খালি পাহাড়ের কেন দোষ দেন, পাহাড় শান্ত আছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা


স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, খালি পাহাড়ের কেন দোষ দেন। পাহাড় আগের থেকে অনেক ভালো অবস্থায় আছে, অনেক শান্ত আছে।
তিনি জানান, ‘আমি পাহাড়ে তিনবার চাকরি করেছি। ক্যাম্প কমান্ডার ছিলাম, সিও ছিলাম ও ব্রিগেড কমান্ডার ছিলাম। পাহাড়ের অশান্তি তো আপনারা দেখেনইনি। এখন ওই তুলনা করতে গেলে পাহাড় এখন পুরোটাই শান্ত। এই ছোটখাটো অপহরণ যে পাহাড়ে হয়েছে, তা আমাদের প্লেন ল্যান্ডেও (সমতল) তো হচ্ছে।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি আরও জানান, ল্যান্ডমাইন দিয়ে একসঙ্গে পিকআপ উড়াই দিছে। তিনজন, চারজন করে মারা গেছে। সে সময় এই খবরগুলো আসেওনি প্লাস ওই এলাকায় এক্সেসেবিলিটিও ছিল না। কিন্তু এখন তো পাহাড়ের অবস্থা এত ভালো ওই রাস্তা দিয়ে আপনারা সাজেক চলে যাচ্ছেন। পর্যটকরা সাজেক চলে যাচ্ছেন।’
যৌথ বাহিনীর অভিযান নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যৌথ বাহিনীর অভিযান কোনো অবস্থায় কমেনি। বরং আপনাদের সাহায্য-সহযোগিতার জন্য আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যে ঘটনা ঘটে, সত্যি ঘটনা আপনারা অবশ্যই প্রকাশ করে দেবেন। তখন আমাদের কাজ করতে সুবিধা হয়। কিন্তু অনেক সময় আছে দু-একজন করে কী, ঘটনা সত্যি নয়, কিন্তু প্রকাশ করে দেয়। সে সময় অনেক সময় ইনভেস্টিগেশন করে দেখা যায় যে ঘটনা সত্যি নয়, তখন অসুবিধা হয়।
পার্শ্ববর্তী দেশের সাংবাদিকরা এর সুবিধাটা নেয়। যেহেতু জানেন যে তারা মিথ্যা সংবাদ বেশি পরিবেশন করে। সে ক্ষেত্রে দেশের সাংবাদিকদের একটা সুনাম আছে, আপনারা সত্য সংবাদ প্রকাশ করেন। দু-একটি এদিক-সেদিক হলেই ওরা সুবিধা পেয়ে যায়। আপনারা যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন আমি অনুরোধ করব আপনারা সেভাবে কাজ করেন।’
আইন-শৃঙ্খলার আরো কিভাবে উন্নয়ন করা যায় সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জমির টপ সয়েল কেটে নিয়ে যাচ্ছে, পাহাড় উজাড় হয়ে যাচ্ছে—এগুলো নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে।’
উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘আরাকান ওই বর্ডারটা ডিফিকাল্ট বর্ডার। আমরা তো মায়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি।
কিন্তু বর্ডারটা পুরোটা দখল করে আছে আরাকান আর্মি। এখন মায়ানমার থেকে কিছু আমদানি-রপ্তানি করতে হলে মায়ানমার সরকারকে ট্যাক্স দিতে হয়। আবার আরাকান আর্মিতে যারা আছে তারাও পয়সা নিচ্ছে। এখানে একটা সমস্যা আছে আপনাকে বুঝতে হবে।
কিন্তু এই সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করা হচ্ছে। আর সীমান্ত পুরো রক্ষিত আছে।’
একটি আরাকান সংগঠনকে ঘিরে সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন ভিডিও ও টিকটক কনটেন্ট সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এখন দেখতে হবে যে আরাকান আর্মি ফাইট করতেছে অনেক দিন যাবৎ। এদের অনেকে এপারে বিয়ে করে ফেলছে-এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। কিন্তু যে হারে ভিডিওতে আসছে, বিষয়টা তা নয়।
টিকটক ভিডিও কিন্তু অনেকভাবে করা যায়। কিন্তু সবটা যে সত্য তা নয়, আবার সবটা যে মিথ্যা, তা-ও নয়। এটার ক্ষেত্রে আপনাকে ব্যালান্স করতে হবে।’
সম্প্রতি চট্টগ্রামের রাউজানে বেড়ে যাওয়া হত্যাকাণ্ড নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘ফটিকছড়ি, রাউজান, পটিয়া ও সাতকানিয়া এলাকা হলো পাহাড় ও সমতলে দুইটার সংমিশ্রণ। চট্টগ্রামে বিভাগেই পড়ছে সব পাহাড়, সমতলভূমি ও সমুদ্র। বনাঞ্চলও এখানে।
এখানকার সমস্যা অন্যান্য এলাকার চেয়ে একটু ডিফারেন্ট। আমরা এই ব্যাপারে আলাপ করছি, এখানে সন্ত্রাসীরা অপকর্ম করে পাহাড়ের দিকে চলে যায়। প্রকাশ্যে কেউ যদি করে থাকে আমি আপনাদের সামনে পুলিশের ডিআইজিকে বলে গেলাম আইনানুযায়ী যেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’