parbattanews

মাটিরাঙ্গার গুচ্ছগ্রামে চাল পেয়ে উচ্ছ্বসিত প্রকৃত কার্ডধারীরা

গত দশ বছর আগে নিজের মেয়ের বিয়ে দিতে নিজের নামে বরাদ্দকৃত রেশন কার্ডটি স্থানীয় প্রভাবশালীর কাছে বন্ধক দেন আমতলী গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা মো. আবু তাহের। গত দশ বছর ধরে নিজের নামে রেশন কার্ড থাকলেও খাদ্যশস্য তুলতে পরেননি মো. আবু তাহের। একইভাবে নিজের চিকিৎসার জন্য নিজের রেশন কার্ডটি বন্ধক রাখেন শান্তিপুর গুচ্ছগ্রামের আব্দুল করিম। তিনিও দীর্ঘদিন ধরে রেশনে চাল ঘরে নিতে পারেননি। তিনিও নিজের নামে বরাদ্দকৃত রেশনের চাল তুলেছেন।

নিত্য অভাব-অনটনের সুযোগে প্রভাবশালীদের কাছে গুচ্ছগ্রামের ৭০-৮০ ভাগ রেশন কার্ডই বন্ধক দেওয়া। রেশন কার্ড বন্ধক এই অজুহাতে বছরের পর বছর ধরে সরকারি রেশন বঞ্চিত কার্ডধারীরা। এ পরিস্থিতিতে প্রকৃত কার্ডধারীদের হাতে রেশন পৌঁছানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন। আর এ নিয়ে স্বস্তির ঢেকুরও তুলছেন গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা সাধারণ জনগণ।

দীর্ঘ বছর পরে নিজের ঘরে রেশন কার্ডের খাদ্যশস্য ঘরে তুলতে পেরে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম ও মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিভীষণ কান্তি দাশ’র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে আমতলী গুচ্ছগ্রামের রেশন বিতরণ কেন্দ্রে কথা হয় মো. আবু তাহেরের সাথে। নিজের চাল ঘরে নিয়ে যেতে পেরে খুশি আমতলী গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা মো. আবু তাহের বলেন, প্রশাসনের উদ্যোগের ফলেই অনেক বছর পরে হলেও আমি আমার চাল পেয়েছি। বন্ধক দেয়ার পরে নিজে চাল তুলতে পারবো কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি। যা ভাবিনি তাই হলো। তার আগে শান্তিপুর গুচ্ছগ্রামের রেশন বিতরণ কেন্দ্রে কথা হয় রেশন কার্ডধারী মো. আব্দুল করিমের সাথে। তিনি জানান, করোনা প্রাদুর্ভাবের এ সময় এ চাল আমার সংসারের অভাব অনটন দুর করতে ভুমিকা রাখবে। গরীবের পক্ষে প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে সাহসী পদক্ষেপ বলছেন এ কার্ডধারী।

এর আগে গেল ৪ মে দুপুরের দিকে এক ভিডিও বার্তায় মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন ‘রেশন কার্ড যার, খাদ্য শস্য তার’। ২মিনিট ২৩ সেকেন্ডের ভিডিও বার্তায় বাঙালি গুচ্ছগ্রামের রেশন বিতরনে কোন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি সহ্য করা হবেনা বলেও জানান মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিভীষণ কান্তি দাশ। এ ভিডিও বার্তাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিজেদের নামে বরাদ্দকৃত খাদ্যশষ্য ঘরে তোলার ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে উঠেন গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা।

এদিকে করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনায় রেখে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে পরামর্শ করে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মহোদয় খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলায় বাঙালি গুচ্ছগ্রামে এপ্রিল-মে-জুন মাসের খাদ্যশস্যের আগাম বরাদ্দ প্রদান করেন। মাটিরাঙ্গা উপজেলায় তিন মাসের জন্য (এপ্রিল-মে-জুন) ৯৪৫.৪১৩ মে.টন চাল ও ১২৯১.২৩১ মে.টন গম বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। প্রত্যেক রেশন কার্ডধারী প্রতি মাসের বিপরীতে ৩৫.৯৫ কেজি চাল ও ৪৯.১০ কেজি গম পাবেন। গত ৬ মে (রবিবার) শুরু হয়েছে মাটিরাঙ্গার ২৩টি গুচ্ছগ্রামের খাদ্যশস্য বিতরণের কার্যক্রম।

এদিকে মহামারী করোনা প্রতিরোধে গৃহবন্দী অসহায় প্রকৃত কার্ডধারী মানুষের ঘরে রেশনের চাল পৌঁছে দিতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে পরামর্শ করে দুর্যোগকালীন সময়ে সাহসী ও ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিভীষণ কান্তি দাশ। এমন সিদ্ধান্তের পর থেকেই ইউএনওর প্রশংসায় পঞ্চমুখ মাটিরাঙ্গাবাসী। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ইউএনওর এমন সাহসী সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে উপজেলার সর্বস্তরের জনসাধারণ।

Exit mobile version