খাগড়াছড়িতে অবরোধ প্রতিরোধে মিছিল ও ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস পালন

fec-image

খাগড়াছড়িতে বিএনপির ডাকা অবরোধ প্রতিরোধে মিছিল বের করা হয়। অপরদিকে বিএনপির নেতা ওয়াদুদ ভূঁইয়ার বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও পুলিশ মামলা গ্রহণ না করার প্রতিবাদে ২৪ ঘন্টা অবরোধের ডাকে সকালে কিছু কিছু জায়গায় পিকেটিং, গাছ কেটে, টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তায় অবরোধের সূচনা করলেও ১১টার পর থেকে জেলা শহরে সুনসানের বিপরীতে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হতে দেখা যায়। দুর্ভোগে পড়া পর্যটকদের মাঝে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে দেখা যায়। আওয়ামীলীগের নেতারা বলেন, বিএনপির ২৪ ঘন্টার অবরোধ এ জেলার জনগণ প্রত্যাখান করেছে।

পরে দ্বিতীয় ধাপে “জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু” দলীয় স্লোগানকে সামনে রেখে ৭ জুন বাঙ্গালির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে র‌্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার (৭ জুন) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয় (দলীয় কার্যালয়) থেকে র‌্যালি শুরু করে শাপলা চত্বর হয়ে আবার দলীয় কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। মিছিল ও র‌্যালি শেষে ঐতিহাসিক ৬ দফা উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয়। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু।

ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তারা জানান, আজ ৭ই জুন ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ৬ দফা আন্দোলন ১৯৬৬ সালের ৭ জুন নতুন মাত্রা পায়। বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছয় দফা দাবির পক্ষে দেশব্যাপী তীব্র গণআন্দোলনের সূচনার দিন। ১৯৬৬ সালের এ দিনে বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন স্পষ্টত নতুন পর্যায়ে উন্নীত হয়। এর মধ্য দিয়ে রচিত হয় স্বাধীনতার রূপরেখা। ৬ দফাভিত্তিক আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়।

তারা বলেন, দুঃশাসন থেকে মুক্তির দিশারী হিসাবে ছয় দফা দাবি প্রণয়ন করে জনগণের সামনে বাংলার মানুষের মুক্তির সনদ হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। এর মধ্য দিয়েই বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন স্বাধীনতা-সংগ্রামে রূপ নেয়। ছয় দফা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আসে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১১ দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং সর্বশেষ বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তাসখন্দ চুক্তিকে কেন্দ্র করে লাহোরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের সাবজেক্ট কমিটিতে ৬ দফা উত্থাপন করেন এবং পরের দিন সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে ৬ দফাকে স্থান দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর অনুরোধ উপেক্ষা করে ৬ দফার প্রতি আয়োজকপক্ষ গুরুত্ব না দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করে। এর প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু ওই সম্মেলনে আর যোগ দেননি। তবে লাহোরে অবস্থানকালেই ৬ দফা উত্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু।

৬ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শুরু হয় আওয়ামীলীগের আন্দোলন। হরতালও ডাকা হয়। হরতাল চলাকালে নিরস্ত্র জনতার ওপর পুলিশ ও তৎকালীন ইপিআর কর্তৃক গুলিবর্ষণ করা হয়।

৬ দফাভিত্তিক ১১ দফা আন্দোলনের পথপরিক্রমায় শুরু হয় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান। সর্বোপরি ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে বাংলার জনগণ আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীদের একচেটিয়া রায় প্রদান করেন। জনগণ বিজয়ী করলেও স্বৈরাচারী পাকিস্তানি শাসকরা বিজয়ী দলকে সরকার গঠন করতে না দিলে বঙ্গবন্ধু জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। পূর্ববাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তানে দুটি পৃথক ও সহজে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা থাকবে। সরকারের কর ও শুল্ক ধার্য ও আদায় করার দায়িত্ব প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকাসহ দুই অঞ্চলের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার আলাদা হিসাব থাকবে এবং পূর্ববাংলার প্রতিরক্ষা ঝুঁকি কমানোর জন্য এখানে আধাসামরিক বাহিনী গঠন ও নৌবাহিনীর সদর দফতর স্থাপনের দাবি জানানো হয়।

এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি কল্যাণ মিত্র বড়ুয়া, সহ-সভাপতি মংক্যচিং চৌধু্রী, উপ-দপ্তর সম্পাদক মো. নুরুল আজম, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জুয়েল চাকমা, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সনজীব ত্রিপুরা, দীঘিনালা উপজেলার চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. হাশেম প্রমুখ। এছাড়াও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কে এম ইসমাইল হোসেনসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন