চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২ বছর বন্ধ এক্স-রে কার্যক্রম: চরম ভোগান্তি
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে অবকাঠামোগত ৫০ শয্যা থেকে ১শ শয্যায় উন্নীত হয়েছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সময়ের পরিক্রমায় নিত্যদিন বেড়ে চলছে রোগী, বাড়ছে রোগীদের সেবার কার্যক্রম।
তবে একটি প্রিন্টার মেশিনের অভাবে চালু করা যাচ্ছেনা এক্স-রে কার্যক্রম। ফলে সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ রোগীরা। প্রয়োজনের তাগিদে বাইরে থেকে এক্স-রে করাতে গিয়ে রোগীদের দিতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। ফলে উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার সেবাগ্রহীতা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা পলাশ সুশীল জানান, ২০২০ সালে এই হাসপাতালে একটি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন স্থাপন করা হয়। এরপর ২০২১ সালের জুলাই মাসে মেশিনটির জন্য একজন টেকনিশিয়ান নিয়োগ দেয়া হয়। সব কিছু থাকলেও শুধু নেই একটি প্রিন্টার মেশিন। ফলে এই প্রিন্টার মেশিনের জন্য দীর্ঘ দুইবছর ধরে চালু করা যাচ্ছেনা এক্স-রে মেশিনটি। এমতাবস্থায় অনেকটা বসে বসে দিন পার করছেন এক্স-রে টেকনিশিয়ান শহিদুল ইসলাম।
তিনি আরও বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি একটি প্রিন্টার মেশিনের ব্যবস্থা করেন তাহলে আমরা রোগীদের এক্স-রে সেবা দিতে পারবো।
হাসপাতালের এক্স-রে টেকনিশিয়ান শহিদুল ইসলাম বলেন, ২০২০ সালে এই হাসপাতালে প্রথম ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন স্থাপন করা হয়। গত বছরের জুলাই মাসে এই হাসপাতালে যোগদান করি এক্স-রে টেকনিশিয়ান হিসেবে। ডিজিটাল মেশিনটির সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও একটি প্রিন্টার মেশিনের অভাবে চালু করা সম্ভব হচ্ছেনা এক্স-রে মেশিনটি।
হাসপাতালে আসা সাধারণ রোগীরা জানান, ডাক্তাররা এক্স-রে দিলে বাহির থেকে এক্স-রে করে নিয়ে আসতে হয়। এতে আমাদের অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে। এছাড়াও রোগীকে এদিক-ওদিক ছুটতে হচ্ছে বারবার। এতে করে ভোগান্তিও বাড়ছে। হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন ও টেকনিশিয়ান থাকা স্বত্ত্বেও রোগীদের ভোগান্তি যেন অন্ত নেই। শুধুমাত্র একটি প্রিন্টার মেশিনের জন্য এক্স-রে করা সম্ভব হচ্ছেনা। স্বল্প দামের টাকায় হয়তো পাওয়া যাবে প্রিন্টার মেশিনটি। এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা হতদরিদ্র রোগীরা জানায়, চিকিৎসা সেবা নেয়ার সময় ডাক্তাররা এক্স-রে পরীক্ষা দিলে প্রয়োজনের তাগিদে তা বাহির থেকে করে আসতে হয়। এতে আমাদের দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। এছাড়া বাহির থেকে এক্স-রে করাতে গিয়ে রোগীকে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে হওয়ায় পোহাতে হচ্ছে বাড়তি ভোগান্তি।
অনেক রোগী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,এই হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন রয়েছে, টেকনিশিয়ানও রয়েছে। শুধু নেই একটি প্রিন্টার মেশিন। এই প্রিন্টার মেশিনের জন্যই এক্স-রে কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হচ্ছেনা। এ ব্যাপারে তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন অনেক অসহায় ভোক্তভোগী রোগী।
চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শোভন দত্তের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসপাতালে যোগদান করেছি বেশ কয়েকদিন হলো। হাসপাতালে ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন এবং টেকনিশিয়ানও রয়েছে। নেই শুধু একটি প্রিন্টার মেশিন। যার জন্য এক্স-রে মেশিনটি চালু করা যাচ্ছেনা। বিষয়টির ব্যাপারে আমার আগের কর্মকর্তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে থাকলে আমি লিখিতভাবে সিভিল সার্জনের কাছে অভিহিত করবো। যোগদানের পর থেকে আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করছি হাসপাতালে আগত রোগীরা যেন স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, চকরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিষয়টির ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে এ ব্যাপারে তড়িৎ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।