চীন পাকিস্তানের ট্রাইড এন্ড টেস্টেড বন্ধু রাষ্ট্র

fec-image

পাকিস্তান আর চীনের সামরিক সহযোগিতার বয়স প্রায় ৬০ বছর। চীন পাকিস্তানের ট্রাইড এন্ড টেস্টেড বন্ধু রাষ্ট্র।

৬০ আর ৭০ এর দশকে চীন পাকিস্তানের কাছে ট্যাংক, যুদ্ধ বিমান, ন্যাভাল বোটস আর স্মল আর্মস রপ্তানি করলেও, ৯০ এর দশকে তারা যৌথ ডেভেলপমেন্ট শুরু করে। যার একটি হচ্ছে জেএফ-১৭ ফাইটার জেট।

কিভাবে পাকিস্তান আর চীন জেএফ-১৭ (যা চীনে এফসি-১ নেম পরিচিত) যৌথ ভাবে ডেভেলপ করেছে তা আমাদের জানা দরকার।
১৯৮০’র দশকে পাকিস্তানের পুরনো মিরাজ এবং এফ-৭ বিমান প্রতিস্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সেই সময় চীনের চেংডু এয়ারক্রাফট কর্পোরেশন (CAC) (যারা J-10C বানায়, যা রিসেন্ট ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে ভারতের রাফায়েল বিমান ধ্বংস করেছে) তাদের এফসি-১ (জে-৭ এর উত্তরসূরি) প্রকল্প নিয়ে কাজ করছিল।

৯০ দশকের শুরুতে পাকিস্তান ঠিক করে চীনের এফসি-১ আমদানি না করে তারা চীনের সাথে যৌথ ডেভেলপমেন্টে যাবে। এই মর্মে ১৯৯৫ সালে পাকিস্তান এয়ারোনটিক্যাল কমপ্লেক্স (PAC) এবং CAC জেএফ-১৭ (চীনে এফসি-১) যৌথভাবে ডেভেলপ করার লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) সাক্ষর করে। পাকিস্তানের লক্ষ্য তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সাশ্রয়ী একটি মাল্টিরোল ফাইটার জেট।

ঠিক হয় প্রাথমিক পর্যায়ে, পাকিস্তান এবং চীন উভয়ে অর্থায়ন করবে। পাকিস্তান প্রায় ৫০% ডেভেলপমেন্ট খরচ বহন করে (প্রায় $১৫০ মিলিয়ন), যা ডিজাইন, প্রোটোটাইপ এবং টেস্টিংয়ে ব্যবহৃত হয়। চীন বাকি খরচ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।

পরবর্তী পর্যায়ে পাকিস্তান কামরা ক্যান্টনমেন্টে PAC উৎপাদন স্থান স্থাপনে (ম্যানুফ্যাকচরিং সাইট) বিনিয়োগ করে। কিন্তু ইঞ্জিন (RD-93) এবং অ্যাভিওনিক্স সরবরাহ করে চীন। কামরা হলো পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে অবস্থিত একটি শহর। পাকিস্তান এয়ারোনটিক্যাল কমপ্লেক্স (PAC) এর কারণেই কামরা পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য বিখ্যাত, যেখানে জেএফ-১৭ থান্ডার ফাইটার জেটের উৎপাদন এবং এ বিষয়ে প্রচুর সমাবেশ হয়।

এই পুরো সময়ে পাকিস্তানি ইঞ্জিনিয়ারদের ভূমিকা ছিলো উল্লেখযোগ্য। ১৯৯৫-১৯৯৯ সাল ছিলো ডিজাইন পিরিয়ড। পাকিস্তানি ইঞ্জিনিয়াররা এই পর্যায়ে অপারেশনাল প্রয়োজনীয়তা বা ডিজাইন/পারফরমেন্স স্পেসিফিকেশন নির্ধারণে অংশ নেয়, তারা চীনা ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে প্রতিটি ডিজাইন রিভিউতে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে।

আমেরিকাতেও বিভিন্ন কোম্পানি মিলেই সকল ওয়েপন্স সিস্টেম যেমন মিসাইল, জেট, ট্যাংক ইত্যাদি বানায়। বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন সাব-সিস্টেম বানায়, আর এক কোর কোম্পানি সব সাবসিস্টেমকে একসাথে ইন্টিগ্রেট করে, যা পরে টেস্টিং এ যায়। আর এই সব কোম্পানির ডেডিকেটেড ইঞ্জিনিয়াররা ঘনিষ্ঠভাবে স্পেক নির্ধারণ করে, ডিজাইন রিভিউতে অংশগ্রহণ করে।

১৯৯৯-২০০৩ সাল পর্যন্ত চলে জেএফ-১৭ এর প্রোটোটাইপ বিল্ডিং ও টেস্টিং ফেইজ। পাকিস্তানি ইঞ্জিনিয়াররা ফ্লাইট টেস্টিং, সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন (যেমন KLJ-7 রাডার) এবং স্থানীয় অস্ত্র পরীক্ষায় অংশ নেয়। ২০০৩ সালে প্রথম ফ্লাইট টেস্ট হয়, যা ছিলো জেএফ-১৭ এর জন্য একটা উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।

২০০৭ সালে পাকিস্তানের বিমান বাহিনীর কাছে প্রথম জেএফ-১৭ হস্তান্তর করা হয়। পাকিস্তানি ইঞ্জিনিয়াররা কামরা ক্যান্টনমেন্টে সংগঠিত প্রতিটি জেএফ-১৭ সমাবেশে অংশগ্রহণ করে; তার এর উৎপাদনের কোয়ালিটি কন্ট্রোল এবং আপগ্রেড (যেমন ব্লক II/III) পরিচালনা করে।

২০১৫-২০২০ সালে ব্লক II এবং ব্লক III ভ্যারিয়েন্ট ডেভেলপ হয়, যেখানে AESA রাডার এবং উন্নত অ্যাভিওনিক্স যুক্ত হয়। বর্তমানে (২০২৫) জেএফ-১৭ ব্লক III উৎপাদন ও স্থাপনা চলছে। ব্লক III-তে AESA রাডার, PL-15 মিসাইল ইন্টিগ্রেশন, এবং উন্নত ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম যুক্ত হয়েছে। পাকিস্তান নতুন ভ্যারিয়েন্ট বা আপগ্রেড নিয়ে কাজ করছে। এই ফাইটার জেটকে বলা হচ্ছে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর মেরুদণ্ড।

প্রতিটা নর্মাল ডেভেলপমেন্ট ফেইজ, ফ্রম প্রটোটাইপ টু ফার্স্ট ইউনিট প্রোডাকশন টু ফুল প্রোডাকশন সব হয় পাকিস্তানের মাটিতে, যদিও ইঞ্জিন আর এভিওনিক্স আসে চীন থেকে। MoU থেকে প্রোডাকশনে যেতে সময় লাগে ১২ বছর।

পাকিস্তান বিমান বাহিনীর কাছে বর্তমানে ১৫০+ ইউনিট জেএফ-১৭ আছে। PAC কামরা প্রতি বছর ১২-১৫টি বিমান উৎপাদন করে।
প্রতিটি জেএফ-১৭ ব্লক II এর দাম প্রায় $২৫-৩০ মিলিয়ন; উন্নত সিস্টেমের কারণে ব্লক III এর দাম $৩৫-৪০ মিলিয়ন।
নাইজেরিয়া ২০২১ সালে ৩টি ব্লক-II জেট ডেলিভারি পেয়েছে। কেবল তিনটা বিক্রি করেই পাকিস্তান আয় করেছে প্রায় $১৮৪ মিলিয়ন। মিয়ানমার অর্ডার করেছে ১৬ টা ব্লক-II। আর এই পর্যন্ত ডেলিভারি নিয়েছে ৭ টা।
JF-17 ব্লক III এর সুবিধা হলো এর উন্নত প্রযুক্তি, সাশ্রয়ী মূল্য এবং অপারেশনাল ফ্লেক্সিবিলিটি। যা পাকিস্তানের আকাশসীমা শত্রুমুক্ত রাখতে নিজেদের অভ্যন্তরে উৎপাদিত কার্যকর একটি যুদ্ধবিমান।

সুত্র: লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: চীন, পাকিস্তান
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন