খাগড়াছড়িতে ফুটবলে কিশোর-কিশোরীদের মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ ক্যাম্প

fec-image

পাহাড়ি জনপদ খাগড়াছড়ি যেন ফুটবলের নতুন স্বপ্নে বিভোর। জেলার ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে জেলা পর্যায়ের অনূর্ধ্ব-১৫ কিশোর-কিশোরীদের এক মাসব্যাপী ফুটবল প্রশিক্ষণ। জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের যৌথ আয়োজনে এই প্রশিক্ষণ ক্যাম্প যেন পাহাড়ি তরুণ-তরুণীদের মধ্যে জাগিয়ে তুলেছে এক নতুন প্রত্যয়।

খাগড়াছড়ি জেলা স্টেডিয়ামের সবুজ মাঠে সকাল-সন্ধ্যা চলছে টগবগে কিশোর-কিশোরীদের দৌড়ঝাঁপ, গোল দেওয়ার উল্লাস, আর কোচের কড়া নির্দেশনায় ট্যাকটিক্যাল অনুশীলন। কেবল খেলা শেখানো নয়—এই প্রশিক্ষণে গুরুত্ব পাচ্ছে শৃঙ্খলা, নেতৃত্বগুণ, স্বাস্থ্য ও দলীয় চেতনার মতো গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোও।

প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছে জেলার নয়টি উপজেলার বিভিন্ন স্কুলের ৫০ জন কিশোর-কিশোরী। তাদের কারো হাতে এর আগে ফুটবলের ছোঁয়াও লাগেনি, কেউ বা স্কুল টিমে খেলেছে,কিন্তু সবার চোখে মুখে একটাই স্বপ্ন: জাতীয় দলে খেলা।

মহালছড়ি থেকে আসা ১৪ বছরের রাখি ত্রিপুরা জানায়, “আমি ছোটবেলা থেকেই খেলতে ভালোবাসি। কিন্তু কখনো পেশাদার প্রশিক্ষণের সুযোগ পাইনি। এই ক্যাম্প আমাকে নতুন সাহস দিয়েছে।”

প্রশিক্ষণার্থী পানতৈ ত্রিপুরা বলে, “একদিন জাতীয় দলে খেলব, এই স্বপ্ন এখন অনেক বাস্তব মনে হয়।”

পাহাড়ের প্রতিভা খুঁজে আনতে চায় আয়োজকরা : জেলা ক্রীড়া সংগঠক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, পাহাড়ে অনেক প্রতিভা আছে। শুধু সুযোগ আর সঠিক দিকনির্দেশনা হলেই এদের মধ্য থেকেই বেরিয়ে আসবে ভবিষ্যতের সেরা খেলোয়াড়রা।”

অভিভাবকদের চোখে এটি এক বিপ্লব অভিভাবকেরা মনে করছেন, এই ধরনের প্রশিক্ষণ তাদের সন্তানদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর পাশাপাশি খেলাধুলার মাধ্যমে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশেও ভূমিকা রাখবে। এক অভিভাবক বলছিলেন, “শুধু পড়াশোনায় নয়, খেলাধুলায়ও আমাদের ছেলেমেয়েরা এগিয়ে যাক, এটা আমরা চাই।”

সুবিধা, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ: প্রমিলা ফুটবল কোচ জ্যোতিষ বসু ত্রিপুরা জানান, এই প্রশিক্ষণ হবে একটি রোল মডেল এবং ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে, হয়তো আন্তঃজেলা বা জাতীয় পর্যায়ে খাগড়াছড়ির খেলোয়াড়দের নিয়ে ভাবা যাবে।এই উদ্যোগ থেকে আমরা জাতীয় পর্যায়ের প্রতিভা বের করে আনতে চাই।

স্থানীয় অভিভাবকেরা জানান, এ ধরনের উদ্যোগ তাদের সন্তানদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করছে।

সাফজয়ী নারী ফুটবল দলের সাবেক খেলোয়ার আনুচিং মগিনী ও আনাই মগিনী বলেন,আমাদের সময় এইরকম প্রশিক্ষণের সুযোগ ছিলোনা। আমাদের সময় মাসব্যাপি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে আমরা ফুটবলে আরও ভালো করতে পারতাম।

তবে নতুনদের জন্য এটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা হবে। এই প্রশিক্ষণটি ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে গেলে আমাদের খাগড়াছড়ি থেকে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়ার উঠে আসবে।

জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ জানান,এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে শুধু খেলা নয়, শিখানো হচ্ছে শৃঙ্খলা,দলগত মনোভাব এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা। আয়োজকরা জানান, ভবিষ্যতে এই প্রশিক্ষণ আরও নিয়মিত এবং বিস্তৃত আকারে চালানো হবে”। এই প্রশিক্ষণ জেলার ফুটবলাররা আসুক। তাই আমরা বাছাই করে ৫০জনকে প্রশিক্ষণের সুযোগ দিয়েছি।

জেলা ক্রীড়া সংস্থা’র আহ্বায়ক ও জেলা পরিষদের সদস্য মাহাবুব আলম বলেন, একসময় পাহাড়ের খেলাধুলা সীমাবদ্ধ ছিল স্থানীয় টুর্নামেন্ট আর উৎসব কেন্দ্রিক আয়োজনের মধ্যেই।

কিন্তু এই প্রশিক্ষণ ক্যাম্প সেই সীমা ভেঙে দিয়েছে। এটি কেবল একটি ক্যাম্প নয়, বরং এক নতুন যাত্রার সূচনা যে যাত্রা পাহাড়ের মাটিতে গড়ে তুলতে পারে বাংলাদেশের পরবর্তী ফুটবল তারকাদের।

খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন,খাগড়াছড়ির মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন উদ্যোগ পাহাড়ের কিশোর-কিশোরীদের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।

এই রকম দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ ধারাবাহিকভাবে করার জন্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে যা করার প্রয়োজন,সবই করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: খাগড়াছড়ি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন