চুক্তি নিয়ে সব পক্ষের সাথে আলোচনা জরুরী: এ কে এম মকছুদ আহমেদ

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২ যুগ পূর্তি উপলক্ষে চুক্তির নানান দিক নিয়ে পার্বত্য নিউজের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সাংবাদিক এ কে এম মকছুদ আহমেদ। তার সাক্ষাৎকারে চুম্বুক অংশ পার্বত্য নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলেো:
পার্বত্য নিউজ: পার্বত্য চুক্তির ২ যুগ পূর্তিতে পাহাড়ের পরিস্থিতি কেমন দেখছেন?
এ কে এম মকছুদ আহমেদ: চুক্তির বেশিরভাগ অংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। চুক্তির পরবর্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকান্ড ত্বরান্বিত হয়েছে। যোাগাযোগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে । কিন্তু চুক্তির যে মূল উদ্দেশ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধান তা কতটুকু অর্জন হয়েছে সে প্রশ্ন এখানো রয়েই গেছে। সরকার চুক্তির সিংহভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে দাবি করলেও চুক্তি বাস্তবায়ন প্রশ্নে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে অসেন্তাষ রয়েছে । এ নিয়ে গত এক দশক ধরে সরকার ও জেএসএস এর মধ্যে দুরত্ব বেড়েই চলেছে । চুক্তি বাস্তবায়নের স্বার্থে দুই পক্ষের মধ্যে দূরত্ব কমাতে হবে।
পার্বত্য নিউজ: চুক্তি নিয়ে পার্বত্যবাসীর অনেকের আপত্তি আছে এ অবস্থায় চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে পাহাড়ে শান্তি আসবে কিনা?
এ কে এম মকছুদ আহমেদ: চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের আগে এ চুক্তি পাহাড়ে বসবাসরত বৃহত্তর জনগোষ্ঠি বাঙ্গালীদের বিপক্ষে যাচ্ছে কিনা তা সরকারকে ভেবে দেখতে হবে । প্রয়োজনে চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের আগে সরকার , চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দল এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি , স্থানীয় প্রশাসন , আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও বাঙ্গালী জনগোষ্টির সাথে সরকার পূনঃরায় আলোচনা করতে পারে এবং আলোচনা করে চুক্তি পূর্বমূল্যায়ন করতে পারে । তিনি উল্লেখ করেন , সরকারের সাথে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন জন সংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমা তিনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিও নন আর সকল জনগোষ্ঠির প্রতিনিধিত্বও করেন না ।
পার্বত্য নিউজ: সম্পাদিত হয়ে যাওয়া চুক্তি নিয়ে আবারো আলোচনা বা সংশোধন করা সম্ভব কিনা ?
এ কে এম মকছুদ আহমেদ: কেন নয় ? পার্বত্য চুক্তি কোরআন বা হাদিস নয় যে পরিবর্তন বা সংশোধন করা যাবে না । দেশের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে বাংলাদেশে পবিত্র সংবিধান বহুবার সংশোধন করা হয়েছে । জনস্বার্থে সংবিধান পরিবর্তন বা আইন পরিবর্তন করা গেলে পার্বত্য চুক্তিও পরিবর্তন বা সংশোধন করা সম্ভব।
পার্বত্য নিউজ: চুক্তি বাতিলের দাবি কতটুকু যৌক্তিক আপনি মনে করে?
এ কে এম মকছুদ আহমেদ: চুক্তি বাতিল নয় চুক্তিকে বাস্তবায়ন করে পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে হবে। তবে চুক্তিতে কিছু আইনগত বিষয় দেশের মূল সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক রয়েছে তা কোন কোন জনগোষ্ঠির মৌলিক অধিকার খর্ব করেছে । যেমন : ভূমি কমিশন আইন , জেলা পরিষদ , উন্নয়ন বোর্ড ও পার্বত্যমন্ত্রীর পদে বাঙ্গালীদের অংশ গ্রহণের সুযোগ না থাকা ইত্যাদি বিষয়ে পরিবর্তন এনে চুক্তিকে কার্যকর করতে হবে এবং বৈষম্য দূর করতে হবে । এ ছাড়াও চুক্তির বাইরে সরকারকে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে শান্তি নিশ্চিত করতে হবে ।
পার্বত্য নিউজ: চুক্তি মোতাবেক সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হলে পাহাড়ের নিরাপত্তায় সংকট তৈরী করবে কিনা?
এ কে এম মকছুদ আহমেদ: চুক্তিতে বলা আছে শান্তি ফিরে আসলে পর্যায়ক্রমে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হবে । কিন্তু পাহাড়ে এখনো শান্তি ফিরে আসেনি । পার্বত্য চট্টগ্রামের দূর্গম এলাকার মানুষ এখনো ঘুমাতে পারেনা। পাহাড়ি চার গ্রুপের অস্ত্রবাজিতে পাহাড়ের মানুষ প্রতিনিয়ত আতঙ্কে থাকে। এখনো পাখির মতো গুলি করে মানুষ মারা হচ্ছে। এ অবস্থায় পাহাড় থেকে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করার কোন সুযোগ নেই বরং প্রত্যাহারকৃত ক্যাম্পগুলো পুণঃস্থাপন করা জরুরী বলে তিনি মনে করেন।
পার্বত্য নিউজ: পার্বত্য নিউজকে আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
এ কে এম মকছুদ আহমেদ: আপনাকে ও অসংখ্য ধন্যবাদ।