খাগড়াছড়িতে একই ঘটনায় বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে ৬ মামলায় আড়াই হাজার আসামি

খাগড়াছড়িতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘটিত একটি ঘটনায় এ পর্যন্ত মামলা ৬টি। আর আসামি ৭ শত ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১হাজার ৮শ ৫৬ জন। মামলায় বিএনপির জেলার শীর্ষ নেতা ওয়াদুদ ভূইয়া থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যায়ের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাংবাদিক, শিক্ষক. পবিত্র হজ পালনরত ব্যক্তিকেও আসামী হয়েছে। সে সাথে চট্টগ্রাম ও ফেনীর বাসিন্দারা মামলার আসামি হয়েছে। এহাজাভুক্তদের পাশাপাশি অনেক নিরহ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং হচ্ছে। অবশ্যই খাগড়াছড়িতে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মামলা নতুন কিছু নয়।
‘ওয়ান-ইলেভেন’ সরকারের আমল থেকে খাগড়াছড়িতে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অন্তত ৩শতাধিক মামলা হয়েছে। আসামীর সংখ্যা অন্তত ৩০ হাজার। প্রতিদিন আদালতের বারান্দায় কাটে বিএনপির নেতাকর্মীদের সময়।
পাল্টা-পাল্টি কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুলাই খাগড়াছড়িতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ঐ দিন সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে দুপুর পৌনে ১২ টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলাকালে দুই সংগঠনের অফিসে পাল্টা-পাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয়ের নেতাকর্মী ছাড়াও পুলিশ ও সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়। পুলিশ টিয়ারসেল ছুড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আধা সামরিক বাহিনী বিজিবি নামতে হয়।
এ সংঘর্ষের জেরে এ পর্যন্ত খাগড়াছড়ি থানায় বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে ৬টি মামলা হয়েছে। একই ঘটনায় আরো মামলা পক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। আইনজ্ঞদের মতে, একই দিন,একই সময়,একই ঘটনাস্থলে একই আসামীর নামে একাধিক মামলা চলতে পারে না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঘটনার একদিন পর খাগড়াছড়ি সদর থানার এএসআই মিনহাজুল আবেদীন বাদী প্রথম মামলাটি দায়ের করেন। জিআর নং ১০৪/২৩,তারিখ ১৯/০৭/২০২৩ইং মামলায় খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদ এম এন আবছারসহ ১৫৭ জনের নাম উল্লেখ আরো ৭শতাধিক অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামী করা হয়। মামলায় খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য,খাগড়াছড়ি টিভি জার্নালিস্ট্ এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক ও বাংলাভিশনের জেলা প্রতিনিধি এইচ এম প্রফুল্ল-কেও আসামি করা হলে সাংবাদিক মহলে প্রতিবাদের ঝড় উঠে।
খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সভাপতি জীতেন বড়ুয়া ও সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের মুহাম্মদ এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেন, গত মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) খাগড়াছড়ি শহরে পাল্টাপাল্টি কর্মসুচী পালনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষ,ধাওয়া পাল্টার ঘটনায় পেশাগত দায়িত্বপালনকারী সাংবাদিক এইচ এম প্রফুল্লকে পুলিশ বাদী হয়ে দায়েরকৃত মামলায় আসামি করায় খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাব গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
বিবৃতিতে সাংবাদিক এইচ এম প্রফৃল্ল’র নামে পুলিশের দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার না হলে বৃহত্তর কর্মসূচী ঘোষনার হুমকি দেন।
সাংবাদিকের প্রতিবাদের মুখে তৎকালীন পুলিশ সুপার মো. নাইমুল হক সাংবাদিক এইচ এম প্রফুল্ল’র দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো প্রত্যাহার হয়নি।
একই ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল আবছার চৌধুরী ওরফে শামীন চৌধুরী বাদী হয়ে ২১ জুলাই অপর মামলাটি দায়ের করেন। জিআর নং ১০৬/২০২৩ইং মামলায় খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূইয়াসহ ৩২৭ জনের নাম উল্লেখসহ আরো ৭ শতাধিক অজ্ঞাত ব্যাক্তিকে আসামি করা হয়। একই মামলায় জেলার পানছড়ি ইসলামিয়ার সিনিয়র আমিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান অলিকে ২৯২ নং আসামি করা হয়। ঐ মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল কাসেম জানান, শিক্ষক রাশেদুজ্জামান অলি ঐ দিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত মাদ্রাসায় উপস্থিত ছিলেন।
একই ঘটনায় একই ঘটনাস্থল দেখিয়ে গত ৩১ জুলাই খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী আরো একটি মামলা দায়ের করেন। খাগড়াছড়ি সদর থানায় দায়েরকৃত জিআর নং ১১১/২০২৩ মামলায় খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূইয়াসহ ১১৬ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ৩ শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। এ মামলায় ৮নং আসামি করা হয় আবুল কালাম আজাদকে।
আবুল কালাম আজাদ জানান, তিনি এ সময় সৌদি আরবে পবিত্র হজ পালন করছিলেন। ঘটনার দুইদিন পর ২০ আগস্ট তিনি দেশে ফিরেন।
একই ঘটনার প্রায় দেড় মাস পর গত ৩১ আগস্ট জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক নুরুল আজম বাদী হয়ে আরো একটি মামলা দায়ের করেন। জিআর নং ১২৮/২০২৩ ইং মামলায় খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূইয়াসহ ১১২ জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাত ৮০ জনকে আসামী করা হয়। এছাড়া একই দিনের একই ঘটনায় একই সময় ও একই ঘটনাস্থল দেখিয়ে টিকো চাকমা বাদী হয়ে গত ২০ জুলাই খাগড়াছড়ি সদর থানায় জিআর নং ১০৫/২০২৩ ইং মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক এম এন আবছারসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ৮০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। এছাড়াও একই ঘটনায় জনৈক দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে গত ২৭ আগস্ট খাগড়াছড়ি আমলী আদালতে আরো একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় খাগড়াছড়ি জেলা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক বাপ্পি দাশসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৬ জনকে আসামি করা হয়।
একই দিন এইক ঘটনায় একাধিক মামলা দায়ের প্রসঙ্গে খাগড়াছড়ি সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান বলেন, ঘটনা একটি হলেও ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক ব্যক্তি মামলা করতে পারেন।
তবে খাগড়াছড়ি জেলা আইনজীবি সমিতির সাধারন সম্পাদক এডভোকেট আব্দুল মালেক মিন্ট বলেন, এটা আইনসিদ্ধ নয়। একই ঘটনা, একই সময়, একই আসামি ও ঘটনাস্থল একই ক্ষেত্রে একাধিক মামলা চলতে পারে না। সেক্ষেত্রে একই ঘটনায় একাধিক মামলা হলে প্রথম দায়েরকৃত মামলাটির বিচার চলবে। যা ডিএলআর-৬৩,পাতা নং ২০৪-এ উল্লেখ রয়েছে।
তিনি বলেন, চারটি মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভের পর একই ঘটনায় আরো দুটি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে অন্তত ৩০ জন। এখনো কারাগারে রয়েছে আরো কিছু নেতাকর্মী।