parbattanews

চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার অভাব রয়েছে: সন্তু লারমা

photo-bipf-kf-discussion

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে বর্তমান সরকারের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার অভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা। বৃহস্পতিবার ঢাকার ডেইলি স্টার ভবনের আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ১৯ বছর: স্থানীয় জনগণের ভূমি অধিকার ও বাস্তবতা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিভাগের প্রফেসর ড. সাদেকা হালিম, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’র এর নির্বাহী পরিচালক মিস. শাহীন আনাম, ড. মেসবাহ কামাল প্রমূখ।

বক্তব্যে সন্তু লারমা বলেন, বর্তমান সরকারকে আমি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, জাতি বৈষম্যহীন বলে মানতে নারাজ। বরং এ সরকার অগণতান্ত্রিক এবং উগ্র সাম্প্রদায়িক। শুধু তাই নয়, এ সরকারের মনের ভিতর রয়েছে প্রচণ্ড জাতিগত বৈষম্যতা। যদি তাই না হতো, তাহলে শান্তিচুক্তির সকল ধারাগুলোর বাস্তবায়ন হচ্ছে না কেন? তিনি বলেন, বর্তমান শাসক শ্রেনিতে যারা আছেন তারাই শোষক শ্রেণি। নাসিরনগর আর গোবিন্দগঞ্জে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা তারই প্রমাণ।

সরকার শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে এমন অভিযোগ করে সন্তু লারমা বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে আমি আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যানের দ্বায়িত্ব পালন করে আসছি। এ সময়ের মধ্যে সবাইকে চেনা হয়ে গেছে আমার। সরকারের কোথায় দুর্নীতি, কোথায় দুর্বলতা, কোথায় কোথায় প্রতারণা সব জানা হয়ে গেছে। আর নতুন করে কিছু জানার নেই আমার। পার্বত্য চুক্তির বিষয়ে শেখ হাসিনার সরকার তার নীতিনির্ধারকদের বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্য দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছেন এমন অভিযোগ এনে সন্তু লারমা বলেন, ১৯৯৭ সালে চুক্তির সব ধারা জেনেশুনে সরকারের পক্ষ থেকে স্বাক্ষর করা হলেও সরকারের নীতিনির্ধারকরা ইদানীং কিছু অসত্য ও উদ্ভট তথ্য প্রধানমন্ত্রীর কানে দিয়ে তাঁকে প্রভাবিত করছেন। তারা বলছে ইউএনডিপি নাকি পার্বত্যাঞ্চলের মানুষকে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করে আলাদা রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। তারা প্রধানমন্ত্রীকে আরও বলছে চুক্তির অমুক ধারা বাস্তবায়িত হলে এই হবে, তমুক ধারা বাস্তবায়িত হলে সেই হবে।

তিনি এত টালবাহানা না করে চুক্তির পূর্ণবাস্তবায়নে আন্তরিক হওয়ার জন্য সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, পাহাড়ের মানুষ নিজের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। আর যদি এভাবে একেরপর এক প্রতারণার মাধ্যমে তা ভূলুণ্ঠিত করা হয় তবে তারা সেই গণ্ডি থেকে বেরিয়ে আসবে। তারা তাদের নিজেদের অধিকার নিজেরা আদায় করেই নেবে, কারণ তাদের সেই সাহস এখনও রয়েছে।

শেষের দিকে, ‘আমি নারীবাদের বিরোধীতা করি, কিন্তু নারী মুক্তির পক্ষে’ সন্তু লারমার এমন বক্তব্যে উপস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিভাগের প্রফেসর ড. সাদেকা হালিম, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’র এর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনামসহ অন্যান্য নারীদের সাথে মতবিরোধ দেখা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সন্তু লারমা তার তাৎক্ষণিক জবাবে বলেন, আমি মনে করি নারীবাদী মানে হচ্ছে পুরুষরা যা করবে মহিলারাও তা করবে। কিন্তু আমি তার পক্ষে না। আমার মতে, পুরুষ পুরুষের কাজ করবে নারীরা নারীর কাজ করবে। কিন্তু তাতেও উপস্থিত নারী নেত্রীদের ক্ষোভ প্রশমিত না হওয়ায় পরে আরেক সময় এটা নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে তাদের বুঝিয়ে দিবেন বলে বক্তব্যের সমাপ্তি টানেন সন্তু লারমা।

Exit mobile version