parbattanews

গুইমারায় ‘শীলং তীর’ জুয়া ক্যান্সার ব্যধির মত গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে

সম্প্রতিকালে জেলার গুইমারায় গ্রামে গ্রামে‘শীলং তীর’ জুয়া আবারও জোরালো পরিসরে ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে এ ব্যাধিটি সামাজিক ক্যান্সারের মত রূপ নিয়েছে। স্কুল পড়ুয়া থেকে শুরু করে প্রান্তিক কৃষকরাও এই জুয়ায় আসক্ত হয়ে লাখ লাখ টাকা হারাচ্ছে।এমনকি নারীরাও এ খেলায় মত্ত হয়ে গেছে। গেল ২ বছরের ব্যবধানে গুইমারা উপজেলার অন্তত ১৫ স্থানে ভয়ঙ্করভাবে এ জুয়ার আসরের বিস্তৃতি ঘটেছে।

সরজমিনে ঘুরে জানা গেছে, ভারতের ‘শীলং’ নামক স্থান থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে এ জুয়া খেলাটি পরিচালিত হয় বিধায় এটি ‘শীলং তীর’ খেলা নামে পরিচিতি লাভ করেছে। ভাবছেন কিভাবে সম্ভব? ১ থেকে ৯৯ পর্যন্ত সংখ্যাভিত্তিক চলে এই জুয়া। এটি একটি কৌশলগত অনলাইন ভিত্তিক জুয়া। সাধারণ মানুষের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার দুষ্ট চক্রের একটি বিরাট মরন ফাঁদ। বিশেষ কৌশলের এ জুয়া খেলাটির ফাঁদে অনেকে পা দিয়ে অর্থ হারানোর কারণে পরিবারিক অস্বচ্ছলতা, ঋণগ্রস্ত ও সর্বশান্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে স্ত্রী-সন্তান রেখে এলাকা থেকে পালানোর খবরও পাওয়া গেছে। অনেক পরিবারে দেখা দিয়েছে পারিবারিক সংকট।

জুয়ার আকর্ষণ রাখতে এবং জুয়ার আসর থেকে সাধারণ মানুষ যাতে মুখ ফিরিয়ে না নেন, সেজন্য প্রতিদিনই কয়েকজনকে নামে মাত্র বিজয়ী ঘোষণা করে। হাতেগোণা কয়েকজন জুয়ার আসর থেকে হাসিমুখে ফিরলেও সিংহভাগই ফিরেন নিঃস্ব হাতে। ১০ টাকায় ৮০০ টাকা, ২০ টাকায় ১৬০০ টাকা বা ৮০ গুণ লাভের আশায় নতুন ধরনের এই জুয়ায় রিকশা-চালক, দিনমজুর শ্রেণীর লোকরাই বেশি হুমড়ি খেয়ে পড়ে।

গুইমারায় শীলং এর এজেন্ট পয়েন্ট কমপক্ষে ১৫টি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বটতলী, যৌথখামার, আমতলীপাড়া, হাজীপাড়া, দেওয়ান পাড়া, হাতিমুড়া, রামছুবাজার ডাক্তারটিলার নিচে, নতুনপাড়া, বুধংপাড়া, বরইতলী প্রভৃতি। প্রত্যেকটি স্পটে স্থানীয় চতুর একজন লোক মূল হোতাদের পক্ষে এজেন্ট হিসেবে এ জুয়া খেলা পরিচালনা করে।
এসব এজেন্টরা হাজার টাকার জুয়া বাজীর কমিশন হিসেবে মূল কোম্পানীর কাছ থেকে পায় ৬০ টাকা। সকাল ৯টায় শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত এসব এজেন্টের মাধ্যমে কর্তন করা জুয়ার টাকা ও নম্বর সাড়ে তিনটার মধ্যেই পৌঁছে দিতে হয় প্রধান এজেন্টদের কাছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এর প্রধান দায়িত্বে রয়েছে তিনজন। তাদের পরিচালিত ‘শীলং তীর’ জুয়ার আসর এখন প্রত্যেক পাড়া-মহল্লায় চলে। তাদের অবস্থান সদর উপজেলা থেকে দুই কিলোমিটার দূরবর্তী বটতলী এলাকায়। জানা যায়, সাধারণ ব্যবসায়ী থেকে এ জুয়া চালিয়ে এখন ওরা বিত্তশালী হয়ে উঠেছে । ভারতের সাপ্তাহিক ছুটির দিন রবিবার ছাড়া বাকি ৬ দিনই জুয়ার এ আসর বসে। গুইমারায় আইনশৃঙ্খলা সভাসহ বিভিন্ন সভা সমাবেশে শীলং খেলা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠলেও বন্ধের বিষয়ে যথাযত কোন কার্যক্রম এখনো দেখা যায়নি। সবসময় ধরা ছোঁয়ার বাহিরে থেকে যাচ্ছেন শীলং জুয়ার মূল হোতারা।

অভিযোগ উঠেছে, কিছু অসাধু প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে এ জুয়া খেলা চলে আসছে। এই জুয়া প্রচলনের প্রথম দিকে এলাকার বেকার বা আড্ডাবাজ তরুন যুবকদের টার্গেট করা হলেও বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও নারীরা আসক্ত হয়ে পড়েছেন এ খেলায়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে আসার সময় টিফিনের টাকা শীলংয়ের বাজিতে রেখে আসছে লাভের আশায়।

গেলো কয়েক বছর ধরে গুইমারা এলাকার আনাচে কানাচে এই জুয়া খেলা চলছে। মাঝে প্রশাসনের বেশ তৎপরতায় কিছু দিন কমেছিলো। গত দুই মাস বটতলী এলাকার প্রভাবশালী নতুন এজেন্টের মাধ্যমে বেশ জোরালো পরিসরে চলছে এ জুয়াটি। এর সাথে পরোক্ষ ভাবে জড়িত রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের একটি চক্র।

খেলোয়াড়দের একটি নির্দিষ্ট সূত্রমতে, আগে শুধুমাত্র গুইমারা উপজেলাতেই শীলং এর দৈনিক খেলা হত ২-৩লক্ষ টাকা। বর্তমানে ৬-৭ লক্ষ টাকার খেলা হচ্চে দৈনিক, আর আনুষাঙ্গিক ব্যায় প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা। বাকি টাকা এজেন্টদের মুনাফা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কার্বারী, হেডম্যান ও গন্যমান্য ব্যক্তিরা জানান, মুল হোতার বাড়ি তাদের এলাকায়। গত দুইমাস এ খেলা চালিয়ে হঠাৎ দুটি পিকাপ গাড়ি সহ বিপুল টাকার মালিক বনে গেছে সে।

এ বিষয়ে গুইমারার এক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, শীলং তো শুধু জুয়া নয়, এটি একটি মানি লন্ডারিং। আমাদের দেশের টাকা বাইরে পাচার হচ্ছে। এত আলোচনার পরও কেন শীলং নামক জুয়াটি বন্ধ করা যাচ্ছেনা তা তার বোধগম্য নয়। হাফছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান চাইথোয়াই চৌধুরী জানান, খেলাটি বন্ধের বিষয়ে তিনি সামাজিকভাবে চেষ্টা চালিয়েছেন।তবে এ জুয়ার কারণে নিঃস্ব হয়েছে অনেক পরিবার।

স্থানীয় সমাজকর্মী অংথোয়াই র্মামা অভিযোগ করেছেন, এসব জুয়াড়িদের কারণে এলাকায় অস্থিরতা বাড়ছে। উঠতি বয়সী তরুণরা বিপথগামী হচ্ছে। সামাজিক সংকট দেখা দিচ্ছে। টাকা পয়সাসহ সর্বস্ব লুটে ধীরে ধীরে নিঃস্ব করে দিচ্ছে পরিবারকে। এখনই জুয়ার কার্যক্রম বন্ধ হওয়া উচিত। ’ জুয়ার আড়ালে এসব এলাকায় ইয়াবা ও চোলাইমদ বিক্রি করা হয় বলে তার অভিযোগ রয়েছে। প্রশাসনের বিষয়ে নামে মাত্র অভিযান চালানোর অভিযোগ রয়েছে।

খেলার বেশ কয়েজন এজেন্ট এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় রামছুবাজার জৈবসার উৎপাদনকারী ক্লাবে ৭৮লক্ষ টাকার জুয়া চলে । প্রশাসন আগে সেট বন্ধ করুক বাকীটা পরে দেখা যাবে।

এদিকে উপজেলার রামছুবাজার জৈবসার উৎপাদনকারী ক্লাবে লটারীর নামে চলছে ৭৮লক্ষ টাকার জুয়া। ভাগ্য পরিক্ষার নামে সপ্তাহে ৩ হাজার গ্রাহক থেকে ১শত টাকা হারে ৩ লক্ষ টাকা এবং বছরে ২৬ সাপ্তাহে ৭৮ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে চলছে এ লটারী।

স্থানীয় ভুক্তভোগিরা জানান, নামকরা লোকদের নিয়ে একটি পরিচালনা কমিটি আছে।তাদের পিছনে রয়েছে প্রভাবশালী বিশেষ ব্যক্তিদের ছায়া। এ কারণে স্থানীয়রা ভয়ে মুখ খুলতে সাহস করেনা । প্রতি রবিবার বিকেল ৩টায় ওই সার উৎপাদনকারী ক্লাবে লোভনীয় পুরস্কারের নাম প্রদর্শন করে ড্রতে দেওয়া হয় ২/৩ হাজার টাকা দামের সামগ্রী।
রীতিমত প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুরষের লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এ লটারী। ইতি পূর্বেও দেওয়ান পাড়া ক্লাব ও সিন্দুকছড়িতে এধরনের লটারীর নামে জুয়া চালিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে লটারীর নামে জুয়ার কোন ধরনের অনুমতি না থাকায় মিশ্র প্রতিত্রিয়া রয়েছে এলাকায়। ২৬ সপ্তাহের মধ্যে ইতি মধ্যে কয়েক সপ্তাহ অতিবাহিত হয়েছে।কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রশাসনের থেকে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে তারা জানান।

এ বিষয়ে গুইমারা থানার অফিসার ইনর্চাজ(ওসি)বিদ্যুৎ বড়ুয়া জানান, শীলং জুয়াটি বন্ধে তিনি বেশ তৎপর রয়েছেন। জৈবসার উৎপাদনকারী ক্লাবের লটারী বন্ধে ইতিমধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আশা করছেন দ্রুত এ জুয়া গুলো বন্ধকরা সম্ভব হবে।

Exit mobile version