parbattanews

গুইমারায় দুস্কৃতিকারীদের ভেঙে ফেলা বৌদ্ধমূর্তি নির্মাণে প্রশাসনিক উদ্যোগ (ভিডিওসহ)

নিজস্ব প্রতিবেদক, মাটিরাঙ্গা:

খাগড়াছড়ির গুইমারায় দুর্বৃত্ত কর্তৃক রাতের আঁধারে ভেঙে ফেলা বৌদ্ধ মন্দির ও বৌদ্ধ মূর্তি পুনর্নিমাণে কাজ শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। সরকার এ মন্দিরের নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে প্রয়োজনীয় নির্মাণ সামগ্রী বিহারে পৌঁছে গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পঙ্কজ বড়ুয়া।

তবে বৌদ্ধ ধর্মীয় জ্যেষ্ঠ ভান্তেদের সাথে বৈঠক শেষে বৌদ্ধ ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দিনক্ষণ দেখে বিহারের নির্মাণ কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। এই লক্ষ্যে শুক্রবার (২৬ অক্টোবর) বিকাল ৩টার দিকে গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।  বৈঠকে বৌদ্ধ ধর্মীয় জেষ্ঠ্য ভান্তে ছাড়াও গুইমারা ও মাটিরাঙ্গা জোন অধিনায়ক, স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় পাড়া কার্বারী ও বিহারের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

অনাকাঙ্খিত ভাবে রাতের আঁধারে বৌদ্ধ মন্দির ও মুর্তি ভাঙচুরের ঘটনার পরপরই বৌদ্ধ মুর্তি পুনস্থাপনসহ বৌদ্ধ বিহার নির্মাণের ঘোষণা দেয় খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন। ঘোষণার ২৪ ঘন্টা পর তড়িৎ গতিতে সে ঘোষণার বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ইট, রড, বালি, সিমেন্টসহ প্রয়োজনীয় নির্মাণ সামগ্রী বিহারে পৌঁছে গেছে বলে জানান গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পঙ্কজ বড়ুয়া। তিনি আরও বলেন, বৌদ্ধ ধর্মীয় জ্যেষ্ঠ ভান্তেদের সাথে পরামর্শক্রমে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী শুভ দিনক্ষন দেখে বিহারের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। বৌদ্ধ মুর্তি পুনস্থাপনসহ বৌদ্ধ বিহার নির্মাণে প্রশাসন আন্তরিক বলেও জানান তিনি।

খাগড়াছড়ির জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী  সকলকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন,‘কোন অপশক্তি গুইমারাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারবে না । সরকারি উদ্যোগে বিহারের নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পরও একটি বিশেষ মহলের গুজব ও অপপ্রচার চালাচ্ছে যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য হুমকি বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে অনাকাঙ্খিত এই ঘটনা থেকে একটি বিশেষ মহল ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে বলেও জানান তিনি। এই বিষয়ে কোন গুজবে  বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।’

হাফছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান চাইথোয়াই চৌধুরী জানান, সোমবার রাতে কুকিছড়া জেতবন বিহারের অনাকাঙ্খিত ঘটনার পর থেকেই সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন আন্তরিক। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় প্রশাসন ও বিহার কৃর্তপক্ষের সাথে মতবিনিময় সভা হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে কেউ এই ধরনের ঘটনা ঘটাতে না পারে সেই বিষয়ে প্রশাসন সতর্ক রয়েছে এবং স্থানীয়দের সজাগ থাকার আহ্বান জানান। ’

গুইমারা সদর ইউপি চেয়ারম্যান মেমং মারমা জানান, বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে জেতবন বিহার ভাঙা মূর্তির পুণনির্মাণ কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। বিহারের নির্মাণ সামগ্রী পৌঁছে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন,‘ জেতবন বিহারের ঘটনায় কোন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী অপপ্রচারের সুযোগ নেই

বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর গুইমারা রিজিয়ন জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার এ ধরণের ঘৃণ্য তৎপরতায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচন আসন্ন। এসময় কতিপয় স্বার্থাণ্বেষী মহল সরকারের সাফল্য ও সেনাবাহিনীর সুনাম নষ্ট করতে তৎপর হয়েছে। কিন্তু ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের এহেন তৎপরতাকে কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। চলমান উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার কারো কোনো তৎপরতাকে ছাড় দেয়া হবে না এবং এজন্য যেকোনো ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণে সেনাবাহিনী পিছপা হবে না।

গুইমারা সেনা রিজিয়ন স্থানীয় জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিদের মধ্যে এই উদ্যোগে সমন্বয় সাধন করছে বলেও তিনি জানান।

প্রসঙ্গত, প্রবারনা পুর্নিমার একদিন আগে গেল সোমবার দিবাগত রাতের আঁধারে খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলাধীন হাফছড়ি ইউনিয়নের কুকিছড়া এলাকায় কতিপয় দুস্কৃতিকারী জেতবন বৌদ্ধ বিহার ভাঙচুর ও সেখানে রাখা ৭ফুট উচ্চতার বৌদ্ধ মুর্তিটি ভেঙে পাশের খাতে ফেলে দেয়। এ ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে বুধবার বৌদ্ধ মুর্তি পুনস্থাপনসহ বৌদ্ধ বিহার নির্মাণের ঘোষণা দেয় খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন।

Exit mobile version