parbattanews

খাগড়াছড়িতে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতরা পেশাদার অপরাধী- এসপি খাগড়াছড়ি

রবিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশের আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলন

খাগড়াছড়িতে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নারীকে (২৬) গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িতরা পেশাদার অপরাধী। তাদের বিরুদ্ধে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন থানায় ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে। অস্ত্র, ডাকাতি, চুরি ও ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধে সাজাভোগ করেছে তারা। জেলখানায় থাকা অবস্থায় তাদের পরিচয় হয়। জেলখানা থেকে বের হয়ে আসামিরা সংঘবদ্ধভাবে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণ ও বাড়ি লুটপাটের ঘটনায় সাত আসামিকে গ্রেফতারের পর রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলেন এসব কথা বলেন খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল আজিজ। চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, কোন কোন ডাকাত প্রতিবন্ধী নারীকে তিনবারও ধর্ষণ করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো: আনোয়ার হোসেন বলেছেন, খাগড়াছড়িতে ডাকাতি ও গণধর্ষণের ঘটনায় কোন সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্য ছিল না। এটি ছিলো স্রেফ ডাকাতি ও গণধর্ষণের ঘটনা।

তিনি রবিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশের আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, অপরাধীদের কোন পরিচয় নেই। তাদের পরিচয় তারা অপরাধী। তাদের কোন জাত নেই। পুলিশ সে বিবেচনা মাথায় রেখে দ্রুত সময়ের মধ্যে ডাকাতি ও গণধর্ষণের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করেছে। তিনি কোন কোন মহল ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করেন।

অপরদিকে খাগড়াছড়িতে ডাকাতি ও প্রতিবন্ধী নারীকে গণধর্ষণের অভিযোগ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ৭ আসামি অপরাধ স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ মো: আব্দুল আজিজ।

তিনি সংঘটিত ঘটনাকে ন্যক্কারজনক উল্লেখ করে বলেন, ঘটনাটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি বলেই দায়ীদের চিহিৃত করে ইতিমধ্যে ৭ জনকে গ্রেফতারে সক্ষম হয়েছে। ডাকাতি ও প্রতিবন্ধি নারীকে গণধর্ষণের অভিযোগ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ৭ আসামি অপরাধ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দি দিতে রাজি হয়েছে।

 অন্য আসামিদেরও খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতারের অভিযান চলছে জানিয়ে বলেন, একাধিকবার ডাকাতি ও ধর্ষণের মামলায় এরা গ্রেফতার হয়েছিল। ডাকাতি ও গণধর্ষণের সাথে জড়িতরা পরস্পরের সাথে জেল খানায় পরিচয় হয়।

২০০৫ সালে বাবা ও ভাইকে হারানোর পর সৎ পিতা ও মায়ের সাথে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কের পাশে বলপাইয়া আদাম এলাকায় বাস করতো মানসিক ভারসাম্যহীন এ নারী। ১৬ বছর পর আবার তার উপর ঝড় বয়ে গেল।

বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে এই মানুষ রূপী নর-পশুরা বিন্দু লাল চাকমার ডাকাতির নামে তান্ডবলীলা চালায়। ৯ সদস্যের ডাকাত দলের সদস্যরা তাদের তিন জনকে হাত-মুখ বেধে স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোন সেট নিয়ে লুট করার পাশাপাশি পাশের একটি কক্ষে কক্ষে নিয়ে তার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মেয়েকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ভোররাতে পার্শ্ববর্তী লোকজন এসে তাদের উদ্বার করে পুলিশে খবর দেয়।

এ ঘটনায় ধর্ষিতা মা ২৪ সেপ্টেম্বর বিকালে ৯ অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ডাকাতির ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা করেন। পুলিশ মাত্র ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আসামিদের চিহিৃত করে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৭ আসামিকে গ্রেফতার ও ডাকাতির মালামালসহ ডাকাতির সময় ব্যবহৃত সিএনজি অটো রিক্সাটি উদ্ধার করেছে পুলিশ।

১৬৪ ধারা জবানবন্ধি দিতে আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে

গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, জেলার রামগড়ের মো: আমিন ওরফে নুরুল আমিন(৪০), দারোগা পাড়ার থেকে মো: অন্তর, জেলা সদরের কুমিল্লা টিলার মো: বেলাল হোসেন(২৩),গুইমারার বড় পিলাকের মো: ইকবাল হোসেন(২১) ও মো: শাহীন মিয়া(১৯),মাটিরাঙার আদর্শ গ্রামের মো: আব্দুল হালিম(২৮) এবং মুসলিম পাড়ার মো: আব্দুর রশীদকে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়। তাদের ১৬৪ ধারা জবানবন্দী দিতে আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।

এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন, খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: রশীদ, ডিবির ওসি তারেক মো: আব্দুল হান্নানসহ মাটিরাঙা, রামগড় ও গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাসহ পুলিশ সদস্যরা।

রবিবারও খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়েছে

ডাকাতি ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এক নারীকে গণধর্ষণের ঘটনায় রবিবারও খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়েছে। সকালে ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম ও মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল শেষে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন।

গণধর্ষণের শিকার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ওই নারীর মেডিক্যাল পরীক্ষার পর আদালতে ওই নারী ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।

Exit mobile version