তদন্তে ধীর গতি # মামলায় জড়ানোর চেষ্টা নিরপরাধ ব্যক্তিদের

চকরিয়ায় হরিণ শিকার করে জবাই

কক্সবাজারের চকরিয়ায় হারবাং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে হরিণ শিকার করে জবাই করার ঘটনা ঘটেছে। বনাঞ্চাল থেকে চোরাই শিকারীরা হরিণ জবাই করে মাংস ভাগাভাগির পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়। গত তিন আগে সকাল ৮টার দিকে হারবাং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে নলবনিয়া বন এলাকা থেকে হরিণটি শিকার করার পরে হরিণটি সেখান থেকে আব্দুস সালাম নামক জৈনক ব্যক্তির বাড়িতে এনে জবাই করা হয়। এ সময় স্থানীয় সচেতনমহলের বরাত দিয়ে হারবাং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের বিট কর্মকর্তা কবির আহম্মেদ খবর পেলে দ্রুত উজ্জল ভাওয়াল ও লিটনসহ ৪জন বনরক্ষীকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। বনরক্ষীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে হরিণ শিকারের বিষয়ে সত্যতা পেলেও রহস্যজনক কারণে জবাইকৃত হরিণের মাংস জব্দ কিংবা কোন ধরনের আলামত সংগ্রহ না করে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। হরিণ শিকার করে জবাই করার বিষয়টি স্থানীয় এলাকাবাসী সাংবাদিকদের অবগত করলে সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, হারবাং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের নলবনিয়া পাহাড়ের পাশে ধান চাষ করেন হারবাং ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চরপাড়া এলাকার নুরুল আলমের ছেলে মো. সাজ্জাদ, ইদ্রিসের ছেলে মো. রিদুয়ান, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পন্ডিত্তা মুরা এলাকার আক্তার আহমদের ছেলে পুতু প্রকাশ ছোটন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নাপিতছিতা এলাকার বদিউর রহমানের ছেলে আলমগীর ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের লাল ব্রীজ এলাকার মৃত আব্দুস সালামের ছেলে মো. মিরান। ঘটনার দিন রাতে তারা ৪ জন মিলে বন্যপ্রাণীর আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে তাদের ধানক্ষেত পাহারা দিতে যায়। পরে ভোরবেলা সেখান থেকে বাড়িতে আসার পথে তারা নলবনিয়া পাহাড়ে একটি বন্য হরিণ দেখতে পায়। এ সময় তারা হরিণটিকে ধরতে ধাওয়া করলে হরিণের প্রাণ রক্ষার্থে দৌঁড়ে লালব্রীজস্থ বিপ্লব শীল নামক এক ব্যক্তির সেলুনের দোকানে ডুকে পড়লে সেলুনের সাঁটার টেনে দিয়ে হরিণটি ধরে ফেলেন তারা। পরেই হরিণটি মৃত আব্দুস সালামের ছেলে মিরানের বাড়িতে নিয়ে জবাই করে ভাগবাটোয়ারা করতে বসে। বিষয়টি মুঠোফোনে নিশ্চিত করেছেন সেলুন মালিক বিপ্লব শীল। এ সময় বন বিভাগের বনরক্ষীরা সেখানে পৌঁছালে তড়িঘড়ি করে জবাইকৃত হরিণের মাংসগুলো লুকাতে চেয়েও তারা ব্যর্থ হয়। পরে বনরক্ষীরা তাদের সাথে কথা বলে রহস্যজনকভাবে হরিণের মাংস, চামড়া কিংবা মাথা কোন কিছুই জব্দ না করে চলে যায়। জবাইকৃত হরিণটির ওজন ছিলো ১৮ কেজি ৬০০ গ্রাম। সাংবাদিকরা এ ব্যাপারে জানার পর চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের রেঞ্জ কর্মকর্তা বাহার উদ্দিনকে ঘটনার বিষয়ে অবগত করলে তিনি পুনরায় ঘটনাস্থলে হারবাং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের বিট কর্মকর্তা কবির আহমেদকে পাঠান। এরই মধ্যে চোরাই শিকারীরা হরিণের মাংস ভাগবাটোয়ারা করে যার যার বাড়িতে নিয়ে যায়। ওই সময় আলামত হিসেবে মৃত আব্দুস সালামের ছেলে মো. মিরানের বাড়ির আঙিনায় যে স্থানে হরিণটি জবাই করা হয়েছে, সেখান থেকে রক্তমাখা মাটি ও হরিণ জবাইয়ে ব্যবহৃত সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে বলে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।ঘটনার বিষয়ে জানতে হারবাং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের বনবিট কর্মকর্তা কবির আহমেদের সাথে যোগাযোগ করতে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন নাম্বারে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এদিকে, স্থানীয়দের বরাত ও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের নাম রহস্যজনকভাবে বাদ দিয়ে নিরীহ কয়েকজনের নাম সংযুক্ত করে আইনগত পদক্ষেপের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে বিট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।এ বিষয়ে অবগত হওয়ার পর চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের রেঞ্জ কর্মকর্তা বাহার উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, হরিণ শিকারের ঘটনায় আমাদের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। এখানে কোন নিরপরাধ ব্যক্তির বিচলিত হওয়ার দরকার নেই। প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করে সংশ্লিষ্ট বন আইনে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঘটনাপ্রবাহ: চকরিয়া
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন