parbattanews

গুচ্ছগ্রামের ‘বন্দিশালায়’ মানবেতর ৩০ বছর


শামীম হামিদ, খাগড়াছড়ি থেকে ফিরে:

নাম গুচ্ছগ্রাম হলেও আসলে ঘিঞ্জি বস্তি। চারপাশে নালা নর্দমার নোংরা পানি আর ময়লা আবর্জনা। বাতাসে মলমূত্রের কটূ গন্ধ। তার মধ্যেই কবুতরের খোপের মত ছোট ছোট ঘর। আট ফুট বাই ১২ ফুট সাইজের ঘরগুলোর মধ্যেই রান্নাবান্না ও থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা। কাঁচা পায়খানা, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগির খোঁয়াড়ও ওই একই ঘরে। গত ৩০ বছর ধরে এভাবেই মানবেতর জীবন যাপন করছে পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ির দিঘীনালা উপজেলার বাবুছড়ি ইউনিয়নের একটি গুচ্ছগ্রামের ৮১২টি পরিবার।

অথচ ৩০ বছর আগের চিত্র ছিল সম্পূর্ণ অন্যরকম। গুচ্ছগ্রামের অদূরে সোনামিয়া টিলায় প্রতিটি পরিবারেরই ছিল নিজস্ব বসতবাড়ি, চাষের জমি ও গাছ-গাছালির বাগান। বাড়ির শিশুরা স্কুলে যেত। বিকালে খেলার মাঠ শিশুদের কলকাকলীতে মুখরিত হয়ে উঠত। কিন্তু তাদের সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। তিন পার্বত্য জেলায় জেএএসএস, ইউপিডিএফসহ বিভিন্ন উপজাতীয় সংগঠনের মধ্যে আধিপত্যের লড়াই শুরু হয়। তাদের স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশকে ভেঙে স্বাধীন জুম্মল্যান্ড প্রতিষ্ঠা করা।

এই অবাস্তব স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা পার্বত্য চট্টগ্রামে পুনর্বাসিত বাঙালিদেরকে টার্গেট করে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটাতে থাকে। পাহাড়ে শান্তির জনপদগুলো একে একে রক্তে রঞ্জিত হয়ে উঠে। এরই ধারাবাহিকতায় এক পর্যায়ে খাগড়াছড়ির সোনামিয়া টিলার ৮১২টি বাঙালি পরিবারকে তাদের বসতভিটা থেকে উত্খাত হতে হয়। প্রশাসন মাত্র তিন মাসের কথা বলে তাদেরকে সরিয়ে নেয় বাবুছড়ার গুচ্ছগ্রামে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার সোনামিয়া টিলায় ফিরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি আজও পূরণ করতে পারেনি প্রশাসন।

শুধু তাই নয়, সোনামিয়া টিলায় বাঙালিদের জায়গা জমি দখল করে নিয়েছে পাহাড়ি সংগঠন ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা। সেখানে পাহাড়িরা একের পর এক ঘর বাড়ি, কিয়াং (বৌদ্ধ ধর্মীয় উপাসনালয়) বানাচ্ছে। বাঙালিদের লাগানো গাছ-গাছালি কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে। বাঙালিদের কাছ থেকে পদে পদে চাঁদা নিচ্ছে।

প্রশাসনের বক্তব্য

দিঘীনালা উপজেলা থানা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ শহিদুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, সরকার সোনা মিয়া টিলায় ৮১২টি বাঙালি পরিবারকে পুনর্বাসিত করেছিল। ওই জমিগুলো ধীরে ধীরে উপজাতীয়রা দখল করে নিয়েছে। কিয়াং, মন্দির বানানো হয়েছে। বাঙালিরা এখন তাদের জমি ফেরত চায়। কারণ গুচ্ছগ্রামে লোক সংখ্যা বেড়েছে। তাদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। এ নিয়ে উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে। সমস্যাটা অনেক গভীরে চলে গিয়েছে। যে কোনো সময় বড় ধরনের ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এটা আসলে স্থানীয় পর্যায়ে সমাধান সম্ভব নয়। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। সমস্যাটি মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।

  • সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক
Exit mobile version