ছাত্র-যুব-নারী সমাজকেই দায়িত্ব নিতে হবে: সন্তু লারমা

fec-image

পাহাড়ের জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনে ছাত্র-যুব-নারী সমাজকেই দায়িত্ব নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা। আসন্ন ১০ নভেম্বর ২০২১ বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে হিল উইমেন্স ফেডারেশন উদ্যোগে আয়োজিত স্মরণসভায় তিনি এই কথা বলেন।

আজ ৫ নভেম্বর বিপ্লবী এম এন লারমার ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে হিল উইমেন্স ফেডারেশন উদ্যোগে “ জুম্ম জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় এম এন লারমা’র জীবন ও সংগ্রাম শীর্ষক স্মরণসভায় অনুষ্ঠিত হয়।

স্মরণসভায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য শ্রী সাধুরাম ত্রিপুরা মিল্টন। অন্যান্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান শ্রী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য মহিলা সমিতি রাঙ্গমাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রিতা চাকমা, এম এন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ইন্তুমনি চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক সাগর ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সভাপতি মিলন কুসুম তঞ্চঙ্গ্যা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙ্গামাটি কলেজ শাখার সভাপতি সোনারিতা চাকমা। স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন উলিসিং মারমা এবং সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা।

জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা বলেন, ষাট দশকে এম এন লারমা’র নেতৃত্বে ছাত্র সমাজ সংগঠন হওয়ার চেষ্টা করেছে। সেই থেকে ছাত্র-যুব সমাজের অবস্থান ভাবা উচিত ও ভাবতে হবে। যতদিন পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে শ্রেণিহীন ও গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে না ততদিন পর্যন্ত জুম্মদের উপর শাসন-শোষণ বহাল থাকবে।

সন্তু লারমা আরো বলেন, আজকে শিক্ষিত সমাজ ভুলতে বসেছে এম এন লারমা নামে তরতাজা যুবকটি জুম্ম জনগণের আন্তনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনের যৌবন বিলিয়ে দিয়েছেন। তারা জেগে থেকেও ঘুমিয়ে আছে। তারা বুঝতে পারছেন না তারা কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে এবং তারা কি পরিস্থিতির মধ্যে দাড়িয়ে আছে?

তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও ২৪ বছর হতে চলেছে চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কোন সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম ৫১ বছর ধরে সেনা শাসনের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। পার্বত্য চুক্তির পরেও “অপারেশন উত্তোরণ” জারি করে সেনাশাসন বলবৎ রেখেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি এখন অনেকটাই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি উত্তর অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে।

এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম ছাত্র সমাজ সত্তর দশকে পাকিস্তানি জুম্ম বিধবংসী কাপ্তাই বাধের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিল স্বাধীন বাংলাদেশ হওয়ার পরও জুম্মরা আজো অধিকার বঞ্চিত বলে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, একটি জাতিকে টিকে থাকতে হলে ছাত্র-যুব ও নারী সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। এই ছাত্র- যুব ও নারী সমাজকে ঐতিহাসিক দায়িত্ব নিতে হবে। জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে অধিকতরভাবে এগিয়ে নিতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরা মিল্টন বলেন, নেতা জন্ম দেয়া যায় না, সঠিক আদর্শ ধারণের মধ্যদিয়ে নেতা গড়ে উঠে। তিনি জুম্ম জনগণের আত্মানিয়ন্ত্রণাধিকার ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় ছাত্র-যুব সমাজকে এম এন লারমা’র আর্দশ ধারণ করার আহ্বান জানান।

সোনারিতা চাকমা বলেন, এম এন লারমা আজীবন জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার চন্য লড়াই করেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম নারীদের মুক্তির জন্য এম এন লারমা’র চিন্তাধারা ধারণ ও লালন করা দরকার।

মিলন কুসুম তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আজ বিপ্লবী এম এন লারমা আমাদের মাঝে নেই বলেই আমরা শোক দিবস পালন করছি। শোককে শোক নয়, বরং শক্তি হিসেবে কাজে লাগিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে।

যুব নেতা সাগর ত্রিপুরা নান্টু বলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম সমাজের অধিকাংশই মহান নেতা এম এন লারমা’কে জানেনও না এবং তার সংগ্রাম সর্ম্পকে জ্ঞাত নন। এ না জানাটা একটি জাতির জন্য দুর্ভাগ্যের । এম এন লারমাকে বুঝতে না পারা ও তার আর্দশকে না জানার কারণে ছাত্র সমাজ –যুব সমাজ আন্দোলনে শামিল হচ্ছে না।

মহান নেতার সংগ্রামী জীবনকে স্মরণ করে এম এন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ইন্টুমনি চাকমা বলেন, ছাত্রাবস্থা থেকে করেছেন তার বর্তমান ছাত্রদের জন্য অবশ্যই অনুকরণীয়। মহান নেতার জীবন সংগ্রাম সর্বস্তরের জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া জরুরি বলে মত দেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন