parbattanews

কোমর তাঁতে স্বাবলম্বী হচ্ছে বান্দরবানের পাহাড়ি নারীরা

বান্দরবানের পাহাড়ে ১১টি জাতিগোষ্ঠীর বসবাস, এসব গোষ্ঠীর নারী সদস্যরা প্রায় সবাই কম-বেশি কোমর তাঁত বোনেন। নারীরা বাঁশের কাঠি দিয়ে বিশেষ কায়দায় কোমরের সঙ্গে বেঁধে তাঁতের কাপড় বুনে থাকে বলে এটিকে কোমর তাঁত বলা হয়।তাদের হাতে তৈরি থামি, পিনন, ওড়না, রুমাল, গামছা বা চাদর এখন পাহাড় ছাড়িয়ে সমতলেও ব্যাপক সমাদৃত। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য এ শিল্প এখনও বাড়ির উঠানেই আটকে আছে। তবে তারা বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড বা সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। কিছু কিছু এলাকায় বান্দরবান তাঁত বোর্ডের পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করলেও সেই ঋণের ঘানি টানতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ শিল্পকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে পাহাড়ের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থা। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কোমর তাঁতে ঘুরছে পাহাড়ি নারীদের জীবন চাকাও।

সরেজমিনে দেখা যায়, বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের গেৎ‌শিমা‌নি পাড়া, শেরন পাড়া, বেতেনী পাড়া ও রুমা উপজেলার বেতল পাড়া, মুনলাই পাড়া, মুননুয়াম পাড়া, আর্তা পাড়া এবং কেওকারাডং পাহাড়ের হারমুন পাড়া, দার্জিলিং পাড়া, সুনসাং পাড়া ও তিনদৌলতি পাড়ায় বম সম্প্রদায়ের নারী সদস্যরা সবাই কম-বেশি কোমরতাঁত তৈরি করেন।

পাহাড়ি তাঁতিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বম সম্প্রদা‌য়ের নারীরা বাঁশের কাঠি দিয়ে কোমরের সঙ্গে বেঁধে তৈরি ক‌রেন থামি, ওড়না, রুমাল, গামছা ও চাদর। এই তাঁ‌তের কাপড়গুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বান্দরবানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়। পর্যটকরা ফিরে যাওয়ার সময় বান্দরবানের স্মৃতি হিসেবে পাহাড়ি নারীদের তৈরি এই কোমরতাঁত কিনে সঙ্গে নিয়ে যান।

তাঁত বোর্ডে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের প্রায় ১৫ লাখ মানুষ তাঁত শিল্প বিকাশে অবদান রাখছে। এ শিল্পটি দেশে বস্ত্র উৎপাদনেও প্রায় ৬৩ শতাংশ যোগান দিচ্ছে। ত‌বে তাঁতিদের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচিকে ব্যাপকভাবে গুরুত্ব দিলেও পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়কে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তাঁত বুননের প্রশিক্ষণ বা বুনন কাজের জন্য যুগোপযোগী যন্ত্রপাতি দেওয়া হচ্ছে না।

বান্দরবানের লাইমি পাড়ার কোমরতাঁত কাজে নিয়োজিত প্রীতি বম বলেন, আমরা কোমরতাঁত বুননের কাজটি মা-বোনদের কাছে শিখেছি। এটি আমাদের বম সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য। বান্দরবানে সরকারিভাবে তাঁত বুনন কাজের যদি একটি ট্রেনিং সেন্টার বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করে দেওয়া হতো, তাহলে আমরা আরও বেশি অভিজ্ঞ হতে পারতাম।

তাঁত কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লালজিং নোয়াম বম বলেন, পাহাড়ি নারীদের হাতে বুনন করা তাঁতের কাপড়গুলো বিভিন্ন পাড়া থেকে সংগ্রহ করে স্থানীয়ভাবে বিক্রি করি। সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পেলে তারা দেশের বিভিন্ন জেলা এবং দেশের বাইরেও রপ্তানি করতে পারতেন। এতে তাঁত শিল্পের আরও বেশি প্রসার হতো।

বান্দরবান সদরের সুয়ালক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উক্যনু মারমা ব‌লেন, আমার ইউনিয়নের শেরন পাড়ার বাম নারীরা কোমরতাঁত বুননে খুবই আগ্রহী। সরকারিভাবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের গড়ে তোলা হলে, তারা দেশের সম্পদে রূপান্তরিত হবে। তবে বালাঘাটায় তাঁত বোর্ড থাকলেও সেখান থেকে ঋণ ছাড়া তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না বলে শুনে‌ছি।

বান্দরবানের বালাঘাটা তাঁত বোর্ড বেসিক সেন্টারের লিঁয়াজো কর্মকর্তা মিল্টন আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাহাড়ের ৯০ শতাংশ নারী কোমরতাঁত বোনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। ইতোমধ্যে দাঁতভু থেকে ৬১০ জন নারীকে ২ কোটি ৫২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ক্ষুদ্র ঋণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। অফিসে একমাত্র আমিই কর্মরত আছি। পাহাড়ে কোমরতাঁত বুনন কাজে সংশ্লিষ্টদের সরকারি সেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে।

Exit mobile version