গর্ভবতী নারীদের প্রেরণার বাতিঘর রাশেদা: ৬ হাজারের বেশি নরমাল ডেলিভারি

 

সারা দেশে যেখানে সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব ভয়ংকর এক রীতিতে পরিণত হয়েছে, সেখানে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের মসজিদ গলির কাজী রাশেদা বেগম (৪২) এক বিরল উদাহরণ হয়ে উঠেছেন। তিনি নারীদের স্বাভাবিক প্রসব বা নরমাল ডেলিভারিতে উদ্বুদ্ধ করে হয়েছেন তাদের প্রেরণার বাতিঘর। এই দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় রাতবিরাতে প্রসব বেদনায় কাতরানো গর্ভবতী মায়েদের সেবা দিতে ছুটে যান রাশেদা। এখন পর্যন্ত তিনি নিজ হাতে ৬,০০০ এরও বেশি শিশুর জন্মে সহায়তা করেছেন।

মানবিক যাত্রার শুরু

রাশেদা বেগমের এই অনন্য যাত্রার শুরু হয় ২০০১ সালে, যখন তার ছোট ছেলে আরমান হাসানের জন্মের সময় তিনি ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, নরমাল ডেলিভারি করানো শিখবেন। বিভিন্ন এনজিও এবং প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণ নিয়ে রাশেদা দক্ষ হয়ে ওঠেন এবং ২০০৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চাকরি জীবনে তিনি ডেলিভারি করানোর কাজ করেন। এ পর্যন্ত তিনি ৬,১০৩টি নরমাল ডেলিভারি করিয়েছেন বলে জানান।

পরিশ্রম এবং ত্যাগ

রাশেদা বেগমের জীবনের গল্প কেবল সেবা প্রদানের নয়, বরং ত্যাগেরও। রোজার সময় মধ্যরাতে পাহাড়ের প্রান্ত থেকে প্রান্তে গিয়ে ডেলিভারি করানোর অভিজ্ঞতা তার কাছে নেশায় পরিণত হয়েছে। তিনি কখনো কারো কাছ থেকে অর্থ নেন না বরং নিজের খরচেই সেবা দেন। এই মহৎ কাজে স্বামী-সন্তানেরাও তাকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করেন।

এলাকাবাসীর কৃতজ্ঞতা

এলাকার মানুষ রাশেদাকে মহীয়সী নারী হিসেবে জানেন।

হুমাইরা আক্তার জানান, রাশেদা আপা যেকোনো সময় ডাকলে ছুটে আসেন।

ইয়াসমিন আক্তার বলেন, রাশেদা আপা রোজার সময় ইফতার না করে তার সন্তান প্রসব করিয়েছিলেন।

কামরুন নাহার বলেন, তিনি গরিবদের বন্ধু এবং কাউকে ফিরিয়ে দেন না।

প্রত্যাশা

এলাকাবাসীর মতে, রাশেদা বেগমের এই মহৎ কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করা উচিত। সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন তাকে সার্বিক সহযোগিতা করে, সেই দাবি জানানো হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন