খাগড়াছড়ির শতরূপা নাকি রাঙ্গামাটির শান্তনা: কে হচ্ছেন পাহাড়ের নারীনেত্রী

k -01

আল-মামুন,খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠন ও পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নির্বাচনের পর এখন পাহাড়ে আলোচনার শীর্ষে আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ- পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান এবং সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য পদ।
সংসদের নির্বাচিত দলগুলো ইতোমধ্যে নারী আসনের সংসদ সদস্যদের মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ায় নারী এমপি’র বিষয়টি বর্তমানে তিন পার্বত্য জেলায় ‘টক অব দ্যা টাউনে’ পরিণত হয়েছে। সর্বত্র একটাই প্রশ্ন অবশেষে কে হচ্ছেন পাহাড়ের ভাগ্যবতী নারী নেত্রী? বিশেষ করে দশম জাতীয় সংসদে তিন পার্বত্য জেলা থেকে নারী সংসদ সদস্য মনোনয়নের বিষয়ে দলীয় হাই কমান্ডের ইতিবাচক মনোভাব জানার পর এবার আশার মাত্রাটাও একটু বেশী। জল্পনা কল্পনাও বাড়াবাড়ি রকমের।
 সারাদেশে সংরক্ষিত আসনের জন্য ৫০ ভাগের একভাগে তিন পার্বত্য জেলার সাথে কক্সবাজার জেলাও রয়েছে। এই চারটি জেলা নিয়ে পার্বত্যাঞ্চলের সংরক্ষিত নারী আসন। যেহেতু দলীয় বাছাই কমিটির বদান্যতা আর দলীয় প্রধান বা প্রধানমন্ত্রীর নেক নজরের উপর এই এমপিদের ভাগ্য নির্ভরশীল, তাই এই আসনে এবার কে হচ্ছেন ভাগ্যবতী সংসদ সদস্য তা নিয়ে শেষ নেই জল্পনা-কল্পনার।

সদ্য বিলুপ্ত নবম সংসদে সংরক্ষিত আসনে তিন পার্বত্য জেলা থেকে কোনো সংসদ সদস্য ছিলেন না। এই আসনে নারী এমপি ছিলেন কক্সবাজারের এথিন রাখাইন। এর আগে ১৯৯৬ সালেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় সংরক্ষিত আসনে পার্বত্যাঞ্চল থেকে কাউকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তবে ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বান্দরবান জেলা থেকে ম্যা ম্যা চিং মার্মাকে সংরক্ষিত এমপি নির্বাচন করা হয়। সে অনুযায়ী পার্বত্যবাসীর প্রত্যাশা এবার আওয়ামী লীগ পাহাড়ের নারী নেত্রীদের মূল্যায়ন করুক।

দলীয় নেতা কর্মীদের এমন প্রত্যাশায় তিন পার্বত্য জেলায় অন্তত ১০ জন নারী নেত্রী এই পদটির আশায় ২৫ হাজার টাকা দিয়ে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জাতীয় পার্টিও পার্বত্য আসনটি তাদের দখলে বেশ তৎপর। জাতীয় পার্টি থেকে পদটি পাবার জন্য রাঙামাটি থেকে এককভাবে লড়ছেন দলের দুর্দিনে মাঠে থাকা নারী নেত্রী কবিতা ত্রিপুরা।  
 

এদিকে আওয়ামী লীগ থেকে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তদের মধ্যে সম্ভাব্য হিসেবে, খাগড়াছড়ির শতরূপা চাকমা, রাঙামাটির আওয়ামী লীগের জেলা মহিলা সম্পাদিকা জে এফ আনোয়ার চিনু, আরেক নারী নেত্রী ও পৌর কাউন্সিলর রোকসানা বেগম এবং অপহৃত আওয়ামীলীগ নেতা অনিল তঞ্চঙ্গ্যার সহধর্মীনী শান্তনা চাকমা। টপ লিষ্টে থাকা এ চার জনের মধ্যেই কেউ হচ্ছেন নারী এমপি বলে জোর প্রচারণা।

খাগড়াছড়ির শতরুপা চাকমা বলেন, দলের দুঃসময়ে আমি যেভাবে কাজ করেছি, দল সে বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনা করবে। সেই সাথে খাগড়াছড়ি জেলার মানুষ আমাকে চায়। এছাড়াও পাহড়ের সকল সম্প্রদায়ের উন্নয়নে কাজ করাসহ নারীদের অগ্রধিকার নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে আমি কাজ করবো। তিনি বলেন, আমার অতীত কর্মকান্ডই আমাকে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করছে। একইভাবে নিজ নিজ ত্যাগের কথা তুলে ধরে আশাবাদ ব্যক্ত করলেন অন্যরাও। তিন পার্বত্য জেলার কেউ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে না থাকায় এই অঞ্চলের নারীরা নানাক্ষেত্রে বঞ্চিত হয়েছে। যোগ্যতা থাকার পরও পাহাড়ের কোনো নারী নেত্রী আওয়ামী লীগের টিকেটে জাতীয় সংসদে যাওয়ার সুযোগ পায়নি। এ অঞ্চলের নারী সমাজের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য তারা পাহাড়ের জন্য আলাদা নারী আসন ঘোষণার দাবি জানান।

রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের নেত্রী জেএফ আনোয়ার চিনু বলেন, আমি দলের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত সাথী। আজীবন রাজপথে থেকে দলের জন্য কাজ করে গেছি। সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে রয়েছে নিবিড় যোগাযোগ এবং আন্তরিকতা। দলের কাছে কখনও কিছু পাওয়ার আশা করিনি। এবার এই পদটি আমি চাই। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, দলের হাই কমান্ডের সাথে যোগাযোগ অনুযায়ী আমি এই পদটি পাওয়ার বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী।

উপজেলা আওয়ামী লীগ নেত্রী ও পৌর কাউন্সিলর রোকসানা বেগম বলেন, আমরা পারিবারিকভাবে আপাদমস্তক আওয়ামী লীগার হিসেবে আজীবন দলের জন্য কাজ করে গেছি। বিভিন্ন আন্দোলনে রাজপথে লড়াই করেছি এবং বিরোধী দলের নির্যাতন, হামলা-মামলার স্বীকার হয়ে নিজের একনিষ্ঠতা প্রমাণ করেছি। রাজনৈতিক পরিচয়ের পাশপাশি সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছি। আমার যোগাযোগ ভাল এবং দল আমাকেই নির্বাচন করবে।

অন্যদিকে অকালে সন্ত্রাসীদের হাতে অপহরণের পর প্রাণ হারানো অনিল তঞ্চঙ্গ্যার স্ত্রী শান্তনা চাকমা বলেন, দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ আগে থেকেই আমাকে এই পদের বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মানুষ হিসেবে হাইকমান্ডের নেক নজর আমার প্রতিই থাকবে বলে আমি আশাবাদী।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন