খাগড়াছড়িতে ছাদ ধস: প্রকল্পের ঠিকাদার কে জানেনা জেলা পরিষদ
খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের কেন্ডিলিবারের ছাদ ধসে দুই শ্রমিক নিহত ও ৫ শ্রমিক আহত হলেও ঠিকাদার লাপাত্তা। দুই দিনেও জেলা পরিষদের কোন কর্মকর্তা বলতে পারছেনা কে এই প্রকল্পের ঠিকাদার ও কত টাকার প্রকল্প।
তবে একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ২০১৮ সালের দিকে কয়েক কোটি টাকার পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ শুরু হয়। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে জনৈক উপজাতীয় ঠিকাদারের লাইন্সের বিপরীতে স্থানীয় প্রভাবশালী তিন নেতা নানা কৌশলে কাজ ভাগিয়ে নেন। কাজের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলেও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে দফায় দফায় সময় বাড়ানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ছাদ ঢালাইয়ের সময় কোন প্রকৌশলী উপস্থিত ছিলেন না। উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব নেওয়া সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের প্রাথমিক ধারণা, ছাদ ঢালাইয়ের সময় ঘটনাস্থলে কোন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন না। ঢালাইয়ে লোহার খুটির পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে ঠেস দেওয়া হয়েছিল। সেন্টারিং সিস্টেম ছিল ক্রটিপূর্ণ।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ’র সাথে রবিবার (৯ অক্টোবর) যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় বলতে পারেননি। তিনি এ সব তথ্য জানতে হলে সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন।
ঘটনার পর জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী তৃপ্তি শংকর চাকমার নম্বরে একাধিক বার কল দিলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। সহকারী প্রকৌশলী প্রশান্ত কুমার এবং জিকু চাকমার মোবাইলে কল দিলে তাদের নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। অবশ্যই ঘটনার প্রায় তিন ঘণ্টা পর খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু একটি কর্মসূচি বাদ দিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত পূর্ব দায়ীদের বিচার করা আশ্বাস দিয়েছেন। সে সাথে নিহত দুই শ্রমিকের পরিবারকে এক লাখ টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা, আহতদের সু-চিকিৎসা ও ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
উল্লেখ, শনিবার (৮ অক্টোবর) বিকাল পৌনে ৪টার দিকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নতুন প্রশাসনিক ভবনের কেন্ডিলিবারের ছাদ ধসে দুই নির্মাণ শ্রমিক নিহত ও অপর ৫ জন আহত হন। কিন্তু এ সময় ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে পাওয়া যায়নি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের কোন কর্মকর্তাকে।
এদিকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্মাণাধীন সম্প্রসারিত ভবনের কেন্ডিলিবারের ছাদ ঢালাই সময় নিহত প্রত্যেক পরিবারকে এক লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু ঘোষিত আর্থিক সহযোগিতার টাকা আজ রবিবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল্লাহ নিহতের পরিবারে নিকট হস্তান্তর করেন।
এ সময় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের জনসংযোগ কর্মকর্তা জনাব চিংলামং চৌধুরী ও সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আরিফুর ইসলামসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও দুর্ঘটনায় নিহত মো. সাইফুল ইসলাম শিকারের মরদেহ খুলনা বাগেরহাট চিতলমারীর কলিগাতীর মধ্য পাড়া পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য যাবতীয় খরচ খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ দেওয়া হয়। সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৫ জনের চিকিৎসা, ঔষধপত্র, খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল্লাহ।
খাগড়াছড়ি জেলাবাসী আশা করে জানান, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের কেন্ডিলিবারের ছাদ ঢালাইয়ে হতাহতের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে এবং দায়ীদের উপযুক্ত বিচার হবে। যাতে খাগড়াছড়িতে স্কুলের গেইট চাপায় শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের মতো ধামাচাপা পড়ে না যায়।