খুরুশকুলে পুনর্বাসিতদের জায়গা কেড়ে নিচ্ছে প্রভাবশালীরা : প্রশাসনের সহযোগিতা চাইছেন ভুক্তভোগীরা

fec-image

‘আমি শহরের পশ্চিম বাহারছড়া কবিতা চত্বর এলাকায় ছিলাম। ২০২১ সালে ওই এলাকায় বিমান বন্দর সম্প্রসারণে যে ৪২২ পরিবারকে উচ্ছেদ করে খুরুশকুল পূর্ব ডেইল পাড়ার পাহাড়ী ঢালে পুনর্বাসন করা হয়েছে তাদের মধ্যে আমিও একজন। সরকারের দেওয়া জায়গার টোকেন অনুযায়ী পাহাড়ের ঢালে ছোট্ট একটি জায়গায় ঝুঁপড়ি ঘর করে কষ্ট অবস্থান করছি। এতদিন সব স্বাভাবিক থাকলেও গেল সরকার পতনের পর থেকে ওই এলাকার প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট করিম আর স্বপন গং এর লোকজন এসে আমাদের জায়গা-ঘরবাড়ি দখল করে নিচ্ছে। তারা দিন-দুপুরে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হুমকি দিচ্ছে জায়গা খালি করে দিতে। আমার ঘরটা তারা ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। আমি গরিব মানুষ। এখন কোথায় যাব?’ এসব কথা বলছিলেন হাফিজুর রহমানের স্ত্রী রাবেয়া হাফেজ। যার জায়গার টোকেন নম্বর ৩৯।

একইভাবে ২৯৩ টোকেনের গোলাম কাদেরের ছেলে নুরুল হুদা জানান, আগের সরকার আমাদের এমনিতেই বেকায়দায় ফেলেছে। পুনর্বাসনের নামে পানি-বিদ্যুৎ ও ঘর ছাড়া খোলা আকাশের নীচে খাস জায়গায় পাহাড়ের ঢালে প্লট ভাগ করে থাকতে দিয়েছে। আমরা অনেক কষ্টে সেই পাহাড়ে কোনভাবে জীবন-যাপন করছি। সম্প্রতি ওই এলাকার কিছু প্রভাবশালীরা আমাদের হুমকি দিচ্ছে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে। এদিকে গত ৫ দিন আগে আমরা শহরের এক আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে গেলে আমার ঘরটি ভেঙ্গে খুলে নিয়ে যায়। পরে জানতে পারি ওই খাস জায়াগার মালিক দাবিদার করিম ও স্বপন গং এর লোকজন এই কাজ করেছে। এখন খোলা আকাশের নীচে অবস্থান করতে হচ্ছে। যদিও প্রভাবশালীরা ওই জায়গাও খালি করে দিতে বলেছে।

আরেক ভুক্তভোগী আবদুর রশীদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম জানান, প্রভাবশালীরা প্রকাশ্যে এসে জায়গা খালি করে দিতে বলেছে। নয়ত খুন-খারাপি হয়ে যাওয়ার হুশিয়ারী দিয়েছে। এ অবস্থায় থাকার ঘর হারানোর পাশাপাশি নিজেদের জীবনও অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। আনোয়ারা বেগমের টোকেন হল ১৬৩ নম্বর।

শুধুমাত্র রাবেয়া হাফেজ, নুরুল হুদা আর আনোয়ারা বেগম বলে কথা নয় এমন ভুক্তভোগীর সংখ্যা ২০ জনের অধিক। যাদের অভিযোগ ওই এলাকার প্রভাবশালী করিম ও স্বপন গং আশ্রিত লোকজনের জন্য সরকারী বরাদ্দ জায়গা কেড়ে নিতে চাইছে। এ ঘটনায় উপজেলা নিবার্হী অফিসার বরাবরে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

দায়েরকৃত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, কক্সবাজার বিমান বন্দর সম্প্রসারণে পশ্চিম বাহারছড়া কবিতা চত্বর এলাকা হতে উচ্ছেদকৃত ৪২২ পরিবারকে খুরুশকুল পূর্ব হামজার ডেইল এলাকায় ২০২১ সালে সরকারীভাবে পুর্নবাসিত করা হয়। পুনর্বাসনের জমি সরকারি ১ নম্বর খাস-খতিয়ানের ৫২১৭ ও ৫৩৫৩ নম্বর দুইটি দাগের প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। যা তৎকালিন সরকার কতৃক বরাদ্দের খতিয়ানপত্র ও ট্রেসম্যাপ করে দেওয়া হয়। তার মধ্যে ৫৩৫৩ দাগের পশ্চিম প্রান্তের প্লট পাহাড়ি ঢালু জায়গায় হওয়াতে পানি-বিদ্যুতের সমস্যা হয়। তার মধ্যে ওই এলাকার প্রভাবশালী করিম এবং স্বপন গং এসে ওই প্লটের লোকজনের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে ফেলে এবং জায়গা দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে। এতে অনেককে খোলা আকাশের নীচে অবস্থান করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রভাবশালীরা ওই এলাকা ছেড়ে দিতে প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছে। এতে মানবেতর দিন কাটছে অন্তত ২০ টির অধিক পরিবারের।

এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত স্বপনকে ফোনে পাওয়া না গেলেও করিমের সাথে কথা হলে তিনি জানান এই অভিযোগ সঠিক নয়।

কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামী জানান, বিষয়টি তিনি অবগত রয়েছেন এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। কাউকে কোন ধরণের অন্যায় করতে দেওয়া হবেনা। যার যতটুকু প্রাপ্য ততটুকু বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন