ফ্যাসিস্ট আমলের বৈষম্য ব্যবস্থাকেই টিকিয়ে রাখার অভিযোগ

খাগড়াছড়িতে জনবল নিয়োগে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিদের অধিকার খর্বের পায়তারা

fec-image

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ নিয়ন্ত্রিত খাগড়াছড়ি বাজার ফান্ডের অফিস পরিচালনার জন্য বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিদের অধিকার খর্বের পায়তারা চলছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইনের বিধান অনুসরণ করছে না জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ।

প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ও বিধি-প্রবিধানে জনবল নিয়োগ সংক্রান্ত অগ্রাধিকারে সংখ্যাধিক্যের বিষয়টি আমলে নেয়া হয়নি। জনসংখ্যায় খাগড়াছড়িতে বাঙালিরা এগিয়ে থাকায় সচেতনভাবে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে এই নিয়োগের ক্ষেত্রে কেবল উপজাতি বাসিন্দাদের অগ্রাধিকারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাজার ফান্ডের প্রশাসক জিরুনা ত্রিপুরা ৪ জুন ২০২৫ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেছেন এবং ১২ জুন ২০২৫ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তির শর্তাবলির সাত নম্বর ক্রমিকে বলা হয়েছে যে, ‘নিয়োগের ক্ষেত্রে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন মোতাবেক অত্র জেলার উপজাতীয় স্থায়ী বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।’ এখানে আইন বলতে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ও বিধি-প্রবিধানসমূহকে বোঝানো হয়েছে। যেখানে জনবল নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে বলা হয়েছে যে, ‘অগ্রাধিকার সর্বশেষ আদম শুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যার আনুপতিক হারে নির্ণিত হবে।’

এক সময় সম্প্রদায় ভিত্তিক সদস্য সংখ্যানুযায়ী কোটা বরাদ্দ রাখার বিধান ছিল। যা আইনের সংশোধন দ্বারা বিলুপ্ত করা হয় এবং ‘অগ্রাধিকার সর্বশেষ আদম শুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যার আনুপতিক হারে নির্ণিত হবে’ লাইনটি সংযোজন করা হয়। এখানে জনসংখ্যা বলতে উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর জনসংখ্যা নয়। এই জনসংখ্যার অনুপাত পাহাড়ি-বাঙালি জনগোষ্ঠীর মোট জনসংখ্যার অনুপাত।

আইনে নিয়োগ সংক্রান্ত এই ধারায় ৯ এবং ৯ক. দ্বারা আইনের সংশোধনী নির্দেশ করে (এই প্রতিবেদনে সংযুক্ত ছবিটি দেখুন) এবং সংশোধনীর বিলুপ্ত এবং সংযোজিত নির্দেশনা আমলে না নিয়ে কেবল উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের অগ্রাধিকারের কথা উল্লেখ করে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে বলে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর অভিযোগ।

সর্বশেষ ২০২২ এর জনশুমারি অনুযায়ী খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মোট জনসংখ্যা ৭ লাখ ১৪ হাজার ১১৯ জন। এর মধ্যে বাঙালি জনগোষ্ঠী ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৭২৯ জন এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩৯০ জন। অর্থাৎ বাঙালি জনগোষ্ঠিরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং যা জেলার মোট জনসংখ্যার ৫১ শতাংশেরও বেশি।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, জনসংখ্যার ভিত্তিতে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করলে বাঙালি প্রার্থীদেরই নিয়োগে অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা। কিন্তু নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্তে বাস্তবে ঘটছে ঠিক এর উল্টো। নিয়োগের ক্ষেত্রে শুধু উপজাতীয়দের অগ্রাধিকারের বিষয়টি উল্লেখ করে বর্তমান বৈষম্যহীন বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট আমলের বৈষম্য ব্যবস্থাকেই টিকিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে।

আইনের বিধান পাশ কাটিয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে উপজাতিদের জন্য এ ধরনের অগ্রাধিকারের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকলে পাবর্ত্য অঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিরা প্রতিটি ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার হবেন বলে মনে করছেন তারা।

চব্বিশের রক্তক্ষয়ী লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয়া নতুন বাংলাদেশে সব নাগরিকের মতো পার্বত্যাঞ্চলের মানুষেরাও ন্যায্য অধিকার চায়। কোনো জাতিগোষ্ঠীকে অবিচারে রাখা যেমন অন্যায়, তেমনি সংখ্যাগরিষ্ঠের অধিকার খর্ব করাও অসাংবিধানিক এবং চরম বৈষম্য বলে মনে করছেন তারা। কেবল জনবল নিয়োগ নয়, নাগরিক জীবনের প্রতিটি সেবায় জেলা পরিষদের বৈষম্যহীন মনোভাব ও আচরণ আশা করে পার্বত্যবাসী।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: খাগড়াছড়ি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন