কে এই অংথোই মারমা আগুন ?

fec-image

কে এই অংথোই মারমা ওরফে আগুন। যার মৃত্যুতে আগুনে জ্বলেছে খাগড়াছড়ি-ঢাকা আঞ্চলিক সড়ক ও মাল বোঝাই ট্রাক। ভাঙ্গা হয়েছে বেশ কিছু সিএনজি। লাঞ্চিত, আহত হয়েছে পথচারী। আতঙ্কে দিন পার করছে মানুষ।  এখানেও থেমে নেই।  তার জন্য রবিবার(৪ সেপ্টেম্বর) খাগড়াছড়ির পাঁচ উপজেলায় ডাকা হয়েছে আধাবেলা সড়ক অবরোধ। সে কারণে বেড়েছে আরো ভয়, উদ্বেগ ও আতঙ্ক।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অংথোই মারমা ওরফে আগুন প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’র  (ইউপিডিএফ) গুইমারা অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার। আর ইউপিডিএফ ভাষায় সংগঠক। আসল সত্য হলো, তিনি ছিলেন,গুইমারা অঞ্চলের ত্রাস। তার চাঁদাবাজি ও অত্যাচরে এ অঞ্চলের মানুষ ছিল অতিষ্ঠ।  নিহত অংথুই মারমা উপজেলার বুদং পাড়ার (যৌথ খামার) কংহ্লাউ মারমার ছেলে ও ওই এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। লাশ উদ্ধারের সময় লাশের পাশে পড়ে থাকা ম্যাগাজিনসহ ৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না শর্তে গুইমারার একাধিক কৃষক, দিন মজুর, শ্রমিক, জুম চাষী ও ব্যবসায়ী এমনকি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র বলছে, অংথোই মারমা ওরফে আগুনের বিশাল বাহিনী রয়েছে। তার নেতৃত্বে গুইমারা ও সিন্দুকছড়ি এলাকায় প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি হতো। বাজারে কোনো কৃষক এক মুঠো শাক নিয়ে আসলেও চাঁদা দেয়া বাধ্যতামূলক ছিলো। এ ছাড়া কাঠ ব্যবসায়ী, বাঁশ ব্যবসায়ী, গাড়ী চালক, যেসব  পাহাড়ি জুম চাষ করে তাদেরও চাঁদা দিতে হতো। তা সত্ত্বেও এতোদিন তিনি ছিলেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। অবশেষে শুক্রবার সকালে প্রতিপক্ষের গুলিতে অংথোই মারমা ওরফে আগুন নিহত হয়।

কিন্তু এখানে থেমে নেই, অংথোই মারমা ওরফে আগুন নিহত হওয়ার পর তার সহকর্মীরা খাগড়াছড়ি জেলার পশ্চিম অংশে আগুন দিয়েছে।

শুক্রবার ইউপিডিএফ নেতা অংথোই মারমার হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে খাগড়াছড়ি-ঢাকা আঞ্চলিক সড়কের  বাইলাছড়ি ও দাতারাম পাড়া এলাকায়  রাস্তা ও যানবাহনে আগুন দিয়েছে প্রসীত  বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ’র সন্ত্রাসীরা। ভেঙ্গেছে বেশ কিছু সিএনজি। নাজেহাল ও লাঞ্চিত হয়েছে অসংখ্য যাত্রী।

বাইল্যাছড়িতে সন্ত্রাসীদের আগুনে পুড়ে যাওয়া ট্রাকে মালিক মো: দাউদুল ইসলাম ভুঁইয়া জানান, কয়েক দিন আগে তিনি ট্রাকটি কিস্তিতে কিনেছেন। চালকের কাছ থেকে জানলাম, সন্ত্রাসীরা চালকের  বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে তার নতুন ট্রাকটি জ্বালিয়ে দিয়েছে।

রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: মিজানুর রহমান ও গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: রশীদ জানান, ধর্মপ্রাণ মসুলমানরা যাখন নামাজে ব্যস্ত ঠিক সে সময় দুপুর রামগড় উপজেলার দাতারাম পাড়া ও গুইমারা উপজেলার বাইল্যাছড়িতে পৃথক ভাবে মাল বোঝাই ট্রাকে এ আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ কিছু সিএনজি ভাংচুর ও যাত্রীদের মারধর করা হয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। ফলে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।

গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: রশীদ জানান, গুইমারা পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। মামলাগুলো হচ্ছে হত্যা ও অস্ত্রের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ও ট্রাক পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ট্রাকের হেলপার।

রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, দাতারামপাড়া ট্রাকে আগুন দেওয়ার ঘটনায়, ট্রাকের হেলপার কামরুল ইমলাম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। রাস্তা ও যানবাহনের অগ্নিসংযোগের পর থেকে মাটিরাঙা থেকে রামগড় উপজেলা পর্যন্ত যানবাহন গুলোকে প্রহরা দিয়ে পৌছে দিচ্ছে পুলিশ।

এখানে থেমে নেই, প্রতিপক্ষের গুলিতে সন্ত্রাসী অংথোই মারমা নিহত হওয়ার পর খাগড়াছড়ি জেলার পাঁচ উপজেলায় রবিবার আধাবেলা সড়ক অবরোধ ডেকেছে প্রসীতের ইউপিডিএফ।

শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের প্রধান নিরন চাকমা স্বাক্ষরিত সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ইউপিডিএফ’র খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা এই অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

বিবৃতিতে তিনি অবরোধ কর্মসূচি সফল করতে সকল যানবাহন মালিক-চালক ও শ্রমিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ জানিয়েছেন।

অবরোধ চলাকালে জরুরী ফায়ার সার্ভিস, এ্যম্বুলেন্স ও লাশবাহী গাড়ি, জরুরী ঔষধ সরবরাহকারী ও সংবাদপত্র বহনকারী যান, সংবাদ সংগ্রহের কাজে ব্যবহৃত সাংবাদিকদের গাড়ি এই অবরোধের আওতামুক্ত থাকবে বলে জানানো হয় বিবৃতিতে।

খাগড়াছড়ি জেলার পাচ উপজেলা গুইমারা, মাটিরাঙ্গা, রামগড়, মানিকছড়ি ও লক্ষ্ণীছড়িতে আধাবেলা (সকাল ৬টা হতে দুপুর ১২টা পর্যন্ত) সড়ক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ইউপিডিএফ, ইউপিডিএফ সন্ত্রাসী নিহত
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন