্ছাসে উপকুলীয় এলাকায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কুতুবদিয়া। স্থাপনাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গাছ-পালা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে যায় রাতের আঁধারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কখন আসবে বলা যায়না। তাই সবার মাঝে সচেতনা বৃদ্ধিসহ তিনি উপজেলা পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের দাবিও জানান।

বিশেষজ্ঞদের তথ্যমতে, বাংলাদেশে ১৭৯৭ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ২০০ বছরে অন্তত: ৬৩ বার মনে রাখার মতো ঘুর্ণিঝড় হয়েছে। অন্য এক হিসেবে দেখা গেছে গত ৩৭ বছরে ৩৪টি ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসে সাড়ে ৫ লাখ মানুষ মারা যায়। তবে সবচেয়ে ২৯ এপ্রিল ঘুর্ণিঝড় বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণকালের ভয়াবহতম ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস আঘাত হেনেছিল উপকুলীয় ভুখণ্ডে। কুতুবদিয়া ছাড়ারও তখন কক্সবাজার, মহেশখালী, বাঁশখালী, আনোয়ারা, চকরিয়া, সন্দীপ ও সিতাকুণ্ডের বিস্তীর্ণ জনপদে গড়ে ৮-১০ মিটার উঁচু ভয়াবহ জলোচ্ছাস লণ্ড-ভণ্ড করে দেয়। যে স্মৃতি উপকুলের মানুষ ভুলতে পারেনি।

Exit mobile version