চরম অব্যবস্থাপনায় খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেল লোকসানের পাহাড়
চরম অব্যবস্থাপনায় হাবুডুবু খাচ্ছে খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেল। সংস্কারে অভাবে হোটেলের রুমগুলো ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। রেস্টুরেন্টের রান্না ঘর যেন ডাস্টবিন। এমন অব্যবস্থাপনায় পর্যটকরা বিমুখ হওয়ায় মাসের পর মাস লোকসান করে যাচ্ছে এক সময়কার লাভের এই প্রতিষ্ঠানটি। স্থানীয় বেসরকারি হোটেলগুলো লাভ করলেও মাত্র ৬ মাসে খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেল লোকসান করেছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা। লাভের প্রতিষ্ঠান লোকসানে পরিণত হওয়াকে কর্তৃপক্ষের গাফেলতিকে দায়ী করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
এখন পর্যটকের ভরা মৌসুম। খাগড়াছড়ির প্রতিটি পর্যটন স্পর্ট হাজারো পর্যটকের পদচারণায় মুখর। খাগড়াছড়ির প্রতিটি বেসরকারি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে পর্যটকে ঠাসা। লাভ করছে বেসরকারি হোটেল ও রেস্টুরেন্ট মালিকরা। পক্ষান্তরে জেলার একমাত্র সরকারিভাবে স্থাপিত পর্যটক মোটেলটি পর্যটকের অভাবে হাবুডুবু খাচ্ছে। কোন বুকিং নেই।
২০০৬ সালের ১১ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া খাগড়াছড়ি শহরের চেঙ্গী নদীর তীরে মনোরম পরিবেশে নির্মিত খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলটি উদ্বোধন করেন। বিলাস বহুল এই মোটেলে রয়েছে ভিআইপিসহ ২৫টি রুম, সু-বিশাল রেস্টুরেন্ট ও কনফারেন্সর রুমসহ অন্যান্য সুবিধা। কিন্তু গত সাড়ে ১৫ বছরে একবারও সংস্কার হয়নি এ মোটেলটি। ফলে মোটেলের সবগুলো রুম এখন অনেকটা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। থাকছে না পর্যটকরা। মোটেলের যাওয়ার রাস্তাটিও সংস্কার না হওয়ায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ফলে দিন দিন লোকসানের পাহাড় হচ্ছে পর্যটক মোটেলটি।
পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো খাগড়াছড়িতে রয়েছে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র, রহস্যময় গুড়া, জেলা পরিষদের ঝুলন্ত সেতু, মায়াবিনি লেক, মাতাই কপাল ও দেবতা পুকুরসহ অনেক আকর্ষণীয় স্থান।
খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলের ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার মজুমদার জানান, গত ৬ মাসের খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলটি প্রায় ৫০ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে। বিষয়টি নিজেই স্বীকার করেছেন খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলের ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার মজুমদার। তিনি বলেন, মোটেলটি সংস্কার করে ব্যবহার উপযোগী করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বহুবার জানানো হয়েছে।
খাগড়াছড়ি পর্যটন সমন্বয় সমিতির সদস্য সচিব উজ্জল দে বলেন, পর্যটকরা সাজেক আসা-যাওয়ার পথে খাগড়াছড়ির আকর্ষণীয় পর্যটন স্পর্টগুলো ঘুরে দেখেন ও খাগড়াছড়িতে রাত্রী যাপন করেন। কিন্তু বিলাস বহুল পর্যটন মোটেলটি থাকা ও খাওয়ার অযোগ্য হওয়ার কারণে বেছে নেয় বেসরকারি হোটেল রেস্টুরেন্ট। এ কারণে বেসরকারি হোটেলগুলো আর্থিকভাবে লাভের মুখ দেখলেও টানা লোকসানের মুখে সরকারিভাবে স্থাপিত পর্যটন মোটেলটি।
খাগড়াছড়ির আবাসিক হোটেল অরণ্য বিলাসের ব্যবস্থাপক আব্দুর রশীদ সাগর বলেন, পর্যটন মৌসুম শুরু হওয়ার পর প্রতিদিন গড়ে ৭০-৮০ ভাগ বুকিং থাকছে। এত করে খাগড়াছড়ির পর্যটক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো আশার আলো দেখছে।
খাগড়াছড়ির প্রবীন সাংবাদিক ও খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সভাপতি তুরুন ভট্টাচর্য্যরে অভিযোগ, বিগত সাড়ে ১৫ বছর খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলের প্রতি কোন নজর দেওয়া হয়নি। মোটেলে বর্তমান ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার মজুমদার যোগদানের পর মোটেলের অব্যবস্থাপনা আরো চরমে পৌছেছে। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন অভাবে রান্না ঘর পরিণত হয়েছে ডাস্টবিনে।
খাগড়াছড়ির পর্যটন মোটেলকে আগের মতো লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হলে কর্তৃপক্ষকে দায়িত্বশীল হওয়ার আহবান জানান তিনি।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ও পর্যটন কর্রপোরেশনের আহ্বায়ক মো: সহিদুল ইসলাম সুমন বলেন, স্বৈরাচার রেজিম সারাদেশে যেভাবে অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাটের মাধ্যমে সরকারি প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে গেছে, তেমনি খাগড়াছড়ি পর্যটন কর্পোরেশনের একমাত্র মোটেলটি ও অনিয়ম ও দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানকেক অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে গেছে।
তিনি অভিযোগ করেন, গত ১৫/১৬ বছরে খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলটির নূন্যতম একটু ঘষামাজাও করা হয়নি। ভবন ও ফার্নিচারের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এটি একটি পরিত্যক্ত ভবন। তিনি জেলা পরিষদ, পর্যটন কর্পোরেশনের প্রতিনিধি, জেলা প্রশাসন ও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধি সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান। সরকারের নজড়দারী ও যোগ্য ব্যবস্থাপক পোস্টিং -এর মাধ্যমে খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলটি আবার লাভের মুখ দেখবে এমনি প্রত্যাশা খাগড়াছড়ি জেলাবাসী।