কোনো হাফ মেজার্ড প্রস্তাবে রাজি হলে বিপদে পড়বে বাংলাদেশ


ভারতের ইকোনমিক করিডোর কালাদান মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলো মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সিত্তে বন্দর হয়ে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত হতে যাচ্ছে। ছবি ১। ভারত প্রকল্পটিতে বিনিয়োগ করেছে প্রায় $৪৮৪ মিলিয়ন।
ভারতের প্রকল্পের বেশিরভাগ অংশের (সিত্তে বন্দর, নদীপথ, পালেটোয়া জেটি) কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, তবে পালেটোয়া-জোরিনপুই সড়ক নির্মাণ এখনও বাঁধার মুখে আছে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ভারত আরাকান আর্মি এবং জান্তার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সড়ক নির্মাণ পুনরায় শুরু করার সম্ভাবনা তৈরি করেছে, এবং ২০২৫ সালের মধ্যে প্রকল্পটি সম্পূর্ণ কার্যকর হওয়ার আশা করা হচ্ছে।
ওদিকে চীন রাখাইনে কায়োকফিউ গভীর সমুদ্র বন্দর ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণে বিনিয়োগ করেছে $১.৩ বিলিয়ন। এই প্রকল্পের কাজেরও অনেক অগ্রগতি হয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে প্রকল্পের গ্যাস পাইপলাইন এবং ২০১৭ সাল থেকে তেল পাইপলাইনগুলো চালু আছে, তবে সমুদ্র বন্দরটি এখনও অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। ২০২৪ সালের এপ্রিলে, চীন ৩০০ জনেরও বেশি কর্মী এবং যন্ত্রপাতি কিয়াকফিউতে পাঠিয়েছে, ২০২৫ এর এর মধ্যে কাজের অগ্রগতির জন্য।
ভারত এবং চীন উভয়ের প্রকল্প রাখাইন রাজ্যের মধ্য দিয়ে গেছে। যেখান থেকে অনেক আগেই সরিয়ে দেয়া হয়েছে রহিজ্ঞাদের। এতে উভয় প্রকল্পের সুবিধা হওয়ার কথা থাকলেও শুরু হয় আরকান আর্মি সহ অন্যান্য জাতি গোষ্ঠীর সাথে মিয়ানমার জান্তার যুদ্ধ। যাতে বিঘ্ন হয় প্রকল্পগুলো কাজের সমাপ্তি।
২০২৫ সালের শুরু থেকে আরাকান আর্মি রাখাইনের প্রায় ৮৫% এলাকা নিয়ন্ত্রণ নিলেও , সিত্তে এবং কিয়াকফিউ বন্দর এলাকা এখনও মিলিটারি জান্তার অধীনে। যদিও ভারত এবং চীন উভয়ে আরাকান আর্মি আর মিয়ানমার জান্তা উভয়ের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে ধিরে ধিরে কাজ সমাপ্তির দিকে আগাচ্ছে।
বাকি থাকল বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা। যাদের নিয়ে ভারত, চীন, মিয়ানমার জান্তা, আরাকান আর্মি কারোই তেমন মাথাব্যাথা নেই। মাথাব্যাথা কেবল রোহিঙ্গাদের, সেই সাথে বাংলাদেশ আর জাতিসংঘের। ভারত আর চীন রাখাইন রাজ্য দিয়ে তাদের করিডোরের মাধ্যমে অর্থনৈতিক লাভ তুলবে, আর ভুগছে রোহিঙ্গা আর বাংলাদেশীরা।
বাংলাদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের পিছনে বার্ষিক খরচ প্রায় $১.২ বিলিয়ন, যা আসে জাতিসংঘের মাধ্যমে দাতা দেশ থেকে। আর এসব দাতাদেশগুলো তাদের এইড সিগ্নিফিকেন্ট ভাবে কমিয়ে দিয়েছে, আর আমেরিকা, যারা প্রধান দাতা দেশ, এই এইড সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়ার পথে আগাচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে এই ভারের বিশাল অংশ এসে পড়বে বাংলাদেশের উপর।
বাংলাদেশকে এসব রোহিঙ্গাদের হয় রাখাইনে ফেরত পাঠাতে হবে, না হয় অন্য দেশে স্থানান্তর করতে হবে (আনলাইকলি), নাহয় নিজেদের মাঝে সামহাউ মিশিয়ে নিতে হবে। ফান্ডিং বন্ধ হয়ে গেলে রোহিঙ্গারা সারভাইভিং এর জন্য নানান নিষিদ্ধ আর অনৈতিক কাজের মাধ্যমে বেঁচে থাকার জন্য বাধ্য হবে। তাতে হুমকির মুখে পড়বে বাংলাদেশের শান্তি আর নিরাপত্তা।
চীন জাতিসংঘের প্রস্তাবিত মানবিক করিডোরের বিরুদ্ধে না হলেও সাপোর্টও করছে না। আর ভারত এখন পর্যন্ত তাদের বিরোধিতা কিংবা সাপোর্ট জানায়নি। তার মানে ধরে নেয়া যায়, এতে ভারতের তেমন ইচ্ছা নেই। ভারত আর চীন উভয়েই এটা বাংলাদেশ, আরাকান আর্মি, মিয়ানমার, আর জাতিসংঘের উপর ছেড়ে দিচ্ছে। এজ ইউজুয়াল, লাভ তাদের আর কাজ আমাদের।
রাখাইন হয়তো শেষ পর্যন্ত আরাকান আর্মির হাতেই যাবে। মোস্ট প্রোবাবলি তারা স্বায়ত্তশাসন পাবে, মিয়ানমারের সাথে ফেডারেটেড সম্পর্ক স্থাপন হবে। শেষ পর্যন্ত ডিলটা করতে হবে মুলত আরাকান আর্মির সাথে, সাথে মিয়ানমার জান্তা।
তবে তার জন্য হয়তো আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তাদের যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত একদিকে যেমন রোহিঙ্গাদের পুশ ব্যাক করার মত সামরিক শক্তি বাংলাদেশের নাই, অন্যদিকে রাখাইনের সিচুয়েশন খারাপ হবে, এবং তাতে রোহিঙ্গা সহ বাংলাদেশ ফের বিপদে পড়বে।
তবে জাতিসংঘকে রাজি হতে হবে যতদিন রোহিঙ্গাদের রাখাইনে সেইফলি ফেরত না পাঠাতে পারছে ততদিন তারা বাংলাদেশে এদের ব্যয় বহন করবে, সেই সাথে জাতিসংঘ সব পক্ষকে রাজি করিয়ে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে পুনর্বাসন করবে।
আর সেই পর্যন্ত অন্য কোন হাফ-মেজার্ড প্রস্তাবে বাংলাদেশ যেন রাজি না হয়। রাজি হলে বিপদে পড়বে বাংলাদেশ। আর যে কোন মানবিক করিডোরের আগেই বাংলাদেশের সীমান্তকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
তবে এটাও মাথা রাখতে হবে, যতদিন যাবে, রোহিঙ্গা আর বাংলাদেশের সমস্যা আরও গভীর হবে। আমরা দ্রুত একটা অপরটুন সময়ের জন্য অপেক্ষা করছি, যদিও সময় অলরেডি পার হয়ে গেছে।