নিজস্ব প্রতিবেদক, মাটিরাঙ্গা :
পাহাড়ী-বাঙ্গালীসহ জনগোষ্ঠীর নারী-পুরুষ-শিশুসহ নানা বয়সী মানুষের বাঁধ ভাঙ্গা উপস্থিতিতে রঙিন হয়ে উঠছে গুইমারা সেনা রিজিয়ন আয়োজিত তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা। তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা যেন শুধুমাত্র আনন্দ-উৎসব নয় পাহাড়ি-বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর ভ্রাতৃত্ববোধ সুদৃঢ় করার ময়দানে পরিনত হয়েছে। পাহাড়ি-বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির মিলনমেলায় পরিনত হয়েছে গুইমারা রিজিয়ন স্পোর্টস কমপ্লেক্স।
গুইমারা রিজিয়ন আয়োজিত তিন দিনব্যাপী মেলার প্রথম দিনে শুক্রবার বিকালের দিকে মেলা মাঠ গুইমারা রিজিয়ন স্পোর্টস কমপ্লেক্সে গিয়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে। মানুষের উপস্থিতিই বলে দিচ্ছে মানুষে মানুষে সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতির সেতুবন্ধন রচনা করেছে গুইমারা রিজিয়ন স্পোর্টস কমপ্লেক্স।
শুক্রবার সকালে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে গুইমারার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে গুইমারা রিজিয়ন স্পোর্টস কমপ্লেক্সে গিয়ে শেষ হয়। পরে গুইমারা রিজিয়ন স্পোর্টস কমপ্লেক্সে বেলুন আর শান্তির পায়রা উড়িয়ে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করনে গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, এনডিসি, পিএসসি-জি।
এসময় গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, এনডিসি, পিএসসি-জি সাংবাদিকদের বলেন, তিন দিনব্যাপী এ উৎসব রিজিয়িন এলাকার শান্তি-সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় জোড়ালো অবদান রাখবে। পাশাপাশি পাহাড়-বাঙ্গালীসহ সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধকে জাগ্রত করবে।
এ সময় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, বিজিবি’র গুইমারা সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল জাবেদ সুলতান, সিন্দুকছড়ি জোন অধিনায়ক লে. কর্ণেল গোলাম ফজলে রাব্বি, মাটিরাঙ্গা জোন অধিনায়ক লে. কর্ণেল কাজী শামশের উদ্দিন পিএসসি জি, পলাশপুর জোন অধিনায়ক লে. কর্ণেল মোহাম্মদ খালিদ আহমেদ, লক্ষ্মিছড়ি জোন অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো. মিজানুর রহমান, বর্ডার গার্ড হাসপাতালের অধিনায়ক লে. কর্ণেল আব্দুল ওহাব, রামগড় জোন অধিনায়ক লে. কর্ণেল এম. জাহিদ রশিদ, যমিনীপাড়া জোন অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো. মাহমুদুল হক উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও সামরিক পদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, রিজিয়নের আওতাধীন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক-সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা নাগরদোলা, সাপ-বানরের খেলা, পুতুল নাচসহ হরেক রকম আয়োজন রয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য। পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী গ্রামীন জনপদের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনারও সুযোগ রয়েছে উৎসব মাঠে। একাধিক খাবারের দোকানও রয়েছে মেলা মাঠে। নানা বয়সীদের আনাগোনা যেন প্রাণের উচ্ছাসে মিলিত হয়েছে গুইমারা রিজিয়ন এলাকার বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠি মানুষ। মেলাকে ঘিরে সকলের মধ্যে লক্ষ্য করা গেছে উৎসবের আমেজ। নানা বর্ণের, নানা ঢঙে সেজে-গুজে সবাই ছুটছে মেলা প্রাঙ্গণে।
পাহাড়ের চাকমা, মারমা আর ত্রিপুরা জনগোষ্ঠি যখন স্ব-স্ব সামাজিক উৎসব নিয়ে মেতে উঠেছে তখন গুইমারা সেনা রিজিয়নের এমন উদ্যোগ রিজিয়নের আওতাধীন পাঁচ উপজেলা পাহাড়ি-বাঙ্গালী জনগোষ্ঠিকে এক সুতোয় বেঁধেছে এমনটাই মন্তব্য করেছে প্রথম দিনে মেলা মাঠে ঘুরতে সংবাদকর্মী সাগর চক্রবর্তী কমল। তার মতে উদ্যোগের অভাবে এখানকার মানুষ যখন বিনোদন থেকে পিছিয়ে তখন নিরাপত্তাবাহিনীর এমন উদ্যোগ শুধু বিনোদনই নয় সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতিকেও সুদৃঢ় করবে।
গুইমারা রিজিয়নের সিন্ধুকছড়ি থেকে আসা পঞ্চাশোর্ধ সুইনাছা মারমা বলেন, নিরাপত্তাবাহিনী আমাদের সুখে দুঃখে শুধু পাশেই থাকেনি বরং এখানকার মানুষের ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে যে মেলার আয়োজন করেছে তাতে আমরা খুবই খুশি। এমন আয়োজন আমাদের সাংগ্রাই উৎসবকে এগিয়ে দিয়েছে।
তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলায় রিজিয়নের আওতাধীন তিনটি সেনা জোন ও বিজিবির গুইমারা সেক্টরের অধীণ পলাশপুর জোনের নান্দনিক স্টল গুলো মেলায় আগতদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। সমানভাবেই মেলায় আগত দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য স্টলগুলোও।
পাহাড়ি এ জনপদে পাহাড়ি-বাঙ্গালীর মধ্যে শান্তি-সম্প্রীতি ও ঐক্য আরও সুদৃঢ় করতে গুইমারা রিজিয়ন আয়োজিত এ উৎসব চলবে আগমী রোববার পর্যন্ত এমনটাই জানিয়েছে পলাশপুর জোন অধিনায়ক লে. কর্ণেল মোহাম্মদ খালিদ আহমেদ। তিনি বলেন, উৎসবকে সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে গুইমারা রিজিয়নের এমন উদ্যোগ সবসময়ই অব্যাহত থাকবে।
দিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা মঞ্চে প্রতিদিনই মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে বলেও গুইমারা রিজিয়ন সূত্র নিশ্চিত করেছে।