খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক এইচ এম প্রফুল্ল জীবনের ক্ষতির শঙ্কায় জিডি
খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য, খাগড়াছড়ি টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক, বাংলাভিশনের জেলা প্রতিনিধি, দৈনিক সাঙ্গু নিজস্ব প্রতিবেদক ও পার্বত্য নিউজের ব্যুারো চিফ এইচ এম প্রফুল্ল জীবনের ক্ষতির শঙ্কায় নিরাপত্তা চেয়ে খাগড়াছড়ি সদর থানায় সাধারণ ডাইয়েরী করেছেন।
মঙ্গলবার সকালে তিনি খাগড়াছড়ি সদর থানায় এ সাধারণ ডাইয়েরী নং ১১০৩/২০২০ ইং তারিখ ২৭-১০-২০২০ করেন।
সাধারণ ডাইয়েরীতে সাংবাদিক এইচএম প্রফুল্ল অভিযোগ করেনন, গত ২৫ অক্টোবর, রোজ রবিবার, দুপুর ১২টার দিকে খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের হল আমি ও খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি দীলিপ চৌধুরী বসে আড্ডারত ছিলেন। এ সময় দুইজন লোক প্রেসক্লাবে প্রবেশ করেন। তাদের একজনের নাম মোহাম্মদ আল আমিন। জাতীয় পত্রিকা একুশে নিউজ এবং দৈনিক মুক্তালোকসহ একাধিক পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ছাড়াও গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জে একাধিক প্রতিষ্ঠানের সভাপতি বলে পরিচয় দেন।
কেন আসলেন জানতে চাইলে তিনি তার পত্রিকার নিয়োগ প্রাপ্ত জেলা প্রতিনিধিকে প্রেসক্লাবে সদস্য করতে এসেছেন বলে জানান। কত দিন ধরে আপনার জেলা প্রতিনিধি সাংবাদিকতা পেশায় জানতে চাইলে তিনি জানান, কয়েক দিন আগে নিয়োগ দিয়েছেন। তখন সাংবাদিক প্রেসক্লাবের সদস্য হতে আবেদন করতে হলে অন্তত পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা লাগে জানালে তিনি অনেকটা উত্তেজিত হয়ে বলেন, আপনার প্রেসক্লাবকে কুক্ষিগত করে রেখেছেন। অন্য সাংবাদিকদের প্রেসক্লাবের সদস্য হতে বঞ্চিত করছেনসহ খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাব নিয়ে নানা কু-মন্তব্যসহ দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে বেড়িয়ে যান। পরে তার কিছু অনুগত সাংবাদিক এইচ এম প্রফুল্ল ও খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাব নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে যাচ্ছে। যা আমার ও খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।
এদিকে কথিত সম্পাদক ও প্রকাশক মোহাম্মদ আল আমিন-এর পত্রিকায় সদ্য ব্যুারো চীফের দায়িত্বপ্রাপ্ত আব্দুল্লাহ মো. ফাহাদ ২৬ অক্টোবর খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবে এসে সভাপতি জীতেন বড়ুয়া ও সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের মুহাম্মদ-এর উপস্থিতিতে লিখিতভাবে অভিযোগ করে জানান, গত ২৪ অক্টোবর ও্ই সম্পাদক ও প্রকাশক মোহাম্মদ আল আমিন খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙা আসেন এবং তাকেসহ ৭ জনকে (সাত) ব্যুারো চিফ, ক্রাইম রিপোর্টার ও স্টাফ রিপোর্টারসহ বিভিন্ন পদে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিবে মর্মে জানায়।
ভূক্তভোগী আব্দুল্লাহ মো. ফাহাদ জানায়, কোন এক কারণে ওই সম্পাদক গত ২৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি থেকে পালিয়ে যায়। তবে ২৬ অক্টোবর সকাল থেকে টাকা পাঠানোর জন্য ফোন দিচ্ছে। আব্দুল্লাহ মো. ফাহাদ তার লিখিত অভিযোগে ভণ্ড ও প্রতারক কথিত সাংবাদিকের বিচার দাবি করেন।
এদিকে কথিত সম্পাদক ও প্রকাশক মোহাম্মদ আল আমিন-এর নানা অপকর্ম নিয়ে জাতীয় দৈনিক ভোরের কাগজসহ বিভিন্ন পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ অব্যাহত রয়েছে।
“ তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে অনেকেই এখন সাংবাদিক, “কালীগঞ্জে ৫’শ টাকায় ‘ সাংবাদিকতা আইডি কার্ড’ বিক্রি করতে চয়ে বেড়াচ্ছে আল-আমিন, পকেটে ৩ হাজার সম্পাদক, ৫শ টাকায় মিলে সাংবাদিক আইডি” ইত্যাদি শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ অব্যাহত রয়েছে।
ঐসব পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, কাধে ব্যাগ ও গলায় ঝুলানো সাংবাদিক আইডি কার্ড সাথে ইয়া লম্বা ক্যামেরা। একাধিক পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক তিনি। সব সময় ৩ হাজার সম্পাদক তার পকেটেই থাকে। এদেরকে ফোন দিলে যে কাউকে সাংবাদিক বানানো কোন ব্যাপারই না। এমনই সব কথা বলে বেড়ান গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার মুনশুরপুর গ্রামের কথিত সাংবাদিক মোহাম্মদ আল-আমিন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধীক ব্যক্তি জানান, কথিত সাংবাদিক মোহাম্মদ আল-আমিনের সংসার চলতো অনেক কষ্টে। সংসারের খরচ যোগাতে কয়েকদিন আগেও সে রাজ যোগালির কাজ করতো। প্রাইমারীর গন্ডিও পার করতে পারেনি। কিন্তু সে কি এমন আলাদিনের চেরাগ পেলেন, যে রাতারাতি এত বড় মাপের সাংবাদিক হয়ে গেলেন? এমন প্রশ্ন অনেকের। ৫শ টাকায় বিক্রি করেন সাংবাদিকতার আইডি কার্ড। কথিত ওই সাংবাদিকের ডাকে সাড়া দিয়ে স্থানীয় অনেকেই এখন সাংবাদিক।
সূত্র আরো জানান, সে নিজেকে একাধীক পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক পরিচয়ে ইতিমধ্যে নিজের গ্রামের নামসহ স্থানীয়ভাবে গঠন করেছে একাধীক সাংবাদিক সংগঠন। গড়ে তুলেছে হলুদ সাংবাদিকতার একটি চক্র। তার চক্রের সাংবাদিক হওয়া থেকে বাদ যায়নি মসজিদের ইমাম, ফার্মেসী ব্যবসায়ী, বিকাশ ইজেন্ট, মুদি দোকানী, মাদক কারবারী, রেন্ট-এ-কার ব্যবসায়ী, দাদন ব্যবসায়ী, জমির দালাল, পুলিশের সোর্স, হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী, প্রবাসী, হকার, কবিরাজ, বিভিন্ন কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধিও। তবে সাধারণের কাছে ওরা অনেক বড় সাংবাদিক। তাই ভয়ে অনেকেই মুখ খুলতে সাহস পায় না। আর স্থানীয় মূলধারার গণমাধ্যম কর্মীরা নিজেদের আত্মসম্মানের কথা চিন্তা করে তারাও কিছু না বলে এড়িয়ে গেছেন সবসময়। তারা অনেকটাই কোনঠাসা হয়ে গেছেন হলুদ সাংবাদিকতার কাছে।
এ ব্যাপারে কথা হয় স্থানীয় মূলধারার কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মীর সাথে। ওই চক্রের কারণে অনেক জায়গায় গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে এখন আর নিজেকে পরিচয় দেন না তারা। এই পরিচয় দিলে মহান পেশাটি নিয়ে অনেকের কাছ থেকেই নীতিবাচক মন্তব্য শুনতে হয়। বর্তমানে স্থানীয় হলুদ সাংবাদিকদের কাছে অনেকটা কোনঠাসা হয়েই পড়েছেন তারা। এটা কোন সমাধান কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, নিজের মান সম্মান আগে। তাছাড়া মহান পেশাটিকে কলঙ্কিত করা ওই চক্রটির জন্য নীতিবাচক মন্তব্যও শুনতে খারাপ লাগে। তাই নিজেদের পেশা গোপন করাই শ্রেয় বলে মন্তব্য করেন তারা। তবে ওই চক্রটির জন্য অনেকেই এখন পেশা বদল করার পথ খুঁজছেন।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম মিজানুল হক জানান, ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায় কিছুই নিজের মাঝে থাকে না। ফেসবুকের ওই স্ট্যাটাসটি ভাইরাল হওয়ার সুবাদে দেখার সুযোগ হয়েছে। তবে এতে করে অন্য একটি জেলায় নিজের জেলা ও উপজেলাকে খুব বাজেভাবে উপস্থাপন করা হলো। এই ধরণের হলুদ সাংবাদিকদের কারণে অনেক জায়গায় মূলধারার সাংবাদিকরা আজ কোনঠাসা। তবে এ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা এগিয়ে আসা প্রয়োজন। তা নাহলে সাংবাদিকতার মত মহান পেশাটি নিয়ে সাধারণ মানুষ শুধু নীতিবাচক মন্তব্যই করবে না, পেশাটি কলঙ্কিত হবে এবং আগ্রহ হারাবে মেধাবীরা।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শিবলী সাদিক বলেন, স্ট্যাটাসটি আমি দেখেছি। সাংবাদিকতাকে বলা হয় রাষ্ট্রের ৪র্থ স্তম্ভ, যাকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রের উন্নয়ন কল্পনা করা যায় না। কিন্তু আজকে কিছু নামধারী সাংবাদিক মহান পেশাটিকে কুলষিত করছে। তবে এ নিয়ে আমাদের স্ব-স্ব অবস্থান থেকে এগিয়ে আসা উচিত।
কথিত সম্পাদক ও প্রকাশক মোহাম্মদ আল আমিন এর বক্তব্য নেওয়ার জন্য মুঠো ফোনে যোগাযোগা করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।