চকরিয়ায় ফসলি জমি কেটে মাটি হরিলুটের মহোৎসব

fec-image

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের অদূরে বগাচতর মৌজায় ব্যক্তি মালিকানাধীন ফসলি জমি কেটে মাটি লুটের মহোৎসব থামানো যাচ্ছেনা। ইতোপুবে উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত সেখানে অভিযান চালিয়ে লাখ টাকার বেশি জরিমানা করলেও স্থানীয় প্রভাবশালী মহল আবারও জমি মালিক ও কৃষকদের বাঁধার মুখে ফসলি জমি কেটে লুটের চেষ্ঠা চালাচ্ছে।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী একাধিক চক্র উন্নয়ন প্রকল্পের অজুহাতে গেল ছয়মাস ধরে উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক সংলগ্ন বেশ কিছু পাহাড় এবং চাষের জমি কেটে অন্তত শতকোটি টাকার মাটি লুটে নিয়েছে। জড়িতরা বেশিরভাগই সরকারি দলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। সেই কারণে পাহাড় টিলা ও চাষের জমি লুটের মহোৎসব চালালেও তাদের বিরুদ্ধে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা বনবিভাগ এই পর্যন্ত কার্যকর কোন আইনী পদক্ষেপ নেয়নি।

এই সুযোগে প্রভাবশালী চক্রের লোকজন এলাকার কিছু কিছু মালিকদের কাছ থেকে জমি বর্গা নিয়ে শক্তিশালী স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে লুটে নিয়েছে। তাতে আবাদি জমি শ্রেণি পরিবর্তনের কারণে পুকুরে পরিণত হয়েছে। এই অবস্থায় মাটি লুটের আশপাশের অন্তত হাজার একর চাষের জমি ভেঙে ছড়াখালে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এতে চাষের জমি রক্ষা করতে চরম হিমশিম খাচ্ছেন ভুক্তভোগী জমি মালিক ও চাষিরা।

বর্তমানে বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই কেটে নেয়া ওই জমির অংশে ছড়াখালে পরিণত হয়েছে। তাতে অবশিষ্ট থাকা জমির (ধানক্ষেত) ফসলও সৃষ্ঠ ছড়াখালে বিলীন হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী জমি মালিকরা। এব্যাপারে ভুক্তভোগী জমি মালিকপক্ষ উচ্চ আদালতে (হাইকোটে) রিট মামলা করলেও করোনাকালীন সময়ে মামলার শুনানী না হওয়ার সুযোগে অভিযুক্ত মহলটি আবারও সেখান থেকে জমি কেটে মাটি লুটের চেষ্ঠা চালাচ্ছে।

এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনী প্রতিকার চেয়ে সর্বশেষ ৩ আগস্ট চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন রেজাউল কবির চৌধুরী নামের ভুক্তভোগী এক জমি মালিক। বাদি রেজাউল কবির উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মাইজপাড়া গ্রামের মরহুম এনামুল হক চৌধুরীর ছেলে। আর অভিযোগটিতে বিবাদি করা হয়েছে সাতজনকে। তারা হলেন একই ইউনিয়নের বাসিন্দা সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাইফুল এহেছান চৌধুরী, তার ভাই মাইদুল এহেছান চৌধুরী, সহযোগী সজিব, রেজাউল ওরফে সোনা মিয়া, নেজাম উদ্দিন, বদিউল আলম ও জিয়াউল করিম।

ইউএনও’র দপ্তরে দায়ের করা লিখিত অভিযোগে জমি মালিক রেজাউল কবির চৌধুরী দাবি করেন, ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বগাচতর মৌজার বিএস ৬২ খতিয়ানের কিছু জমি নিয়ে বিবাদী পক্ষের সঙ্গে তাদের বিরোধ আছে। বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে একটি মামলাও হয়েছে। কিন্তু অভিযুক্তরা করোনা সময়ে আদালতের কার্যক্রম ধীরগতি হচ্ছে দেখে কৌশলে প্রভাব দেখিয়ে আমাদের পৈত্রিক জমি কেটে লাখ লাখ ঘনফুট মাটি লুটে নিয়ে গেছে। এখনো তারা উল্লেখিত খতিয়ানের ৭০০, ৭০১, ৭০২ ও ৫৮৪ দাগের আমাদের জমি থেকে মাটি লুটের জন্য অপচেষ্ঠা চালিয়ে আসছে।

ভুক্তভোগী জমি মালিক অভিযোগ তুলেছেন, বর্তমানে বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই কেটে নেয়া ওইজমির অংশে ছড়াখালে পরিণত হয়েছে। তাতে অবশিষ্ট থাকা জমির (ধানক্ষেত) ফসলও সৃষ্ঠ ছড়াখালে বিলীন হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ঠ হচ্ছে, তেমনি অপরদিকে আমাদের জমির শ্রেণী পরিবর্তন হচ্ছে। এই অবস্থায় আমাদের অপুরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে মঙ্গলবার বিকালে বিবাদী পক্ষের সাইফুল এহেছান চৌধুরীর মুঠোফোনে (০১৭…………..৫৪) একাধিকবার চেষ্ঠা করা হয়। কিন্তু তার মোবাইল ফোনের সংযোগ বন্ধ থাকায় বক্তব্য জানা সম্ভব হযনি।

বিষয়টি প্রসঙ্গে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ সামসুল তাবরীজ বলেন, ডুলাহাজারা ইউনিয়নের সাফারি পার্ক লাগোয়া বগাচতর এলাকা থেকে পাহাড় ও আবাদি জমি কেটে মাটি লুটের ঘটনায় সত্যতা পেয়ে ইতোপুর্বে সেখানে অভিযান পরিচালনা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে মাটিভর্তি ডাম্পার ট্রাক জব্দ করে জরিমানাও করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আদালতের অভিযানের পর সেখানে মাটি কাটা বন্ধ ছিল। তবে নতুনভাবে ভুক্তভোগী জমি মালিক বাদি হয়ে দায়ের করা লিখিত অভিযোগের আলোকে তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন