খাগড়াছড়িতে সহিংসতার ঘটনায় ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন, মামলা
খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের গণপিটুনিতে শিক্ষক নিহত ও সংঘটিত সহিংস ঘটনায় ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারের চিন্তা-ভাবনা চলছে জানিয়েছেন প্রশাসন। শিক্ষার্থী জানিয়েছে, তাকে ধর্ষণ করা হয়নি। এদিকে বিএনপির দাবী আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে পাহাড়ে সহিংসতা সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়েক-সম্প্রীতি নষ্ট করার ষড়যন্ত্র করছে।
মঙ্গলবার একই প্রতিষ্ঠানের ৭ম শ্রেণির ত্রিপুরা এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ এনে পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের ইন্সট্রাক্টর ও বিভাগীয় প্রধান শিক্ষক আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোহেল রানাকে পিটিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনার জেরে শহরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। চলে সংর্ঘষ,ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিকাল ৩টা থেকে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা ও পৌর শহরে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন। কিন্তু তা সত্ত্বেও সন্ধ্যা পরও শহরের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একদল দুর্বৃত্ত সন্ধ্যার পরও ভাংচুর ও লুটপাট চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে রাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের পর পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।
সহিংসতার জেরে দোকানপাটে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা।
এদিকে বুধবার সকালে খাগড়াছড়ি শহরের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মো: সহিদুজ্জামান ও পুলিশ সুপার মোধ আরেফিন জুয়েল । এ সময় দুই প্রশাসনের কর্মকর্তা জানান, ঘটনায় চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ধর্ষণ ও পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে।
এদিকে ধর্ষনের অভিযোগে শিক্ষককে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হলেও শিক্ষা বলছে,তাকে ধর্ষন করা হয়নি।
খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এন আবছার জানান, ভীতিকর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে মঙ্গলবার রাতে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভূইয়ার পক্ষ থেকে কোন উস্কানীতে পা না দিয়ে পাহাড়ি-বাঙালী সবাইকে নিরাপদে বাড়ীতে থাকার আহবান জানিয়ে মাইকিং করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন,শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের উগ্র পাহাড়ি ও বাঙালিদের অংশটি পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর পায়তারা করছে।
২০২১ সালে শিক্ষক সোহেল রানার বিরুদ্ধে এক পাহাড়ি ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা করেছিল। ওই ছাত্রী আদালতে এসে পাহাড়ি একটি সংগঠনের চাপে মামলা করেছে মর্মে সাক্ষ্য দিলে সোহেল রানা খালাস পান এবং চাকরিতে যোগদান করেন। এর পর থেকে শিক্ষক সোহেল রানাকে প্রত্য্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিল পাহাড়ি ছাত্রছাত্রীরা।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি শহরের নোয়াপাড়া মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মামুন নামে এক ফার্নিচার ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যার জেরে সহিংসতায় ৩ জন নিহত হয়। তার রেশ না না কাটতে পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের পিটুনিতে প্রাণ হারালো শিক্ষক সোহেল রানা।