খাগড়াছড়িতে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা সেবা, ঔষধ ও চশমা বিতরণ
মানুষের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ চক্ষু। দুর্গা দুর্গতিনাশিনী, সকল দুঃখ-দুর্দশার বিনাশকারিনী, দেবী দুর্গা হলেন শক্তির রূপ, তিনি পরমব্রক্ষ। শুভ মহালয়া, দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আমন্ত্রণের দিন। শনিবার ১৪ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে, বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। পার্বত্যাঞ্চলে সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের এ শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে আয়োজকদের অসাম্প্রদায়িক বর্ণিল নানা আয়োজনে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণে পরিণত হয় মিলন মেলায়। সার্বজনীয়তা রক্ষা এবং অশুভ শক্তির বিনাশ আর মানুষের মঙ্গল ও শান্তি কামনায় শারদীয় দুর্গাপূজা পাহাড়ের এক ঐতিহাসিক উৎসবে রূপ নেয়।
সার্বজনীন শারদীয় এ উৎসব উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও খাগড়াছড়িতে সনাতন সমাজকল্যাণ পরিষদ সদর কমিটির উদ্যোগে এবং চট্টগ্রামের লায়ন্স চক্ষু হাসপাতাল ও খাগড়াছড়ি চক্ষু হাসপাতালের সহযোগিতায় বিনামূল্যে প্রায় সাড়ে ৪শ রোগীকে চক্ষু চিকিৎসা সেবা, ঔষধ ও দরিদ্র চক্ষু রোগীদের বিনামূল্যে চশমা বিতরণ করা হয়েছে।
শনিবার (১৪ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টায় শহরের শহীদ কাদের সড়কস্থ শিশু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মানবসেবী এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, চক্ষু মানুষের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। যার চক্ষু নাই, সেই ব্যক্তির জীবন মূল্যহীন। শারদীয় দুর্গাপূজার মহালয়া উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এ বারও দরিদ্র ও অসহায় মানুষেদের জন্য খাগড়াছড়ি সনাতন সমাজকল্যাণ পরিষদ যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা খুবই প্রশংসনীয়। মানুষে মানুষে প্রেম, ভালোবাসা একে অপরের প্রতি আস্থা-বিশ্বাস, এলাকার শান্তি-সম্প্রীতি ও সার্বজনীয়তা রক্ষায় এধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মানুষের সেবা ও কল্যাণে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ মানুষ বা জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর। দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা সেবা, ঔষধ ও চশমা বিতরণ করা মানবসেবী মহৎ উদ্যোগ। এহেন মানব কল্যাণকর মহৎ উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে সকল প্রকার সহযোগীতার আশ্বাস দেন প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।
বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা সেবা নিয়ে ঔষধ ও চশমা পাওয়া মোছাম্মদ রিনা বেগম (৭৫), জলিকা ত্রিপুরা (৮০) বলেন, আমরা গরিব মানুষ টাকার অভাবে ৪-৫শ টাকা দিয়ে চোখের ডাক্তারও দেখাতে পারিনা ঔষধও খেতে পারি না, তায় এখানে আসছি ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ পাওয়ার আশায়।
মো. আব্দুল হাকিম (৬৫) ও ৮০ বছর উদ্ধ সুর রানী ত্রিপুরা বলেন, পাহাড়ে জুম চাষে কাজ করতে গিয়ে গ্রামের মানুষের কাছে শুনেছি দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রতিবছর টাকা ছাড়া ফ্রি চোখ পরীক্ষা, ঔষধ ও চশমাও নাকি দেয়, অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করছি আরো দুইদিন আগে এসে মানুষের কাছে জেনে গেছি কোথায় দিবে। অনেক কষ্ট করে গ্রাম থেকে পায়ে হেঁটে আজ সকাল সকাল এ স্কুলে এসে স্লিপ কেটে লাইনে দাঁড়িয়েছি ডাক্তাররা খুব ভালো অনেক্ষণ ধরে চোখ দেখে ঔষধ, ড্রপ ও চশমা দিয়েছেন। সেবা পাওয়া সকল রোগীরা আয়োজক, ডাক্তার ও তাদের সহযোগীদের জন্য কেউ ভগবান বলে কেউ মোনাজাত করে পরম দয়ালের কাছে মঙ্গল ও ভালো কামনা করেন।
সনাতন সমাজকল্যাণ পরিষদ সদর কমিটির সভাপতি সুজিত দাশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মহতী এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী, পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য কল্যাণ মিত্র বড়ুয়া, সনাতন সমাজকল্যাণ পরিষদ কেন্দ্রীয় সভাপতি এ্যাডভোকেট বিধান কানুনগো, ঢাকা বারডেম জেনারেল মেডিকেল কলেজের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. প্লাবন দেব। এসময়, খাগড়াছড়ি দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি সুদর্শন দত্ত, কেন্দ্রিয় শ্রী শ্রী লক্ষীনারায়ণ মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল দেব, সনাতন সমাজকল্যাণ পরিষদ সদর কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমন আচার্যী, চক্ষু চিকিৎসা সেবা, ঔষধ ও চশমা বিতরণ কমিটির আহবায়ক প্রভাত তালুকদার, সদস্য সচিব উৎপল দেসহ সনাতন সমাজকল্যাণ পরিষদের কেন্দ্রীয় ও সদর কমিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের লায়ন্স চক্ষু হাসপাতাল ও খাগড়াছড়ি চক্ষু হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ এবং তাদের ১৫-২০ জন সহযোগী সকাল থেকে শুরু করে বিকেল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪শ নারী-পুরুষ রোগীকে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা সেবা, ঔধষ ও চশমা বিতরণ করেন। চক্ষু চিকিৎসা সেবা নেয়া রোগীদের মধ্যে একাধীক রোগীকে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে অপারেশনের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানায় আয়োজক কমিটি।