খাগড়াছড়ির বনে বিরল প্রজাতির লাল উড়ন্ত কাঠবিড়ালি

fec-image

গবেষকের ভাষ্য, অন্তত দশ বছর আগে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে এই প্রাণী দেখা গিয়েছিল; এ ছাড়া শেরপুরের সীমন্ত এলাকায় দেখা গেছে বলে।

খাগড়াছড়ি গভীর বনে ‘লাল উড়ন্ত কাঠবিড়ালির’ সন্ধান মিলেছে। লাল উড়ন্ত কাঠবিড়ালি হচ্ছে Petaurista গণের একটি বড় উড়ন্ত কাঠবিড়ালী। এটি সাধারণ ইঁদুর পরিবারের একটি প্রজাতি। এটি বিভিন্ন ধরনের বন-প্রকৃতি, বৃক্ষ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উত্তরে হিমালয় এবং দক্ষিণ ও মধ্য চীন পর্যন্ত বিক্ষিপ্ত গাছসহ আরও উন্মুক্ত আবাসস্থলে পাওয়া যায়।

অন্তত দশ বছর আগে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে এই প্রাণীর দেখা মিলেছিল; এ ছাড়া শেরপুরের সীমন্ত এলাকায় দেখা গেছে বলে বন্যপ্রাণী গবেষকের ভাষ্য। স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর কাছে এটি ‘ছলক’ নামে পরিচিত।

স্থানীয়রা জানান, এখানকার বৌদ্ধ বিহার এলাকায় শিকার নিষিদ্ধ। বিহারের ভান্তে সবাইকে শিকারে নিরুসাহিত করেন। তাই বন্যপ্রাণী এখানে নিরাপদে থাকে। ছলক (লাল উড়ন্ত কাঠবিড়ালি) এখানে দীর্ঘদিন ধরেই আছে। সন্ধ্যার দিকে বের হয়। কোনো কোনো সময় সকাল বেলায় দেখা যায়।

এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ’ গ্রন্থ থেকে পাওয়া যায়, লাল উড়ন্ত কাঠবিড়ালির চোখ বড়। এদের দেহ রঙ মেহগনি-লাল। পায়ের পাঁচ আঙুল বাঁকানো; পেছনের পায়ের সবকটি ও সামনের পায়ের চারটিতে ধারালো নখর থাকে। এদের ঘন লোমযুক্ত উড়ার পর্দা থাকে। পর্দার বিস্তৃতি হাতের কনুই থেকে পিছনের পা পর্যন্ত। এই পর্দা ইচ্ছানুযায়ী প্রসারিত কিংবা গুটাতে পারে। এর সাহায্যে তারা এক গাছ থেকে অন্য গাছে উড়ে যেতে পারে। এদের বর্ণের তারতম্য ঘটতে পারে। দেহের উপরের দিক লেজের বেশির ভাগ কালো, কালচে-বাদামি।

লাল উড়ন্ত কাঠবিড়ালি নিশাচর প্রাণী। শিকারের খোঁজে সন্ধ্যার সময় বের হয়। এরা বাতাসে ভেসে ৭৫ মিটার পর্যন্ত উপরে উঠতে সক্ষম। গভীর বনাঞ্চলে এদের সন্ধান পাওয়া যায়। প্রজনন মৌসুমে এরা দুই থেকে তিনটি বাচ্চা দেয়। উড়ন্ত কাঠবিড়ালীর ছানা আড়াই মাস পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করে।

বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষে আরও পাওয়া যায়, ধারণা করা হয় যে এদের পুরুষ ও নারী বছরে দুইবার মিলিত হয়; বাচ্চা প্রসব করে সাধারণত মার্চের শুরু থেকে অগাস্টের প্রথমভাগ পর্যন্ত। এরা ১৬ বছর পর্যন্ত বাঁচে; বসবাস করে বড় গাছে কোটরে।

বন্যপ্রাণী গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান বলেন, লাল উড়ন্ত কাঠবিড়ালি ‘দুর্লভ’। সর্বশেষ বছর দেড়েক আগে শেরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকায় লাল উড়ন্ত কাঠবিড়ালি উদ্ধার করা হয়েছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামেও এটি দেখা যায়; তবে খুবই কম।

বাংলাদেশ ছাড়াও আফগানিস্তান, চীন, পাকিস্তান, ভারত, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ডে এদের দেখা যায় বলে জানান তিনি। সূত্র: বিডিনিউজ২৪.কম।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: খাগড়াছড়ি, বনে, লাল উড়ন্ত কাঠবিড়ালি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন