parbattanews

খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কে ছাল তুলে নির্বিচারে বৃক্ষ হত্যা

খাগড়াছড়িতে বাকল বা ছাল তুলে গাছগুলোকে হত্যা করা হচ্ছে। আর এ নির্মম ও নিষ্ঠুর ঘটনাটি ঘটছে খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কে। ঐ সড়কের দুই ধারে লাগানো ৩০টি রেইন ট্রি ইতোমধ্যে মারা যাচ্ছে। গাছ থেকে ছাল বা বাকল তুলে ফেলার বৃক্ষগুলো ধীরে ধীরে এখন মৃত্যুর পথযাত্রী। স্থানীয়রা এমন নির্মম ঘটনার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজনকে দায়ী করছেন। অপর দিকে সড়কের পাশের গাছের মালিক সড়ক বিভাগ হলেও বিদুৎ বিভাগ গাছ কাটার বিষয়ে কোন ধরনের সমন্বয় করছে না অভিযোগ সড়ক বিভাগের। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, আমরা গাছ কাটি না, গাছের ডাল-পালা ছেটে দিই।

সরেজমিনে দেখা গেছে, খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে গাছবান এলাকার শিবমন্দির এলাকার দুরত্ব ৯ কি.মি খাগড়াছড়ি পানছড়ি সড়কের সড়কের গিরিফুল এলাকা থেকে গাছবান শিবমন্দির এলাকা পর্যন্ত অন্তত ৩০টি রেইন ট্রি গাছের বাকল ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি পুরু করে তুলে ফেলা হয়েছে। এতে গাছগুলো ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি গাছ পরিপূর্ণভাবে মারা গেছে। এরই মধ্যে সড়কের গিরিফুল এলাকায় ৮টি গাছের ছাল তুলে ফেলায় গাছগুলো মারা গেছে। এছাড়া কুকিছড়া ব্রিজ এলাকায় ১৩টি গাছের গাছ তুলে ফেলা হয়েছে। ছাল তুলে ফেলায় গাছগুলো শুকিয়ে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। আশঙ্কা করা হয়েছে কয়েক মাসের এসব গাছও মারা যাবে। এছাড়া গাছবান এলাকায় ৬টি, ছোটনালা ব্রিজ এলাকায় ১টি, ১২ নাম্বার এলাকায় ২টি গাছের বাকল তুলে ফেলা হয়েছে।’

স্থানীয়রার জানান, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের শ্রমিকরা গাছের ডালপালা ছাটাই করার পরিবর্তে গাছের ছাল তুলে ফেলেছে। গিরিফুল এলাকায় সড়কের পাশেই স্থানীয় বাসিন্দা সাচিং মারমা বলেন , ‘গত বছর বর্ষাকালের আগে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন এসে গাছের ডালপালা ছাটাই করে। এ সময় তারা কয়েকটি গাছ বিদ্যুতের তারে সাথে লাগায় তারা গাছের ছাল তুলে ফেলে। এতে গাছগুলো ধীরে ধীরে মারা যায়।’

খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কের পাশেই কুসমতি ত্রিপুরা বাড়ি। প্রধানমন্ত্রী’র আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নতুন ঘরে পেয়ে সেখানে বসবাস করছেন তিনি। তিনি জানান ,‘ বিদ্যুতের যে সকল লোকজন গাছের ডালপালা কাটে তারাই গাছে ছাল তুলে ফেলেছে। গাছগুলো মারা গেছে। এসব গাছ আমার ঘরের উপর ভেঙে পরার শঙ্কা রয়েছে। ’

গিরিফুল এলাকার বাসিন্দা বাধবী চাকমা জানান ,‘গাছের ছাল তুলে ফেলায় গাছগুলো মারা গেছে। এখন এসব গাছে ভেঙে পরার শঙ্কা আছে। ’

এদিকে গত ২১ জানুয়ারি খাগড়াছড়ি-আলুটিলা সড়কের ৯টি সৌন্দর্যবর্ধনকারী জারাকডান্ডা গাছ কেটে ফেলেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। হিল অর্কিড সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ও নিসর্গপ্রেমী সাথোয়াই মারমা জানান ,‘ সড়কের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য জাকারান্ডার গাছ লাগানো হয়েছে। ২১ জানুয়ারি শনিবার আলুটিলায় এলাকায় জাকারান্ডা গাছ কেটে ফেলেছে বিদ্যুৎ বিভাগের শ্রমিকেরা।

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী বলেন, এভাবে গাছে ছাল তুলে বৃক্ষ নিধন এটি একটি অপরাধ । এঘটনায় বিদ্যুৎ বিভাগের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হাওয়া উচিত। গাছের ডালপালা যাতে বিদ্যুতের তারে সংম্পর্শে না যায় সেজন্য ডালপালা কাটার বিধান রয়েছে। এজন্য তাদের অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। ডালপালা না কেটে এভাবে গাছের ছাল তুলে বৃক্ষ হত্যা খুবই গর্হিত অপরাধ। ’

সাধারণত সড়কের দুই পাশে রেইন ট্রি’র মালিক খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপদ বিভাগ। তবে এসব গাছের ডালপালা কাটার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ সড়ক বিভাগের সাথে কোন ধরনের সমন্বয় করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সওজ।

খাগড়াছড়ি সওজ’র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, খাগড়াছড়ি -পানছড়ি সড়কের গাছের ছাল তুলে ফেলায় অনেকগুলো গাছ মারা গেছে। আমরা অজ্ঞাত ব্যক্তিকে দায়ী করে গত বছরে খাগড়াছড়ি সদর সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি। সাধারণ সড়কের দুই পাশে গাছের মালিকানা আমাদের এখানে গাছের ডালপালা কাটতে হলে আমাদের অনুমতি নিতে হবে। কিন্ত বিদ্যুৎ বিভাগ গাছ কাটার সময় কখনোই আমাদের সাথে যোগাযোগ করে না এবং সড়ক বিভাগকে অফিসিয়ালি কোন চিঠিও দেন না।’

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড খাগড়াছড়ি’র নির্বাহী প্রকৌশলী স্বাগত সরকার বলেন ,‘ গাছের ছাল তুলে গাছ কাটার কোন নিয়ম নেই। এই ঘটনায় আমাদের কোন গাছ কাটার শ্রমিক জড়িত থাকে তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। তিনি বলেন, আমরা গাছের ডালপালা কাটি বিদ্যুৎ সরবরাহ নির্বিঘ্ন করার জন্য, গাছে ছাল তুলি না। গাছের ছাল তোলার সাথে জড়িত শ্রমিককে চিহ্নিত করা গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গাছের ডালপালা কাটার সময় সড়ক বিভাগের সাথে সমন্বয় না করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।

Exit mobile version