গাভী পালন করে স্বাবলম্বী সুভাস

fec-image

 

দরিদ্র থেকে মুক্তি পেতে শুরু থেকে চোখে মুখে তার নানান স্বপ্ন। স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে জুম চাষ করে পেট চালানো যায় না। তাই রাতে ঘুমানোর আগে দারিদ্র মুক্ত হওয়ার চিন্তা জেগে ওঠে।

অবশেষে মাত্র ১০ হাজার টাকায় বিদেশী জাতের একটি বাচুর কিনে তার অভাব মোচনের পথ পাড়ি দেন। এরপর নিজের ফার্মকে আরো বড় পরিসরে রুপ দিতে সরকারি-বেসরকারি নানা সংস্থার কাছে অর্থ ঋণের জন্য দৌড়া-দৌড়ি করেন এবং ঋণও পেয়ে যান। এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে থাকাতে হয়নি।

গাভী পালনে যিনি স্বাবলম্বী হয়েছেন তার নাম হলো সুভাস চাকমা। রাঙামাটি শহরের রাঙাপানি এলাকায় স্ত্রী, দুই ছেলে এবং এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। বড় ছেলে দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসি এবং ছোট ছেলে মালেশিয়ায় হোটেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে লেখা-পড়ার পাঠ চুকাচ্ছেন। মেয়েটা এসএসসি পরিক্ষা দিয়েছেন।

সুভাস পার্বত্যনিউজকে জানান, ১০বছর আগে তার সংসারে চরম অভাব ছিলো। আর এখন অভাব পালিয়ে গেছে। স্ত্রী লক্ষি দেবী চাকমাকে সাথে নিয়ে খামারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

বর্তমানে তার খামারে ৮টি গাভী এবং ৩টি বাছুর রয়েছে। যার বাজার মূল্য বর্তমানে ১২লাখ টাকারও বেশি। তার আগে খামার থেকে ৫টি গরু বিক্রি করেছেন তিন লাখ টাকায়। পাঁচ শতক জায়গায় তার খামার গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রতিদিন গড়ে খামার থেকে ৪০লিটার দুধ উৎপাদন হয়। পাইকারী দামে প্রতি লিটার ৭০টাকায় এবং খুচরা দামে প্রতি লিটার ৭৫টাকায় বিক্রি করেন দুধ।

সুভাস আরও জানান, গাভী পালনের পাশাপাশি তার ফার্মের পার্শ্ববর্তী স্থানে বায়োগ্যাস প্লান্ট নির্মাণ করেছেন। এ গ্যাস দিয়ে নিজ পরিবারের রান্নার কাজে ব্যবহার করার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী আরো ৫টি পরিবারকে মাসিক ৭০০টাকা হারে গ্যাস সরবরাহ প্রদান করছেন।

খামারের কিছু দূরে তিন শতক জায়গায় গড়ে তুলেছেন ফুলের নার্সারি। এ নার্সারীতে ৫০ জাতের ফুল পাওয়া যায়। যেমন বিদেশী জাতের মধ্যে – বাগান বিলাস, স্টল পর্দ, ব্লির্ডি হার্ড, হাইডেন জিয়া আর দেশি জাতের মধ্যে জবা, সূর্যমুখী, ডালিয়া, শালফিয়া, স্টার, চন্দ্র মল্লিকা, গাঁদা উল্লেখযোগ্য। এ নার্সারি থেকে প্রতি বছরে আয় হয় প্রায় দুই লাখ টাকার মতো।

বাড়ির আঙিনায় গড়ে তুলেছেন মাশরুম চাষ। মাশরুম থেকে প্রতি বছরে আয় প্রায় দেড় লাখের মতো।

এছাড়া তার পাশ্ববর্তী চার শতক জায়গায় গড়ে তুলেছেন মিশ্র জাতের ফল বাগান। সেখান থেকে বছরে আয় করেন লাখ টাকা।

সুভাস জানান, পরিশ্রম মানুষকে সফলতা এনে দেয়। জীবনে হতাশ না হয়ে পরিশ্রম করতে হবে। তাহলে সফলতা ধরা দিবে নিশ্চিত।

সুভাসের স্ত্রী লক্ষি দেবী চাকমা জানান, আমাদের ১০বছরে যে অভাব ছিলো তা কেটে গেছে। গাভীর পালনের টাকায় সংসার চাকা ঘুরছে।

সুভাসের এমন বহুমুখি সফলতায় গ্রামের মানুষের কাছে তিনি এখন রোল মডেল। তার দেখাদেখি অনেকে গাভী পালনে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন এবং সংসারের চাকা ঘুরাচ্ছেন।

সুভাস সম্পর্কে ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও রাঙামাটি সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পলাশ কুসুম চাকমা জানান, সুভাস আমাদের গ্রামের গর্ব। তাকে দেখে স্থানীয় বেকার যুবক-যুবতীরা গাভী পালনের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে রাঙমাটি সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ ভুঁইয়া জানান, সুভাসের সাথে আজ থেকে ১০বছর আগে আমার পরিচয় ঘটে। তার অভাবের কথা শুনে আমি তাকে গাভি পালনে উদ্বুদ্ধ করি। বর্তমানে তিনি সফল। আমার পক্ষ থেকে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: গাভী পালন, স্বাবলম্বী
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন