ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড : খোলা আকাশের নিচে ৬শ রোহিঙ্গা পরিবার

fec-image

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সবকিছু হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর দিন কাটছে ৬০০ রোহিঙ্গা পরিবারের। এনজিও, আইএনজিওরা খাদ্য, চিকিৎসা সহায়তা দিয়ে গেলেও মাথা গোছানোর কোন ব্যবস্থা হয়নি বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা।

অগ্নিকাণ্ডে সর্বশান্ত শফিউল্লাহকাটা বি-১ ব্লকের বাসিন্দা মিয়ানমারের মংডু কাইন্ডাপাড়ার মৃত রহমত উল্লাহ’র ছেলে আবুল কাশিম(৬৫) বলেন, সোমবার দুপুর থেকে খাদ্য, বস্ত্র এবং চিকিৎসা সহায়তা পেলেও মাথা গোছানোর জন্য কোন ধরনের সহযোগিতা পাইনি। একদিকে প্রচণ্ড শীত অপরদিকে গৃহহারা অবস্থায় চরম কষ্টে আছি।

একই ব্লকের বাসিন্দা মিয়ানমারের মংডু মরিচ্যাবিলের মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে শফি আলম (৫০) বলেন, সংঘঠিত অগ্নিকাণ্ডে সর্বস্ব পুড়ে ছাই হয়েছে আমাদের। পরনের কাপড় ছাড়া আর কিছুই নেই। পরিবারের ২ ছেলে ৩ মেয়ে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসে আছি। রোববার থেকে কিছু খাইনি, সোমবার দুপুরে এনজিও সংস্থা পক্ষ থেকে একটি খাবারের প্যাকেট পেয়েছি। রাতে খোলা আকাশের নিচে ছাড়া থাকার কোন ব্যবস্থা নেই। এনজিওরা খাবার, চিকিৎসা সহায়তা দিয়ে গেলেও ঘর নির্মাণের কোন মালামাল এখনো পর্যন্ত দেয়নি।

ওই ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা নুরুল বশর বলেন, আগুনে পুড়ে ছাই রোহিঙ্গাদের বসতি। নেই কোন কাপড় চোপড়, আসবাবপত্র কিংবা খাদ্যসামগ্রী। শুধু কোনো রকম পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপদ আশ্রয় গিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন রোহিঙ্গারা। সকাল না হতে রোহিঙ্গারা ফিরছেন সেই পুড়ে যাওয়া বসতিতে। পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া বসতিতে খুঁজে বেড়াচ্ছেন কিছু পাওয়া যায় কিনা। কিন্তু আগুনে কেড়ে নিয়েছে তাদের সব সম্বল। শুধু দাঁড়িয়ে আছে বসতির পিলারগুলো।

আইওএম এর ন্যাশনাল কমিউনিকেশন অফিসার তারেক মাহমুদ বলেন, কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিরীক্ষা করা হচ্ছে এবং সমন্বয় করে দ্রুত ঘর নির্মাণ থেকে শুরু সব সমস্যার সমাধান করা হবে বলে জানান তিনি।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের সময় পুড়ে গেছে স্থানীয়দের ১০টি ঘর। এনজিও, আইএনজিওদের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গারা সকল ধরনের সাহায্য সহযোগিতা পেলেও স্থানীয়রা তেমন সহযোগিতা পাচ্ছেনা বলেনা অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় শাহিনা আক্তার।

সে আরো বলেন, মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়লে কোন রকম প্রাণ বাঁচাতে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাই। যার ফলে বাড়ীর আলমিরায় থাকা নগদ টাকা, আসবাবপত্র, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, পাসপোর্টসহ সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন স্থানীয়রা।

ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, অগ্নিকাণ্ডের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে বসবাসরত স্থানীয়দের ১০টি বাড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে আরও ২টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদেরকে ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে খাদ্য এবং প্রতি পরিবারের জন্য ৩টি কম্বল দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত এনজিও, আইএনজিও গুলো তাদের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। দ্রুত স্থানীয়দের তালিকা তৈরি করে তাদের ঘরবাড়ি নির্মাণের ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।

অন্যদিকে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. শামছু দ্দৌজা জানান, কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। তবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আশাকরি কোন ধরনের সমস্যা পড়বেনা রোহিঙ্গারা।

উল্লেখ্য, রোববার বিকেল ৫টার দিকে শফিউল্লাহকাটা ১৬ নাম্বার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বি-১ ব্লকের আবু সৈয়দের ঘর থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। এর আগে গত বছরের ২২ মার্চ উখিয়ার তিনটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। যে ঘটনায় প্রায় দশ হাজারের বেশি ঘর পুড়ে যায়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় দুই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা এবং এসময় মারাযায় ১১ জন রোহিঙ্গা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন