parbattanews

চ্যালেঞ্জ আর পরিশ্রমে এগিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের নারীরা

পাহাড়ের নারীদের জীবনযুদ্ধ পুরনো কথা নয়। জীবন সংগ্রাম ও ত্যাগে বর্তমানে পাহাড়িদের প্রত্যেক পরিবারে আয়-উপার্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন নারীরা। বহুবিধ অর্থনৈতিক কাজে সম্পৃক্ত পাহাড়ি নারীরা। তারা যেমন কর্মঠ, তেমনি সম্পৃক্ত হতে পারেন বিভিন্ন পেশা ও কাজকর্মে। গৃহস্থালির দৈনন্দিন কাজকর্মসহ পারিবারিক আয় থেকে শুরু করে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, হস্ত ও ক্ষুদ্রশিল্প, আউটসোর্সিং, চাকরিসহ বিভিন্ন পেশায় জড়িত হয়ে উপার্জন করছেন পাহাড়ের নারীরা।

বান্দরবানের স্থানীয় বাজারগুলো এখন পাহাড়ি নারীদের দখলে। পুরুষের পাশাপাশি নারীও হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন প্রতিদিন। সমতলের তুলনায় পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ি নারীরা ছুটে যাচ্ছে একধাপ এগিয়ে। ভোর হলেই মাথায় থ্রুরুং (বাশের তৈরি ঝুড়ি) নিয়ে বাজারগুলোতে বসে যায় পাহাড়ের বিভিন্ন রকমারি ফলমূল কিংবা শাকসবজি নিয়ে। সাজিয়ে রাখে নিত্যনতুন খাবার। দিনব্যাপী স্থানীয় বাজারের পণ্যগুলো বিক্রি করে সন্ধায় হলে নিজ ঘরের পাড়ি দেন নিত্যনতুন প্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে। আবার ভোর হলে সেই জীবনযুদ্ধে একই চিত্র। স্থানীয়দের খাবারের চাহিদা মিটাতে কিংবা নিজেদের পরিবার পরিজনের একমুঠো খাবার জোগাতে এক একটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে নেমে পড়েছে মাঠে। যেমন পরিশ্রম তেমনি বাহবায় ভাসছেন পাহাড়ের নারীরা।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, পার্বত্য জেলা বান্দরবানে যেমন সৌন্দর্যের প্লাবিত ঠিক তেমনি স্থানীয় বাজারগুলোতে নারীদের লাইন যেন দীর্ঘ। বহু বছর আগে যেসব নারীরা ঘরের কাজ ছাড়া বের হত না, আর এখন সেটি উল্টো চিত্র। পুরুষদের পাশাপাশি মাঠে নেমে পড়েছে নারীরাও। তবে বাজারগুলোতে এখন পাহাড়ি নারী বিক্রেতা বেশি বলা যায়। দেখা যায় স্থানীয় বাজারগুলোতে প্রায় শতজন নারী বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী নিয়ে বসে বিক্রি করছেন। দিন কিংবা রাত দমে রাখতে পারিনি নারীদের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বান্দরবানে মগ বাজার, বালাঘাটা বাজার, কালাঘাটা বাজার, ডুলুপাড়া বাজার, গুংগুরু বাজার, তালুকদার, রেইছা ও মাঝের পাড়া বাজারগুলোতে একই চিত্র। রবিবার ও বুধবার বাজার দিনে ভোর হলে পাহাড় ডিঙ্গিয়ে ছুটে আসে বাজারের পণ্য বিক্রির জন্য। শুধু বাজারবার নয় অন্যান্য দিনেও সেই একই চিত্র। বাজার দিনে মধ্যম পাড়ার সাঙ্গুর নদীর ঘাটে পণ্য কিনতে নারীরাও করছে দামা-দামী। সেসব পাহাড়ির পণ্যে কিনে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও নিত্যনতুন পণ্য নিয়ে বসে আছে বিক্রির জন্য। বর্তমানে স্থানীয় বাজারগুলোতে কম দেখা মিলছে পুরুষদের। একঝাঁক নারীরা সারিবদ্ধভাবে বিক্রি করছেন সবজিসহ নানা ধরনের পণ্য। সাজিয়ে রেখেছেন কাকরল, মরিচ, কলাফুল, আম, লিচুসহ আরো নানান রকমের সবজি ও ফলমূল। তবে অধিকাংশ নারীরা মারমা জনগোষ্ঠীর। পাশাপাশি রয়েছে চাকমা, তংচঙ্গ্যা ও বাঙালি নারীও। তারপরও তারা দিব্যি ক্ষুদ্র ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

মগ বাজারের বিক্রি করতে আসা থুই ম্রা প্রু জানিয়েছেন, রাতের বিভিন্ন ফল কিংবা সবজি খুলে সাজিয়ে রেখে দেন। ভোর হলে নৌকা ডিঙ্গিয়ে পাহাড়ের তাজা সবজি নিয়ে ছুটে আসেন বাজারের বিক্রির জন্য। এটি তার নিত্যদিনের ক্ষুদ্র ব্যবসা।

আরেক বিক্রেতা ক্রাক্ষ্যা প্রু মারমা। তিনিও সাত থেকে আটটি সবজি সড়কের পাশে সাজিয়ে রেখেছেন বিক্রির জন্য। সকাল ও বিকালে প্রতিদিন মগ বাজারের বসে বিক্রি করে যাচ্ছে প্রতিদিন। তার এই ক্ষুদ্র ব্যবসা দিয়ে চলে সংসার।

বান্দরবান বাজার চৌধুরী হ্লাথোয়াহ্রী মারমা বলেন, আগে পুরুষরাই স্থানীয় বাজারে বসে বিক্রি করত। আর এখন পুরুষদের চেয়ে নারীরাও বেশি হয়ে গেছে। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও আজ থেমে নেই। অনেক নারীরাই নিজেদের সংসার নিজেরাই চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে বান্দরবান স্থানীয় বাজারগুলোতে নারী বিক্রিতা বেশি।

Exit mobile version