ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে ৭ জনের মৃত্যু, দুই শতাধিক জেলে নিখোঁজ

fec-image

* টেকনাফে বসতঘরের দেয়াল চাপায় একই পরিবারের ৪ জনের মৃত্যু * গাছের ডাল ভেঙে পড়ে চট্টগ্রামে দুজন ও টাঙ্গাইলে একজনের মৃত্যু

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মিধিলি উপকূলজুড়ে বয়ে যাওয়া ঝোড়ো বাতাস ও ভারী বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। গাছ ও দেয়াল চাপা পড়ে এখন পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। কক্সবাজারের টেকনাফে মাটির দেয়াল চাপা পড়ে একই পরিবারের ৪ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম ও টাঙ্গাইলে গাছের ডাল ভেঙে ৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) সকালে কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার ১ নম্বর ওয়ার্ড মরিচ্যাঘোনায় বসতঘরের মাটির দেয়াল চাপায় এক পরিবারের মা, তিন ছেলে-মেয়েসহ চার জনের মৃত্যু হয়েছে।

নিহতরা হলেন- ওই এলাকার ফকির মোহাম্মদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৫০), তার ছেলে শাহিদুল মোস্তফা (২০), মেয়ে নিলুফা ইয়াছমিন (১৫) ও সাদিয়া বেগম (১১)।

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে থেমে থেমে হাল্কা ও মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এতে হ্নীলা ইউনিয়নের মরিচ্যাঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনায় মাটির ঘরের দেয়াল চাপা পড়ে পাহাড়ের খাদে বসবাসকারী একই পরিবারের ৪ জন নিহত হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরো কয়েকজন। পরে খবর পেয়ে স্থানীয়রা চাপা পড়া মাটি সরিয়ে ৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আদনান চৌধুরী জানান, মর্মান্তিক এ ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবাকে আর্থিক সহয়তা প্রদান করা হবে। টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওসমান গণি জানান, দেয়াল চাপায় একই পরিবারের ৪ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো কয়েকজন।

শুক্রবার দুপুরে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলা পরিষদের গেটের সামনে ঝোড়ো বাতাসে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে রাজ্জাক মিয়া (৪০) নামের এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। রাজ্জাক মিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের মিরিকপুর গ্রামের কুসুম মিয়ার ছেলে। তিনি বাসাইলের কোটিপতি মার্কেটে কাপড়ের ব্যবসা করতেন।

বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করে গতকাল রাতে ঘূর্ণিঝড় মিধিলি গভীর নিম্নচাপ আকারে পটুয়াখালী এলাকায় অবস্থান করছিল। মিধিলি দুর্বল হয়ে যাওয়ায় মোংলা ও পায়রা বন্দরে দেওয়া ৭ নম্বর সতর্কতা সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর করা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বন্দরের ৬ নম্বর সতর্কতা সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর করা হয়েছে।

বঙ্গোপসাগরে ট্রলারডুবি, ২০ ট্রলারসহ নিখোঁজ দুই শতাধিক জেলে
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে মাছ ধরার ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া মিধিলির প্রভাবে আরও ২০টি ট্রলারসহ দুই শতাধিক জেলে এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে।

শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী ট্রলারডুবি ও জেলে নিখোঁজের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় থাকা গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তাল রয়েছে সাগর।

ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, ‘গতকাল রাতে বঙ্গোপসাগর মোহনায় বরগুনার পাথরঘাটার ছালাম মিয়া নামে এক ব্যক্তির এফবি নিশাত নামের মাছ ধরা ট্রলারটি প্রবল ধমকা হাওয়ার কবলে পড়ে উল্টে যায়। এ সময় পাশে অবস্থানরত অন্য একটি ট্রলারের জেলেরা তাদের উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসে। এছাড়াও পাথরঘাটা উপজেলার ২০টি মাছ ধরার ট্রলাসহ ২০০ জেলের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।’ তিনি আরও জানান, ‘সুন্দরবন এলাকার বিভিন্ন খালে শতাধিক ট্রলার নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান করছে। তবুও নিখোঁজ জেলে ও ট্রলারের খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।’

এদিকে দক্ষিণ স্টেশনে কোস্টগার্ড সূত্রে জানা যায়, নিখোঁজ ট্রলার ও জেলেদের খোঁজ নিতে অন্যান্য স্টেশনকে অবগত করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ঘূর্ণিঝড়, মিধিলি, মৃত্যু
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন