জানতে হলে পড়তে হবে

কোকা-কোলার সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক কী ?

fec-image

বহু বছর ধরে বহুল প্রচলিত কোমল পানীয় কোকা-কোলার সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন কথা শোনা যায়। কেউ বলে, কোকা-কোলা ইসরাইলি পণ্য, আবার কেউ বলে কোকা-কোলা মুসলিম বিদ্বেষ ছড়াতে অর্থায়ন করে। নানা অভিযোগে বিশ্বজুড়ে বহু দেশে দীর্ঘদিন ধরে বয়কট আন্দোলনের মুখে কোকা-কোলা।

তবে আসল কারণটা কী? কোকো-কোলার সঙ্গে ইসরাইলের আসলেই কি কোনো সম্পর্ক আছে? পণ্যটি কি ইসলাম বিদ্বেষ ছড়াতে সহায়তা করে?

উত্তরটা খুঁজতে হলে জানতে হবে আরেক প্রশ্নের উত্তর। সেটা হলো- কোকা-কোলার মালিক কে?—নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রতিষ্ঠানটি এই প্রশ্নের উত্তরে বলছে, ‘কোকা-কোলার মালিক একজন না, বরং এটি অনেক শেয়ারহোল্ডারের সম্মিলিত মালিকানায় পরিচালিত একটি বৃহৎ আন্তর্জাতিক কোম্পানি।’

কোকা-কোলার সবচেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডার কে, সেই প্রশ্নেরও কৌশলী উত্তর দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে। বলা হয়েছে— ওয়ারেন বাফেটের মালিকানাধীন বার্কশায়ার হ্যাথওয়ে ইনকরপোরেশন নামের একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের নাম।

তবে গাজা যুদ্ধের সঙ্গে এর সরাসরি একটি সম্পর্কও রয়েছে। ইসরাইলে কোকা-কোলার ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রতিষ্ঠানের নাম দ্য সেন্ট্রাল বোটলিং কোম্পানি, যারা ‘কোকা-কোলা ইসরাইল’ নামেও পরিচিত।

ফিলিস্তিনে ইসরাইলের দখলকৃত ভূখণ্ডে বেসরকারি খাত ও অর্থনীতির মধ্যে সংযোগ নিয়ে গবেষণা করা সংস্থা ‘হু প্রফিটস’–এর তথ্যমতে, কোকা-কোলা ইসরাইলের দখল করা পূর্ব জেরুজালেমের আতারোত শিল্পাঞ্চলে একটি বিতরণ কেন্দ্র এবং কুলিং হাউস পরিচালনা করছে।

শুধু তা-ই নয়, এই প্রতিষ্ঠানের তৈরি অন্যান্য পানীয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ফলমূলও আসে পশ্চিম তীর ও সিরিয়ার গোলান মালভূতিতে ইসরাইলের দখল করা ভূমি থেকে। যদিও ইসরাইলের দাবি, এসব কারখানা এবং ফলের বাগান ইসরাইলের বৈধ জমিতে স্থাপিত।

ইনস্টিটিউট অব প্যালেস্টাইন স্টাডিসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে অবৈধ ইসরাইলি বসতিগুলোর মধ্যে অন্যতম আতারোত। পূর্ব জেরুজালেমের বেইত হানিনা ও কালানদিয়া চেকপয়েন্টের মাঝামাঝি এলাকাটির অবস্থান।

এছাড়া ২০২৪ সালের জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ইসরাইলের যেকোনো ধরনের বসতি স্থাপন অবৈধ এবং ওই সব ভূমিতে নির্মিত সব বসতি আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধাপরাধের শামিল। এই হিসেবে কোকা-কোলাও আন্তর্জাতিক অপরাধে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।

অন্যদিকে কোকা-কোলার সহযোগী প্রতিষ্ঠান দ্য সেন্ট্রাল বোটলিং কোম্পানির বিরুদ্ধে ইসরাইলি সেনাবাহিনীকে (আইডিএফ) অনুদান দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

দ্য নিউ আরবের তথ্যমতে, ২০১৫ সালে ইসরাইলের কট্টর ইহুদিপন্থি সংগঠন ইম তিরৎজুকে প্রায় ১৪ হাজার ডলার অনুদান দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। যদিও এই অনুদানের বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করেছিল দুপক্ষই। তবে শেষ পর্যন্ত সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

ইম তিরৎজু ইসরাইলের কট্টরপন্থি জায়নবাদী বেসরকারি সংস্থা, যারা নিজেদেরকে ইসরাইলের সংস্কৃতি ও আদর্শের রক্ষক হিসেবে দাবি করে। তবে বিভিন্ন পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষক সংস্থা একে কট্টর ইহুদিপন্থি, জায়নবাদী এবং রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত সংস্থা আখ্যা দিয়েছে।

এদিকে কোকা-কোলার ফর্মুলা নিয়েও নানা কথা প্রচলিত। বলা হয়ে থাকে, বিশ্বের বহু দেশের পারমাণবিক কর্মসূচির চেয়েও গোপন রাখা হয় এর পেটেন্ট করা ফর্মুলা। কিন্তু কোকা-কোলার অভ্যন্তরীণ করপোরেটের কেউ না হয়েও এই ফর্মুলা জানার সুযোগ পেয়েছিলেন এক ইহুদি রাব্বি (ইহুদি পুরোহিত)। তার নাম তুভিয়া গেফেন।

মূলত কোকা-কোলাকে ইহুদিদের ধর্মীয় উৎসব পাসওভারে পান করার উপযুক্ত (হালাল) করতে তাকে এই ফর্মুলা জানার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।

শেষ কথা হলো- কোকা-কোলার সঙ্গে ইসরাইলের নানাভাবে সংযোগ থাকতে পারে। তবে এটি মূলত একটি মার্কিন কোম্পানি। এর প্রধান কার্যালয় যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টা শহরে।

১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত কোকা-কোলা এ যাবৎ বহুবার বর্জনের মধ্য দিয়ে গেলেও এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কোমল পানীয় কোম্পানি হিসেবেই ব্যবসা করে আসছে।

সূত্র : মার্কেটিং ইউক অবলম্বনে লেখা দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন