খাগড়াছড়িতে হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে বিশ্বের দামি আম সূর্যডিম

fec-image

খাগড়াছড়িতে হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম জাপানিজ সূর্যডিম বা মিয়াজাকি আম। বিশ্ব বাজারে এ আমটি ‘রেড ম্যাংগো’ বা এগ অব দ্য সান’ নামে পরিচিত থাকলেও বাংলাদেশে ‘সূর্যডিম আম’ নামেই পরিচিত।

বর্তমান পার্বত্য খাগড়াছড়িতে দেশী বিদেশী প্রায় ৬৫ জাতের আম চাষ হচ্ছে।এর মধ্যে বিদেশী ব্যানানা, কিউ জাই, থ্রি টেস্ট, ফুনাই, লাল ফুনাই, কিং অফ চাকপাত, ব্লাক স্টার আম পূর্ব থেকে চাষ হয়ে আসছে। এর মধ্যে নতুন করে যোগ হলো রেড ম্যাংগো বা সূর্যডিম আমটি। গত তিন বছর আগে খাগড়াছড়িতে প্রথম এ আমটির চাষ শুরু করেন কৃষক আতিয়ার, সাসিমং, দ্বীপংকর চাকমা, হ্ল্যাশিমং চৌধুরী সহ বেশ কয়েকজন। এবারই প্রথম খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার ধুমনিঘাট এলাকায় কৃষক হ্ল্যাশিমং চৌধুরীর উঁচু পাহাঁড়ের ঢালুতে প্রায় ১শ ২০টি গাছে ফল ধরে। গাছে মনোরম দৃশ্যে থোকায় থোকায় ঝুলছে রঙিন আম। সবুজ ওই পাহাড়কেই যেন রঙিন করে তুলেছে আমে।

স্থানীয়রা বলছেন, বিশ্বের সেরা ও দামি আমের খেতাব পাওয়া মিয়াজাকি বা সূর্যডিম আমের চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন খাগড়াছড়ির কৃষক হ্ল্যাশিমং চৌধুরী। পাহাড়ি ঢালু জমিতে মিয়াজাকি আমের সাফল্যে বিস্মিত কৃষি বিভাগও।

মহালছড়ির ধুমনিঘাট এলাকায় ৩৫ একর পাহাড় জুড়ে ফল চাষ করে ‘ক্রা এ্এ এগ্রো ফার্ম’ গড়ে তুলেছেন কৃষক হ্ল্যাশিমং চৌধুরী। সে ফার্মে ২০১৬ ও ১৭ সালে শখের বসেই মিয়াজাকি আমের চাষাবাদ শুরু করেন তিনি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ‘সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ১২শ ফুট উঁচুতে পাহাড়ে ঢালুতে সারি সারি মিয়াজাকি জাতের আমের গাছ। প্রতিটি গাছের বয়স ৩ থেকে ৪ বছর। প্রতিটি গাছেই ঝুলছে ৩০ থেকে ৪০ টিমিয়াজিক বা সূর্যডিম আম। প্রতিটি আমের ওজন প্রায় ৩০০ গ্রাম। পুরো আম লাল রঙে মোড়ানো। রঙিন এই আম দেখতে অনেকেই ভিড় করছে ‘ক্রা এ্এ এগ্রো ফাম এর বাগানে।

কৃষক হ্ল্যাশিমং চৌধুরী জানান, ‘তার বাগানে প্রায় ৬০ প্রজাতির আম রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে তিনিই প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে এ জাতের আমের আবাদ শুরু করেছেন। চার বছর আগে দেশের বাইরে থেকে চারা সংগ্রহ করে মিয়াজাকি আমের চাষাবাদ শুরু করার কথা জানিয়ে হ্ল্যাশিমং চৌধুরী বলেন, বিদেশী প্রজাতি হওয়ায় ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে আমটি চাষাবাদ করেছেন। রোপণের চার বছর পরে ভালো ফলনও পেয়েছেন। আমটি রঙ অত্যন্ত সুন্দর। দাম বেশী হওয়ায় এটি স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয় না। দেশের বিভিন্ন সুপার শপে এটি পাওয়া যাবে। অনেক শৌখিন ক্রেতাও আমটি বাগান থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ি অঞ্চলের কৃষকরা এআমটি চাষ করে লাভবান হতে পারবে বলে তিনি জানান ।

খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুন্সী রাশীদ আহমদ বলেন, সূর্যডিম বা মিয়াজাকি হলো জাপানিজ আম। বিশ্ব বাজারে এটি ‘রেড ম্যাংগো’ নামে পরিচিত। এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম। জাপানিজ এ আমটির স্বাদ অন্য আমের চেয়ে প্রায় ১৫ গুণ বেশি। আমটি খেতে খুবই মিষ্টি। আমটির গড় ওজন প্রায় ৭০০ গ্রামের মতো। বিশ্ব বাজারে এর ভালো দাম ও চাহিদা রয়েছে। অনেক কৃষক নতুন এ জাতের আম চাষে আগ্রহী হচ্ছে।

প্রচলিত জাতের পাশাপাশি বিদেশী জাতের আম চাষাবাদে কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, হ্ল্যাশিমং চৌধুরীর সহ আরও কয়েকজন কৃষক গত কয়েক বছর আগে এ আমটির চাষ শুরু করেছেন। তবে হ্ল্যাশিমং চৌধুরীর বাগানে প্রথম ফল আসে। রঙ এবং আকারের কারণে এটিকে সূর্যের ডিম বলা হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামের মাটি ও আবহাওয়ায় মিয়াজাকির ফলন অত্যন্ত ইতিবাচক। এরপরও গভীর পর্যবেক্ষন করছেন কৃষি বিভাগ। প্রাকৃতিকভাবে রঙিন হওয়ায় এ আম দেখতে বেশ সুন্দর। বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করে আমাদের দেশের কৃষক লাভবান হতে পারবে বলে তিনি ধারণা করছেন। চাষাবাদ পদ্ধতিতে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। বাজারে প্রচলিত আমের তুলনায় এর দাম কয়েকগুণ বেশি যার কারনে চারার দাম ও বেশী। হটিকালচারের সেন্টার মাধ্যমে এটি কৃষক পর্যায়ে পৌছে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আম, খাগড়াছড়ি, জাপানিজ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন