parbattanews

চরম দূর্ভোগ ও আতংকে টেকনাফর শাহপরীর দ্বীপবাসী

মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, টেকনাফ:

টেকনাফ শাহপরীরদ্বীপ পূনির্মার জো’র পানিতে ডুবে গেছে। চরম আতংকে দিন কাটাচ্ছে ৪০ হাজার মানুষ। একদিকে নাফনদী অপর দু’দিক থেকে বঙ্গোপসাগর। পশ্চিম, দক্ষিন ও পূর্বদিক থেকে পানির তোড়ে ইতিমধ্যে বেড়ীবাঁধ ভাঙ্গনের ফলে অনেক বাড়ী-ঘর, মসজিদ ও সড়ক বিধ্বস্থ হয়ে সাগরে বিলীন হয়েছে। আতংক, উৎকন্ঠায় ও দিশেহারা হয়ে বাপ-দাদার ভিটে সম্পত্তি ছেড়ে দিক-বিদিক নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে দ্বীপের মানুষ।

এছাড়া সাগরের পানিতে নতুনভাবে প্লাবিত হচ্ছে সাবরাংয়ের বেশ কয়টি এলাকা। ফলে আতংকে দিন কাটাচ্ছে সাবরাংয়ের সাধারন মানুষও। বৃহস্পতিবার সরেজমিন শাহপরীরদ্বীপ ঘুরে দেখা যায়, সাগরের লবনাক্ত জোয়ারের পানি ঢুকে ডুবে একাকার। প্রধান সড়কটি ভেঙ্গে গিয়ে মূল ভূখন্ডের সাথে বিচ্ছিন্ন রয়েছে দ্বীপটি এবং পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় তলিয়ে আছে ফসলি জমি, পুকুর ও অধিকাংশ বাড়ী-ঘর। দূর্ভোগ আর দূঃচিন্তায় দেখা গেছে দ্বীপবাসীকে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন এ অবস্থা এক সপ্তাহ বা এক মাস নয়। গত বর্ষা থেকে চলে আসছে তাদের এ দূর্ভোগ ও কষ্টের দিন।

শাহপরীরদ্বীপের স্থানীয় ইউপি মেম্বার আবদুস সালাম জানান, গত ১৭ আগষ্ট থেকে বৈরী আবহাওয়া ও একটানা বর্ষণের সাথে ‘জো’ এর সাগরের জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় পানির উচ্চতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে শাহপরীরদ্বীপ ও সাবরাং এর উপকুলবর্তী গ্রাম উত্তর-দক্ষিন জালিয়াপাড়া, পশ্চিমপাড়া, ঘোলাপাড়া, উত্তর পাড়া, ডাঙ্গারপাড়া, কচুবনিয়া, হারিয়াখালী, লাফারঘোনা, পুর্ব নয়াপাড়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় সাগরের জোয়ারের পানি ঢুকে বসতঘর, পানবরজ, ধান ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ইমার্জেন্সী ওয়ার্কের মাধ্যমে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ ও সারাংয়ের উপকুলীয় বেড়িবাঁধ সংস্কার ও মেরামত করা না হলে তা যেকোন সময়ে সম্পুর্ণ বিধ্বস্থ হয়ে জানমালের অপুরণীয় ক্ষতি হওয়ার আশংকা রয়েছে। সেই সাথে মূল ভূখন্ড সাগরে বিলীন হয়ে ভূমিহীন ও বেকারত্বের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এছাড়া শাহপরীরদ্বীপের জালিয়া পাড়ার বেড়ীবাঁধের বেশ কয়টি অংশ নতুনভাবে দ্বীপবাসীর আতংক বেড়ে গেছে। ইতিমধ্যে দক্ষিন অংশের বেশ কয়টি বসত-বাড়ী বিধ্বস্থ হয়ে নদীর গর্ভে চলে গিয়াছে। একমাত্র জামে মসজিদটি পানির তোড়ে ভেঙ্গে গেছে। ফলে দিন রাত উৎকন্ঠায় দিন কাঠাচ্ছেন সাধারন মানুষ। এদিকে খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, শুধু শাহপরীরদ্বীপ ও সাবরাং নয়, টেকনাফ পৌর এলাকা, হ্নীলা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নে বেড়িবাঁধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে ডুবে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ইতিমধ্যে একবছর পেরিয়ে গেলেও সরকাররের পক্ষ থেকে বেড়িবাঁধ নির্মাণে এখনো কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ সকল মানুষের খোঁজ ও বেড়ীবাঁধ নির্মাণের বার বার আশ্বাস দিয়ে আসলেও এখনো ভাঙ্গন ঠেকাতে প্রয়োজনীয় কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। বেড়ীবাঁধের দাবিতে দিন দিন ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছেন দ্বীপের হাজার হাজার সাধারন মানুষ। শাহপরীরদ্বীপের কয়েক বাসিন্দা জানান, লোকালয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় তলিয়ে গেছে মানুষের ঘর ভিটা, ফসলি জমি, মাছের ঘের, পুকুর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ গুরুপ্তপূর্ন স্থাপনা। ইতিমধ্যে পশ্চিম পাড়ার ও জালিয়াপাড়ার জামে মসজিদসহ বেশ কয়টি ঘরবাড়ী সাগরের পানির তোড়ে ভেঙ্গে সাগরের সাথে একাকার হয়ে গেছে।

শাহপরীরদ্বীপ ছেড়ে অনেক পরিবার অনত্র আশ্রয়ও নিয়েছে। দলে দলে ছেড়ে যাচ্ছে অনেক পরিবার। আর যারা রয়ে যাচ্ছেন তারা বন্ধি হয়ে দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে আরো জানা যায়, প্রত্যেক দিন ও রাতে ২ বার জোয়ারের পানিতে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া, মাঝরপাড়া, দক্ষিণপাড়া, ঘোলাপাড়া, জালিয়াপাড়াসহ, টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়ক জোয়ারের পানিতে ডুবে আছে। প্রয়োজনের সাপেক্ষে শাহপরীরদ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দারা নৌকা নিয়ে সড়ক পারাপার করছে। জোয়ারের পানিতে শাহপরীরদ্বীপ নিয়মিত প্লাবিত হয়ে শত শত বাড়ীঘর , শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্টান ধ্বংস হচ্ছে।

অবহেলার কারণে হয়ত একদিন ঘোলার চর বদর মোকামের মতো দেশের মানচিত্র হতে মুছে যেতে পারে শাহপরীর দ্বীপের ভূ-খন্ড। সরকারকে দেশের ভু-খন্ড রক্ষার্থে ও জনস্বার্থে অতি শীগ্রই পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে বলে মনে করেন সচেতন মহল।

Exit mobile version