নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি:
খাগড়াছড়ি জেলা সদরের স্বনির্ভর এলাকায় পার্বত্য চুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও নিরাপত্তাবাহিনীর সংঘর্ষে পাঁচ পুলিশসহ অন্তত ১৪জন আহত হয়েছে।
বুধবার(৭মার্চ) সকাল পৌনে ১০টার দিকে ইউপিডিএফ’র তিন সংগঠনের মুখোশ প্রতিরোধ মিছিলে বাধা দিতে গেলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের দিনে খাগড়াছড়িতে পুর্বানুমতি ব্যতিত ইউপিডিএফ কর্তৃক সমাবেশ ডেকে পুলিশের উপর হামলা ও তাণ্ডব সৃষ্টির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও চারটি বাঙালী সংগঠন পৃথক বিবৃতিতে দাবী করে, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের গৌরব ও ভাবমর্যাদা ভুলুণ্ঠিত করতেই জাতীয় সার্বভৌমত্ব বিরোধী এই সংগঠনটি পরিকল্পিতভাবে শহরে তাণ্ডব সৃষ্টি করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর এলাকায় ইউপিডিএফ (প্রসীত) ও ইউপিডিএফ (বর্মা) দুই গ্রুপের পূর্বঘোষিত পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি থাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছিলো। সকাল পৌনে ১০টার দিকে ইউপিডিএফ’র প্রসীত গ্রুপের কর্মীরা লাঠি মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়।
এ সময় ইউপিডিএফ কর্মীরা গুলতি, ইটপাটকেল ও লাঠিসোটা নিয়ে পুলিশের উপর হামলা চালালে পিছু হটে। এক পর্যায়ে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ সময় ইউপিডিএফ কর্মীদের ছোঁড়া গুলির আঘাতে এসআই সাব্বীর হোসেন, সৈনিক সজীব বড়ুয়া, মোহাম্মদ আলীসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়।
অপর দিকে ইউপিডিএফ’র সংগঠক মাইকেল চাকমার অভিযোগ নিরাপত্তা বাহিনীর টিয়ারশেল ও রাবার বুলেটে তাদের ৯ কর্মী আহত হয়েছে। সংঘর্ষের আতঙ্কে স্বনির্ভর বাজারের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।
খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমএম সালাউদ্দিন জানান, অনুমতি না থাকায় ইউপিডিএফ(প্রসীত) গ্রুপের কর্মীদের মিছিলে বাধা দিতে গেলে তারা পুলিশের উপর হামলা চালায়। পুলিশ বাধ্য হয়ে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে তিনি কত রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোঁড়া হয়েছে বলতে পারেনি।
বিভিন্ন সংগঠনের নিন্দা ও প্রতিবাদ
ঐতিহাসিক ৭ মার্চের দিনে খাগড়াছড়িতে পুর্বানুমতি ব্যতিত ইউপিডিএফ কর্তৃক সমাবেশ ডেকে পুলিশের উপর হামলা ও তাণ্ডব সৃষ্টির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও চারটি বাঙালী সংগঠন পৃথক বিবৃতিতে দাবী করে, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের গৌরব ও ভাবমর্যাদা ভুলুণ্ঠিত করতেই জাতীয় সার্বভৌমত্ব বিরোধী এই সংগঠনটি পরিকল্পিতভাবে শহরে তাণ্ডব সৃষ্টি করেছে।
আওয়ামী লীগের নিন্দা
ঐতিহাসিক ৭ মার্চের জাতীয় কর্মসূচি বানচালের উদ্দেশ্যে ইউপিডিএফ’র পরিকল্পিত বিশৃঙ্খলা অপচেষ্টা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগ।
বুধবার(৭মার্চ) বিকালে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক চন্দ্র শেখর দাশ প্রেরিত এক সাংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ অভিযোগ করেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, সারা দেশের ন্যায় খাগড়াছড়িতেও পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি উপলক্ষে জেলা শহরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের বিশ্ব স্বীকৃতি এবং যথাযোগ্য মর্যাদায় ৭ মার্চ পালনে দিনভর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির সূচনা করা হয়। এ উপলক্ষে জেলা শহরের আশেপাশে থেকে বিপুল পরিমাণ জনসাধারণ যোগ দিতে বিভিন্ন পরিবহনে যাত্রা শুরু করে।
কিন্ত জাতীয় এই কর্মসূচির কথা আগে থেকেই অবগত থাকার পরও ইউপিডিএফ জাতির পিতার মহতী এই আয়োজনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অপ-উদ্দেশ্যে কোন প্রকার বৈধ অনুমতি ছাড়াই স্বনির্ভর এলাকায় সভার নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। শুধু তাই নয়, তারা নারী ও শিশুদের ব্যবহার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে বাধা সৃষ্টি করে এবং উস্কানিমূলক হামলা চালায়। খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এলাকার শান্তি ও উন্নয়নের স্বার্থে হঠকারী কর্মসূচির নামে জনগণের স্বাভাবিক জীবন-যাপনে বিঘ্ন সৃষ্টি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চে ইউপিডিএফ কর্মসূচির আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরীর নিন্দা
গৌরবের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ কর্মসূচির নিন্দা জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী।
তিনি সকালে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত র্যালি উত্তর আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ নেতা নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, একটি জাতীয় দিবসে ইউপিডিএফ পূর্বানুমতি ছাড়া কর্মসূচি দিয়ে খাগড়াছড়ির শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিকে অশান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে জাতীয় দিবসে এ ধরনের কর্মসূচি পালন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
চার বাঙালী সংগঠনের নিন্দা
খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর এলাকায় ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের গুরুপ্তপূর্ণ দলিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ভাষণের বিশ্ব স্বীকৃতির দিনে নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকা ওসিসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যের উপর ইউপিডিএফ অতর্কিত হামলা ও নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে পার্বত্য অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক মো. মাঈন উদ্দীন ও সদস্য সচিব এস এম মাসুম রানা যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চ এমন একটি দিন যে দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং আজকের দিনটিকে ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃতি দেওয়ায় পুরো দেশ যখন যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনে ব্যস্ত তখনই খাগড়াছড়িতে এ দিবসটিকে ভণ্ডুল করার পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর এলাকায় উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ ইউপিডিএফ স্বাধীন জুম্মল্যান্ড করার দাবিতে কথিত সমাবেশ ডাকে। এবং ৭ মার্চের র্যালিতে সাধারণ মানুষকে যেতে বাধা প্রদান করে।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের নিষেধ করলে ইউপিডিএফের সদস্যরা সাধারণ মানুষ ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতেই প্রমাণ হয় এ সকল উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীগুলো তাদের কথিত জুম্মল্যান্ড প্রতিষ্ঠার দাবিতে পাহাড়ে অতীতের ন্যায় ইস্যু সৃষ্টি করে পাহাড়কে অশান্ত করতে চায়। এ হামলা তারই পূর্ব পরিকল্পনার অংশ।
সংগঠনটির নেতৃদ্বয় আরও বলেন, আমরা পার্বত্য অধিকার ফোরাম, বৃহত্তর পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ, পার্বত্য নারী অধিকার ও পার্বত্য যুব অধিকার এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একই সাথে হামলাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় এনে পাহাড়কে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।